স্টাফ রিপোর্টার: নবী হোসেন নামে বেপরোয়া এক দালালের খবর পাওয়া গেছে। সাথে আছে আরও ১০/১২জন সিন্ডিকেট সদস্য। তারা চাঁদাবাজি ও কমিশন বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত। তারা প্রতিদিন চষে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রাম এলএ শাখার রন্দ্রে রন্দ্রে। ফাইল নড়াচড়া এবং বন্ধ করায় হচ্ছে তাদের প্রধান কাজ। কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে রয়েছে তাদের সুসম্পর্ক। সিন্ডিকেট প্রধান বড় বাবু ইকবাল হায়দার চৌধুরীর জায়গা দখল করে নিতে বেপরোয়া এই নবী হোসেন। ইকবাল এলএ শাখায় না আসলেও টেলিফোনে এবং লোক মারফতে চলে তার কর্মকান্ড।

ইকবাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তালিকাভূক্ত দালাল। ইকবাল গা ঢাকা দিলেও নবী এখন হয়ে উঠছে এলএ শাখার বড় মাপের একজন দালাল। এলএ শাখার টাকায় নবী এখন লাখ থেকে কোটিপতি বনে গেছে। তার দ্রুত এই ভাগ্য বদল নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। একই গুঞ্জন চলছে চাতরী গ্রামের হারুন ও মুহাম্মদপুর গ্রামের ইউছুফ, জাহেদের। কমিশন বাণিজ্য দালালি আর চাঁদাবাজি করে ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হন নবী হোসেনরা। বর্তমানে এলএ শাখা ১০/১২জন দালালের হাতে জিম্মি। তাদের হাতে কমিশন না আসলে একটি ফাইলও নড়াচড়া করেনা। সার্ভেয়ারদের যোগসাজসে তারা নিয়ে থাকেন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪০শতাংশ পর্যন্ত কমিশন। সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। একই তথ্য দিয়েছেন স্থানীয়রাও। তবে এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয়না।

সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পর থেকে নবীর এলএ শাখায় আনাগোনা ও পদচারনা শুরু বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি শুনিয়েছেন তার সম্পর্কে চমকপ্রদ নানা কাহিনীও।

তিনি জানান, নবী মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডিও পার করতে পারেনি। তখন ছিল টাকা পয়সার বেশি অভাব আর অভাবের সংসার। ৬ষ্ট কি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া তার। লেখাপড়া করেনি কি হয় কিন্তু চলনে বলনে তাকে সেই রকম লাগেনা। তার বাবা জাফর আহমদ কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার দক্ষিণ বন্দর গ্রামের শশুর পক্ষের কিছু জমি অধিগ্রহণের পর চট্টগ্রাম এলএ শাখায় তার আসা। অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করতে আসার পর কিছু চিহ্নিত দালালদের সাথে পরিচয় সখ্যতা পরে এলএ শাখার সার্ভেয়ার, কাননগো, সহকারীদের সাথে গড়ে উঠে সম্পর্ক। এরপর নবীকে আর পেছনে থাকাতে হয়নি। বড় দালাল ইকবাল হায়দার পেশাদার টাউট দালাল নুরুল ইসলাম প্রকাশ টাউট তেইন্যাসহ পরিচয় ঘটে আরও কয়েক দালালের সাথে। ত্রিশ বছরের হ্যান্ডশাম এই যুবক বর্তমানে এলএ শাখার দালালির টাকায় চাতরী চৌমুহনী বাজারে মিষ্টির (কুলিং কর্ণার) দোকান, প্রাইভেট কার এবং চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকায় প্লট এর মালিক বলে জানা গেছে।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়। চাতরী চৌমুহনী বাজারের পশ্চিম দক্ষিনে সুজার পাড়ার আগে পশু চিকিৎসক আবুল বশরের বাড়ির মৃত জাফর আহমদ তার বাবা। চাতরী চৌমুহনী বাজারে মিষ্টির দোকান থাকলেও সেটি পরিচালনা করেন তার ভগ্নিপতি। স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেছেন, নবীর বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অফিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে কিজন্য এবং কি নিয়ে ওই অভিযোগটি করা হয় সেটির বিশদ জানা যায়নি। বর্তমানে তার আছে কারি কারি টাকা আর গাড়ি বাড়ি। এসব করেছেন এলএ শাখায় দালালি ও চাঁদাবাজি করে। কয়েক দিন আগেও তার কিছুই ছিলনা।

