নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম জেলার কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি ঘটলেও নয়টি উপজেলায় অন্তত তিন লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও মিরসরাইয়ে। চট্টগ্রামের ৯ উপজেলায় পানিবন্দি তিন লাখ মানুষ, করুণ পরিস্থিতি ফটিকছড়ি-হাটহাজারী-মিরসরাইয়ে 1
আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, কাপ্তাই লেকের পানি বর্তমানে ১০৬ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। লেকটির ১০৯ ফুট পর্যন্ত পানি ধারণ করতে পারে। তবে আর মাত্র দুই ফুট পানি বাড়লেই কাপ্তাই বাঁধ খুলে দিয়ে লেকের পানি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
ভেঙে গেছে হালদা নদীর উপর নির্মিত বাঁধ। হালদাতীরের বেড়িবাঁধের ২২টি ভাঙা অংশ দিয়ে নদীর পানি বিভিন্ন এলাকায় ঢুকছে। নাজিরহাট নতুন ব্রিজ এলাকায় প্রায় ১৫ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন খাল থেকেও পানি উপচে মানুষের বাড়িঘরে ঢুকেছে। তবে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে হালদা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে পুরো দেশের সাথে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো।
জানা গেছে, গত বুধবার (২১ আগস্ট) থেকেই হালদার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হালদা নদীর বেড়িবাঁধে বুধবার প্রায় ২২টি স্থানে জায়গায় ভাঙন ধরে। বাঁধ ভাঙা পানির চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কও পানিতে তলিয়ে যায়।
এছাড়াও ফটিকছড়ি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। হালদা নদীর উজান থেকে আসা পানিতে লেলাং, সুন্দরপুর, ভুজপুর, পাইন্দং, বাগানবাজার, সমিতিরহাট, সুয়াবিল, নারায়ণহাট, হারুয়ালছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এর মধ্যে সুন্দরপুর, ভুজপুর, বাগানবাজার, পাইন্দং এলাকার অবস্থা সবচেয়ে করুণ। সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফটিকছড়ি থেকে হেঁয়াকো রামগড় সড়ক, ঝংকার মোড় থেকে রাউজান, নাজিরহাট থেকে কাজিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নের শান্তিরহাটের সাদিনগরে পানির তীব্র স্রোতে তলিয়ে গিয়ে সামি নামের এক শিশু নিখোঁজ হয়ে গেছে। একই সময়ে আরও দুই শিশু পানিতে তলিয়ে গেলেও স্থানীয়রা পরে তাদের উদ্ধার করে। ভুজপুরের কবিরাপাড়ায় আরেক ব্যক্তি তার ছেলেকে পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই ভেসে যান তীব্র স্রোতে। নারায়ণহাট ইউনিয়নের মির্জারহাটেও ইমরান নামের এক যুবক পানির স্রোতে ভেসে গেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বন্যার পানির তোড়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট নতুন ব্রিজ এলাকায় হালদার তীররক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাত থেকে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে। হাটহাজারীর নাজিরহাট, মন্দাকিনী ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের অনেক গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে মিরসরাই ও জোরারগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা। শুক্রবার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। এর ফলে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ, ইছাখালী, কাটাছরা, মিঠানালা ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে পানিতে। করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম ও ইছাখালী ইউনিয়নের প্রায় সব এলাকাতেই মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন। এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই।




