নগর প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশের মাটিতেই সমাধান করতে হবে। দেশের বাইরে গিয়ে বেশি কথা না বলে দেশের ভেতরেই বলা উচিত। কারণ সমস্যার সমাধান দেশের মানুষের হাতেই। কোনো বাইরের শক্তির কাছে এর সমাধান নেই। সংস্কার, বিচার সব কিছুর সমাধান একটাই, তা হলো বাংলাদেশের জনগণ। সমাধান দেওয়ার আর কেউ নেই। সমাধান দেওয়ার দ্বিতীয় কোনো অস্ত্র নেই। মাত্র একটাই অস্ত্র, সেটা জনগণ।
আজ শুক্রবার (৩০ মে) বিকালে নগরীর মুরাদপুরস্থ এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির স্বরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ।
সভা সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
প্রধান আলোচক ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম আবদুল আউয়াল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
আমীর খসরু বলেন, আমরা নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। কারণ, একটি নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। জনগণের সমর্থনব্যতীত কোনো কিছুই সম্ভব না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে একটা নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন। এটা কোনো দল চায় কি চায় না, সেটাই মুখ্য নয়, বাংলাদেশের মানুষ আজ গণতন্ত্রের জন্য অপেক্ষা করছে, প্রত্যাশা করছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অল্প কয়েকজন ব্যক্তিত্বের মধ্যে মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন। জিয়াউর রহমান প্রথমে একটি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। একটি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে যে সাহস, সে দূরদর্শিতা, যে ঝুঁকি একজন লিডার নেন, সেটা একটা বিশাল ব্যাপার। দ্বিতীয়ত হচ্ছে তিনি একজন বিশ্বমানের সংস্কারক, একজন রাজনীতিবিদ, উনি একজন দার্শনিক, একজন সমাজ গড়ার কারিগর।
তিনি বলেন, একটি সরকার মানে শুধু মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনী নয়। একটি সরকারের মেরুদণ্ড হচ্ছে দেশের জনগণ। এই জনগণের শক্তির ওপর ভিত্তি করেই চলে সরকার।
ড. এস এম আবদুল আউয়াল বলেন, ২৫ মার্চের সেই কালোরাত্রিতে জাতি যখন দিশেহারা তখনই নেতৃত্বশূণ্য জাতিকে মুক্তি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। চট্টগ্রামের ষোলশহর বিপ্লব উদ্যান থেকে তিনি পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে তিনি চুপ করে বসে ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবার অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মাঠে থেকে দেশকে স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার পরের সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খাদ্যশস্যের উৎপাদন দিগুণ করেছিলেন। নতুন কুড়ির মাধ্যমে শিশুদের মননের বিকাশ ঘটিয়েছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান ছিল শহীদ জিয়ার। তিনি আওয়ামী লীগের তলা বিহীন জুড়ি থেকে দেশকে স্বনির্ভর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ইতিহাসের অংশ।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই আমরা একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি বাকশালী দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এখন পর্যন্ত দেশের যে মৌলিক উন্নয়নগুলি হয়েছে তার ভিত্তি শহীদ জিয়া গড়েছিলেন। বিএনপি দীর্ঘ সতের বছর একটি ভোটবিহীন স্বৈরাচারর শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে এখনও মাঠে ঠিকে আছে। যদি আবার কোন নতুন ষড়যন্ত্র দেখতে পায় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথেই অবস্থান নিবে বিএনপি। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তা নাহলে জনগণ রাস্তায় নামবে। বাংলাদেশে আন্দোলনের সুনামী বয়ে যাবে।
আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তার সততা ও দেশপ্রেমের ব্যাপারে তার শত্রুরাও প্রশ্ন তুলতে পারেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সম্মুখ সমরে তাঁর বীরোচিত অংশগ্রহণ জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর শাসনামলে দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দেশের আপামর জনসাধারণকে এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছিল।
এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্বাধীনতা উত্তর দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণ যখন হতাশা আর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত ঠিক তখনি শহীদ জিয়ার আবির্ভাব ঘটেছিল ধুমকেতুর মত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা।
নাজিমুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহ চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। শহীদ জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নীরব ছিলেন না। এদেশের সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে তিনি পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছেন চট্টগ্রাম থেকেই। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবদান মানুষের হৃদয়ে।
স্বরণ সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবদুস সাত্তার, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, কাজী বেলাল উদ্দিন, সফিকুর রহমান স্বপন, হারুন জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, আর ইউ চৌধুরী শাহিন, শওকত আলম খাজা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহম্মেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, শিহাব উদ্দিন মুবিন, মনজুরুল আলম, আহবায়ক কমিটির সদস্য ইসকান্দর মির্জা, মো. কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন লিপু, মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, মো. জাফর আহম্মদ, গাজী আইয়ুব, মাহবুব রানা, মোহাম্মদ আবু মুসা, মোহাম্মদ আজম, মো. ইসমাইল বালি, মো. মোহাম্মদ আবু ইউছুপ, মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, বিভাগীয় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদ প্রমখ।