সুত্র জানায়, এলএ শাখায় যারা বশে (যাদের জমি অধ্রিগ্রহণ করা হয়) আসবেনা তাদের ফাইল আটকে রাখা হয়। থানায় কিংবা আদালতে মামলা টুকে দিয়ে সার্ভেয়ারদের বশে এনে অধিগ্রহণের টাকা ফাইল আটকে দেয়া হয় বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। শুধু নবী নয়, এলএ শাখায় আছে আরও কতেক চিহ্নিত দালাল। এর মধ্যে অন্যতম ছাত্র দল ক্যাডার ইকবাল হায়দার চৌধুরী। তার সম্পর্কেও রয়েছে নানা চমকপ্রদ কাহিনী। বাবার জমি অধিগ্রহনের সুত্র ধরে তার এলএ শাখায় আসা। ২৮বছরের এই যুবক ছিলেন আনোয়ারা সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লিখকের সহকারী পরে হন দলিল লিখক। সাথে জমির দালালী ও করতেন। বর্তমানে এই ইকবাল কারি কারি টাকা জমি বাড়ি গাড়ির মালিক।

এমনকি চট্টগ্রাম আদালতের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ক্যান্টিনটিও কিনে নিয়েছে এই ইকবাল হায়দার চৌধুরী। সাবেক আনোয়ারা উপজেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র নেতা ছিলেন এই ইকবাল হায়দার। বিষ্ফোরক মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলাও আছে তার বিরুদ্ধে। তার বাড়িও আনোয়ারা উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামে। বাবা মোজাফফর আহমদ চৌধুরী সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের ভেন্ডার। এক সময়ের শ্রমিক নেতা (পিএবি) মোঃ হারুন, জুয়েল কান্তি দত্ত, মোঃ ইউছুফ, জাহেদ হোসেন, মোঃ বাবুল, রাজিব ও চট্টগ্রাম শহরের ফিরিঙ্গী বাজারের হাসান দালাদের মধ্যে অন্যতম। এলএ শাখার কমিশন বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির টাকায় একেকজন কোটিপতি গাড়ি বাড়ির মালিক।আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি বলে জানা গেছে।

বাশঁখালী, চকরিয়া, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, হাটহাজারী ও মিরশরাই উপজেলার দালালও আছে এলএ শাখায়। এরা ছাড়াও আরও বেশ কয়েক প্রভাবশালী দালাল আছে চট্টগ্রাম এলএ শাখায়। এসব দালালদের নিত্যদিন দেখা যায় ঘুরাফেরা ও ঘুরঘুর করতে। রাজনৈতিক পরিচয়দারী দালালও আছে এলএ শাখায়। এলএ শাখার দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে দালাল সংক্রান্ত নানা সতর্ক বানী, লাগানো আছে সিসি ক্যামরাও। তবে সিসি ক্যামরা থাকলেও ফুটেজ দেখে এসব দালালদের পাকড়াও করতে একবারও দেখা যায়নি অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।

প্রতিনিয়ত এসব চিহ্নিত দালালদের খপ্পরে পরে নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে এলএ শাখায় আসা সাধারণ মানুষ। তবে কর্তৃপক্ষের নজর সেদিকে আছে বলে মনে হয় না। একটু তদন্ত করে দেখা হলে কর্মরত সার্ভেয়ার শিকলবাহক সহকারীদের নানা অভিযোগ চমকপ্রদ কেচ্ছাকাহিনী (দালালদের আসকারা) বেরিয়ে আসবে।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল একটু আন্তরিক ও  সুদৃষ্টি দিলে এলএ শাখায় দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের পাকড়াও করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। আইনী ব্যবস্থা নিলে দুর্নীতি অনেকটা কমে আসতো বলে জানান এলএ শাখায় আসা অনেকে। দালালদের ব্যাপারে এক সময় ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করতে দেখা গেছে এলএ অফিসের কর্মকর্তা আজমকেও।

