গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবানন্ধার গোবিন্দগঞ্জে শুরু হয়েছে এক নজিরবিহীন সামাজিক আন্দোলন-ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ। শিক্ষা নগরীর কেন্দ্র ঝিলপাড়া ও বিএম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর স্থানীয় তরুণ সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেতনতার এক শক্তিশালী বলয় তৈরি করেছে।
শুক্রবার(১৭ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় তরুণদের আয়োজনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতা এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা তরুণদের পাশে এসে দাঁড়ান।
উপস্থিত ছিলেন- গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বুলবুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কোয়াবের সহসভাপতি সানোয়ার হোসেন দিপু, ছাত্রনেতা সজীব, প্রতিবাদী তরুণ মাকসুদ এবং সাংবাদিক শেখ মামুন হাসান সহ অসংখ্য উদ্যমী তরুণ।
বক্তারা বলেন, ইভটিজিং কোনো রোমান্টিক বিষয় নয়, এটি একটি গুরুতর অপরাধ এবং সামাজিক ব্যাধি। এই অপরাধ দমন করতে হলে পরিবার, শিক্ষক ও সমাজ—সবার সমন্বিত ভূমিকা অপরিহার্য।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, “ইভটিজিং কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। তবে পুলিশের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। অভিভাবকরা যদি সন্তানদের সঠিকভাবে বোঝান, তাহলে এই অপসংস্কৃতি টিকবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এমন এক গোবিন্দগঞ্জ চাই, যেখানে মেয়েরা নিরাপদে চলাফেরা করবে, আর ছেলেরা হবে তাদের রক্ষক, শত্রু নয়।”
অন্যদিকে, সানোয়ার হোসেন দিপু তরুণদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “তরুণরা আজ যেভাবে এগিয়ে এসেছে, এটি গোবিন্দগঞ্জের জন্য গর্বের বিষয়। এই উদ্যোগ নিয়মিত কার্যক্রমে রূপ নেওয়া উচিত। ভালোবাসা থাকুক, কিন্তু সেটি যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা নষ্ট না করে।”
প্রতিবাদী তরুণ মাকসুদ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমরা নিজেরাও কোনো ভুল পথে যাব না, আর কাউকে যেতেও দেব না। আমাদের এলাকায় কোনো বোন অসম্মানিত হলে সেটাই হবে আমাদের ব্যর্থতা।” ছাত্রনেতা সজীব মন্তব্য করেন, “আমরা চাই এমন পরিবেশ, যেখানে ছেলে-মেয়ে সবাই সম্মানের সঙ্গে চলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব।”
সাংবাদিক শেখ মামুন হাসান ইভটিজিংকে সামাজিক ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “সংবাদকর্মী হিসেবে আমরা এসব ইতিবাচক উদ্যোগকে সামনে আনব, যাতে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়।”
সভার শেষে উপস্থিত তরুণরা একসঙ্গে শপথ নেন: “আমরা কেউ ইভটিজিং করব না, আর কাউকেও করতে দেব না।”
বক্তারা অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে ছেলে-মেয়ে উভয়কেই সমানভাবে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার। স্কুল প্রেমের নয়, বরং ভবিষ্যৎ গড়ার জায়গা-এই বার্তাটি খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সন্তানদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
গোবিন্দগঞ্জের এই উদ্যোগ এখন স্থানীয় সমাজে এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই জাগরণ এক নতুন সামাজিক বার্তা নিয়ে এসেছে: “নারীর প্রতি অসম্মান নয়, সম্মানই হবে আমাদের পরিচয়।”
Post Views: 53