ঢাকা অফিস: ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় ইউরোপের কোনও এক দেশের কনসুলেট অফিসে পাসপোর্ট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন চুয়াডাঙ্গার সৈয়দ আলম। চোখে তার আশার আলো, হাতে সম্ভবত সব নথিপত্র ঠিকঠাক। অথচ ফলাফল? “ভিসা রিজেক্টেড।” এ যেন এক চরম অপমান। ২০২৪ সালে বাংলাদেশিদের শেনজেন ভিসার প্রত্যাখ্যানের হার ৫৪.৯ শতাংশ! ভাবা যায়? এটা শুধু একটা সংখ্যা না, এটা একেকটা কষে লাগানো থাপ্পড় – একটা রাষ্ট্রকে, একটা জাতিকে, একটা নাগরিককে ছোট করে দেখানোর সুযোগ যারা খুঁজে বেড়ায়, তাদের হাতে তুলে দেওয়া একেকটা অস্ত্র।আর সেই অস্ত্র কে তুলে দিচ্ছে বর্তমান অ-সরকার।
যারা ক্ষমতার গদি দখল করে বসে আছে অবৈধভাবে, জনগণের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। এই তথাকথিত “ব্যবসায়ী গুরু” আর তার ক্লাবঘরের দোসররা যেভাবে দেশের ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছে। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে একটি উপহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে, সেটার প্রতিফলন এই ভিসা প্রত্যাখ্যানের হারে স্পষ্ট।
যে দেশে শাসন ব্যবস্থার নামে চলছে একদল বেমালুম মিথ্যাবাদীর স্বৈরশাসন, যেখানে বিদেশে গিয়ে শীর্ষ কর্তারা নিজেরাই দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, সেখানে বিদেশি দূতাবাস কেনই বা সম্মান দেখাবে? বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকরা যখন বৈধ কাগজপত্র নিয়ে নিজের টাকায় ইউরোপ ভ্রমণ করতে চান, তখন তারা কেবলই একটি পাসপোর্ট নয় – একটি ক্ষয়িষ্ণু ব্যবস্থার পরিচয় বহন করছেন। আর সেই পরিচয়ের নাম এখন ‘অবিশ্বাসযোগ্যতা’।
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন পরিসংখ্যান নয়। ২০২৩ সালে যেখানে প্রত্যাখ্যানের হার ছিল ৪২ শতাংশ, ২০২৪-এ তা লাফ দিয়ে ৫৪.৯ শতাংশে বেড়েছে। মাত্র এক বছরে এই অবনমন কিসের ইঙ্গিত দেয়? এটা শুধুই ভিসা ব্যুরোক্রেসির খামখেয়ালীপনা নয়। এটা স্পষ্ট বার্তা—তোমরা ঠিক করো, তোমাদের সরকার ঠিক করো, না হলে তোমাদের নাগরিকদের আমরা আর ঢুকতে দেবো না।
অন্যদিকে, পাকিস্তান পর্যন্ত কিছুটা হলেও নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে পেরেছে। অথচ বাংলাদেশ গেছে আরও নিচে। সুইডেন, যারা মানবাধিকারের জন্য গলা ফাটায়, তারাই বাংলাদেশি আবেদনকারীদের ৬৭.৫ শতাংশ আবেদন বাতিল করেছে। একটা তথাকথিত “উন্নয়নশীল” দেশের জন্য এটা কেবল লজ্জা নয় – এটা একপ্রকার আন্তর্জাতিক রিজেকশন লেটার।
এবং এই লজ্জার দায় কাদের? এই ব্যর্থ, দুর্নীতিগ্রস্ত, নৈতিকভাবে দেউলিয়া সরকারের। যারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত, কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে দেশের সম্মান রক্ষার প্রয়োজন বোধ করে না।
মোহাম্মদ ইউনুসদের মতো “ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর”রা বিদেশি মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশের নামে বিষোদ্গার করে হাততালি কুড়ান, অথচ ভুক্তভোগী হন দেশের সাধারণ নাগরিক। বাংলাদেশ এখন একটা গ্লোবাল রিজেক্টেড স্ট্যাম্প নিয়ে ঘুরছে, আর তার মূলে রয়েছে একটি ক্ষমতালোভী, জনগণ-বিরোধী ব্যবস্থার দানবীয় রূপ। এই যে মানুষগুলো দিনশেষে ঘরের ছেলে-মেয়ের মুখ চেয়ে একটি সুযোগ খোঁজেন—তাদের জন্য এই রাষ্ট্র, এই সরকারের কেবল এক তীব্র গ্লানি।
শেনজেন ভিসা প্রত্যাখ্যানের তালিকায় শীর্ষে থাকার মানে কী? এর মানে, জাতিগতভাবে আমাদের বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। এর মানে, পাসপোর্টটা আর সম্মানের দলিল নয়, বরং একখানা “অবাঞ্ছিত” ট্যাগ। এর মানে, আমরা গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ‘না’ শুনে যাচ্ছি, শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা আর আন্তর্জাতিক নৈতিক দেউলিয়াপনার কারণে। এই অপমান আমরা নিজ হাতে গড়েছি না—আমরা শুধু ভুগছি। আর যারা এই ব্যবস্থাকে গড়ে তুলেছে, তারা গদিতে বসে দেশের নাম, পতাকা আর জনগণ—সবকিছুকে নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। এখন সময় শুধু প্রশ্ন তোলার নয়, সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করার—এই লজ্জা কাদের প্রাপ্য? আমাদের, না কি তাদের?
Post Views: 142