কর্ণফুলী টানেল, চায়না অর্থনৈতিক জোন, কোরিয়ান ইপিজেড, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রাম বন্দর বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত নির্মানাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়ক, দোহাজারী কক্সবাজার রেল সড়ক, বহদ্দারহাট বারইপাড়া খাল খনন নির্মানসহ আরো বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য সরকার বিপুল পরিমান জমি অধিগ্রহণ করেন। শুরু থেকে এসব জমির টাকা পরিশোধ করে আসছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ(এলএ) শাখা। এই এলএ শাখাকে ঘিরে গড়ে উঠে বড় ধরনের একটি সিন্ডিকেট দালাল চক্র। এই চক্রের বাইরে কেউ যেতে পারেনা। কমিশনের টাকা দিয়ে মুক্তি পেতে হয় জমি মালিকদের। এভাবে তারা জমি মালিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এর সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত সার্ভেয়ার সহকারীরা।

দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে সার্ভেয়ার, সহকারী, শিকলবাহক, দালালসহ বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতেও গেছেন। জাল দলিল সৃজন করে চট্টগ্রাম এলএ শাখা হতে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ধরা পড়ে নুরুল ইসলাম প্রকাশ টাউট তেইন্যা। এই জাল দলিলের অভিযোগে দীর্ঘ দুই মাস জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পায় তেইন্যা। তিনি এলএ শাখায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার পক্ষে কাজ করছে বেশ কয়েক চিহ্নিত দালাল। ভুয়া দরখাস্ত (আবেদন) ও ভুয়া দলিল খতিয়ান দাখিলা দেখিয়ে এলএ শাখা হতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার তদবির করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগেও তেইন্যার বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতের মাধ্যমে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এলএ শাখায় টাকা ফেরতের আবেদন দাখিল করা হয় বলে একটি সুত্র থেকে জানা গেছে। যা তদন্ত হওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন অনেকে। তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামে। এক সময় টাউট এই তেইন্যা মানবাধিকারের বড় নেতা বলে পরিচয় দিতেন।

গলায় কার্ড ঝুলিয়ে হাটতেন বিভিন্ন স্থানে তদবির করতেন। এমনকি চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সমিতির এনেক্স ভবন-১ এ তার নিজস্ব কার্যালয় আছে বলেও পরিচয় দিতেন। কিন্তু তিনিও প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার হতে পারেনি। তথ্য নির্ভরযোগ্য সুত্রের।

এলএ শাখার সহকারী মোজাফফর আহমদ, নাজির মোয়াজ্জেম হোসেন সার্ভেয়ার মাহবুবসহ কতক কর্মরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। এরা দীর্ঘদিন কোমর বেঁধে এলএ শাখায় গেড়ে বসে আছে। দালালদের সাথে রয়েছে তাদের গভীর সম্পর্ক। তাদের দুর্নীতির পাল্লা ভারী বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় ‘ওরা দালাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়  দি ক্রাইম পত্রিকায়। সংবাদটি অনলাইন ভার্সনেও প্রকাশ হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ৫ তারিখে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর দালালদের আনাগোনা দৌরাত্ব কিছুটা কমে আসে। বর্তমানে আবারও বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা এলএ শাখায় ও বাইরে বলতে শুনা গেছে, সংবাদ কর্মীরা বেশি বারাবারি করছে। বলে দিও এলএ শাখা নিয়ে লেখালেখি না করতে। তারা দেখিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে। ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে চট্টগ্রাম এলএ শাখার দুর্নীতি নিয়ে তিনদফা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় ভুক্তভোগি, জনপ্রতিনিধি, এবং কতক দালালদের সাক্ষাত নেয়া হয়।

সাক্ষাতে দালাল ইকবাল হায়দার চৌধুরী সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, তাকে কেন টার্গেট করা হচ্ছে, জাল দলিল দিয়ে এলএ শাখা হতে অন্তত একশত কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সাক্ষাতকারের এই ফুটেজটি টিভিতে দেখানো হয়। ইকবালের সরল এই স্বীকারোক্তি এবং চাঞ্চল্যকর এই বক্তব্য এখনো সাধারণের মুখে মুখে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন।

স্টাফ রিপোর্টার: নবী হোসেন নামে বেপরোয়া এক দালালের খবর পাওয়া গেছে। সাথে আছে আরও ১০/১২জন সিন্ডিকেট সদস্য। তারা চাঁদাবাজি ও কমিশন বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত। তারা প্রতিদিন চষে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রাম এলএ শাখার রন্দ্রে রন্দ্রে। ফাইল নড়াচড়া এবং বন্ধ করায় হচ্ছে তাদের প্রধান কাজ। কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে রয়েছে তাদের সুসম্পর্ক। সিন্ডিকেট প্রধান বড় বাবু ইকবাল হায়দার চৌধুরীর জায়গা দখল করে নিতে বেপরোয়া এই নবী হোসেন। ইকবাল এলএ শাখায় না আসলেও টেলিফোনে এবং লোক মারফতে চলে তার কর্মকান্ড।

ইকবাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তালিকাভূক্ত দালাল। ইকবাল গা ঢাকা দিলেও নবী এখন হয়ে উঠছে এলএ শাখার বড় মাপের একজন দালাল। এলএ শাখার টাকায় নবী এখন লাখ থেকে কোটিপতি বনে গেছে। তার দ্রুত এই ভাগ্য বদল নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। একই গুঞ্জন চলছে চাতরী গ্রামের হারুন ও মুহাম্মদপুর গ্রামের ইউছুফ, জাহেদের। কমিশন বাণিজ্য দালালি আর চাঁদাবাজি করে ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হন নবী হোসেনরা। বর্তমানে এলএ শাখা ১০/১২জন দালালের হাতে জিম্মি। তাদের হাতে কমিশন না আসলে একটি ফাইলও নড়াচড়া করেনা। সার্ভেয়ারদের যোগসাজসে তারা নিয়ে থাকেন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪০শতাংশ পর্যন্ত কমিশন। সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। একই তথ্য দিয়েছেন স্থানীয়রাও। তবে এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয়না।

সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পর থেকে নবীর এলএ শাখায় আনাগোনা ও পদচারনা শুরু বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি শুনিয়েছেন তার সম্পর্কে চমকপ্রদ নানা কাহিনীও।

তিনি জানান, নবী মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডিও পার করতে পারেনি। তখন ছিল টাকা পয়সার বেশি অভাব আর অভাবের সংসার। ৬ষ্ট কি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া তার। লেখাপড়া করেনি কি হয় কিন্তু চলনে বলনে তাকে সেই রকম লাগেনা। তার বাবা জাফর আহমদ কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার দক্ষিণ বন্দর গ্রামের শশুর পক্ষের কিছু জমি অধিগ্রহণের পর চট্টগ্রাম এলএ শাখায় তার আসা। অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করতে আসার পর কিছু চিহ্নিত দালালদের সাথে পরিচয় সখ্যতা পরে এলএ শাখার সার্ভেয়ার, কাননগো, সহকারীদের সাথে গড়ে উঠে সম্পর্ক। এরপর নবীকে আর পেছনে থাকাতে হয়নি। বড় দালাল ইকবাল হায়দার পেশাদার টাউট দালাল নুরুল ইসলাম প্রকাশ টাউট তেইন্যাসহ পরিচয় ঘটে আরও কয়েক দালালের সাথে। ত্রিশ বছরের হ্যান্ডশাম এই যুবক বর্তমানে এলএ শাখার দালালির টাকায় চাতরী চৌমুহনী বাজারে মিষ্টির (কুলিং কর্ণার) দোকান, প্রাইভেট কার এবং চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকায় প্লট এর মালিক বলে জানা গেছে।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়। চাতরী চৌমুহনী বাজারের পশ্চিম দক্ষিনে সুজার পাড়ার আগে পশু চিকিৎসক আবুল বশরের বাড়ির মৃত জাফর আহমদ তার বাবা। চাতরী চৌমুহনী বাজারে মিষ্টির দোকান থাকলেও সেটি পরিচালনা করেন তার ভগ্নিপতি। স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেছেন, নবীর বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অফিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে কিজন্য এবং কি নিয়ে ওই অভিযোগটি করা হয় সেটির বিশদ জানা যায়নি। বর্তমানে তার আছে কারি কারি টাকা আর গাড়ি বাড়ি। এসব করেছেন এলএ শাখায় দালালি ও চাঁদাবাজি করে। কয়েক দিন আগেও তার কিছুই ছিলনা।

সুত্র জানায়, এলএ শাখায় যারা বশে (যাদের জমি অধ্রিগ্রহণ করা হয়) আসবেনা তাদের ফাইল আটকে রাখা হয়। থানায় কিংবা আদালতে মামলা টুকে দিয়ে সার্ভেয়ারদের বশে এনে অধিগ্রহণের টাকা ফাইল আটকে দেয়া হয় বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। শুধু নবী নয়, এলএ শাখায় আছে আরও কতেক চিহ্নিত দালাল। এর মধ্যে অন্যতম ছাত্র দল ক্যাডার ইকবাল হায়দার চৌধুরী। তার সম্পর্কেও রয়েছে নানা চমকপ্রদ কাহিনী। বাবার জমি অধিগ্রহনের সুত্র ধরে তার এলএ শাখায় আসা। ২৮বছরের এই যুবক ছিলেন আনোয়ারা সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লিখকের সহকারী পরে হন দলিল লিখক। সাথে জমির দালালী ও করতেন। বর্তমানে এই ইকবাল কারি কারি টাকা জমি বাড়ি গাড়ির মালিক।

এমনকি চট্টগ্রাম আদালতের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ক্যান্টিনটিও কিনে নিয়েছে এই ইকবাল হায়দার চৌধুরী। সাবেক আনোয়ারা উপজেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র নেতা ছিলেন এই ইকবাল হায়দার। বিষ্ফোরক মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলাও আছে তার বিরুদ্ধে। তার বাড়িও আনোয়ারা উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামে। বাবা মোজাফফর আহমদ চৌধুরী সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের ভেন্ডার। এক সময়ের শ্রমিক নেতা (পিএবি) মোঃ হারুন, জুয়েল কান্তি দত্ত, মোঃ ইউছুফ, জাহেদ হোসেন, মোঃ বাবুল, রাজিব ও চট্টগ্রাম শহরের ফিরিঙ্গী বাজারের হাসান দালাদের মধ্যে অন্যতম। এলএ শাখার কমিশন বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির টাকায় একেকজন কোটিপতি গাড়ি বাড়ির মালিক।আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি বলে জানা গেছে।

বাশঁখালী, চকরিয়া, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, হাটহাজারী ও মিরশরাই উপজেলার দালালও আছে এলএ শাখায়। এরা ছাড়াও আরও বেশ কয়েক প্রভাবশালী দালাল আছে চট্টগ্রাম এলএ শাখায়। এসব দালালদের নিত্যদিন দেখা যায় ঘুরাফেরা ও ঘুরঘুর করতে। রাজনৈতিক পরিচয়দারী দালালও আছে এলএ শাখায়। এলএ শাখার দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে দালাল সংক্রান্ত নানা সতর্ক বানী, লাগানো আছে সিসি ক্যামরাও। তবে সিসি ক্যামরা থাকলেও ফুটেজ দেখে এসব দালালদের পাকড়াও করতে একবারও দেখা যায়নি অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।

প্রতিনিয়ত এসব চিহ্নিত দালালদের খপ্পরে পরে নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে এলএ শাখায় আসা সাধারণ মানুষ। তবে কর্তৃপক্ষের নজর সেদিকে আছে বলে মনে হয় না। একটু তদন্ত করে দেখা হলে কর্মরত সার্ভেয়ার শিকলবাহক সহকারীদের নানা অভিযোগ চমকপ্রদ কেচ্ছাকাহিনী (দালালদের আসকারা) বেরিয়ে আসবে।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল একটু আন্তরিক ও  সুদৃষ্টি দিলে এলএ শাখায় দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের পাকড়াও করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। আইনী ব্যবস্থা নিলে দুর্নীতি অনেকটা কমে আসতো বলে জানান এলএ শাখায় আসা অনেকে। দালালদের ব্যাপারে এক সময় ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করতে দেখা গেছে এলএ অফিসের কর্মকর্তা আজমকেও।

কর্ণফুলী টানেল, চায়না অর্থনৈতিক জোন, কোরিয়ান ইপিজেড, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রাম বন্দর বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত নির্মানাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়ক, দোহাজারী কক্সবাজার রেল সড়ক, বহদ্দারহাট বারইপাড়া খাল খনন নির্মানসহ আরো বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য সরকার বিপুল পরিমান জমি অধিগ্রহণ করেন। শুরু থেকে এসব জমির টাকা পরিশোধ করে আসছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ(এলএ) শাখা। এই এলএ শাখাকে ঘিরে গড়ে উঠে বড় ধরনের একটি সিন্ডিকেট দালাল চক্র। এই চক্রের বাইরে কেউ যেতে পারেনা। কমিশনের টাকা দিয়ে মুক্তি পেতে হয় জমি মালিকদের। এভাবে তারা জমি মালিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এর সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত সার্ভেয়ার সহকারীরা।

দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে সার্ভেয়ার, সহকারী, শিকলবাহক, দালালসহ বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতেও গেছেন। জাল দলিল সৃজন করে চট্টগ্রাম এলএ শাখা হতে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ধরা পড়ে নুরুল ইসলাম প্রকাশ টাউট তেইন্যা। এই জাল দলিলের অভিযোগে দীর্ঘ দুই মাস জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পায় তেইন্যা। তিনি এলএ শাখায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার পক্ষে কাজ করছে বেশ কয়েক চিহ্নিত দালাল। ভুয়া দরখাস্ত (আবেদন) ও ভুয়া দলিল খতিয়ান দাখিলা দেখিয়ে এলএ শাখা হতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার তদবির করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগেও তেইন্যার বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতের মাধ্যমে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এলএ শাখায় টাকা ফেরতের আবেদন দাখিল করা হয় বলে একটি সুত্র থেকে জানা গেছে। যা তদন্ত হওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন অনেকে। তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামে। এক সময় টাউট এই তেইন্যা মানবাধিকারের বড় নেতা বলে পরিচয় দিতেন।

গলায় কার্ড ঝুলিয়ে হাটতেন বিভিন্ন স্থানে তদবির করতেন। এমনকি চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সমিতির এনেক্স ভবন-১ এ তার নিজস্ব কার্যালয় আছে বলেও পরিচয় দিতেন। কিন্তু তিনিও প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার হতে পারেনি। তথ্য নির্ভরযোগ্য সুত্রের।

এলএ শাখার সহকারী মোজাফফর আহমদ, নাজির মোয়াজ্জেম হোসেন সার্ভেয়ার মাহবুবসহ কতক কর্মরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। এরা দীর্ঘদিন কোমর বেঁধে এলএ শাখায় গেড়ে বসে আছে। দালালদের সাথে রয়েছে তাদের গভীর সম্পর্ক। তাদের দুর্নীতির পাল্লা ভারী বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় ‘ওরা দালাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়  দি ক্রাইম পত্রিকায়। সংবাদটি অনলাইন ভার্সনেও প্রকাশ হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ৫ তারিখে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর দালালদের আনাগোনা দৌরাত্ব কিছুটা কমে আসে। বর্তমানে আবারও বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা এলএ শাখায় ও বাইরে বলতে শুনা গেছে, সংবাদ কর্মীরা বেশি বারাবারি করছে। বলে দিও এলএ শাখা নিয়ে লেখালেখি না করতে। তারা দেখিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে। ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে চট্টগ্রাম এলএ শাখার দুর্নীতি নিয়ে তিনদফা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় ভুক্তভোগি, জনপ্রতিনিধি, এবং কতক দালালদের সাক্ষাত নেয়া হয়।

সাক্ষাতে দালাল ইকবাল হায়দার চৌধুরী সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, তাকে কেন টার্গেট করা হচ্ছে, জাল দলিল দিয়ে এলএ শাখা হতে অন্তত একশত কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সাক্ষাতকারের এই ফুটেজটি টিভিতে দেখানো হয়। ইকবালের সরল এই স্বীকারোক্তি এবং চাঞ্চল্যকর এই বক্তব্য এখনো সাধারণের মুখে মুখে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন।