মিজবাউল হক, চকরিয়া : কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অর্ধ শতকোটি টাকার জায়গা জবর দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে। তিনি বিগত সময়ে সাবেক এমপি জাফর আলমের হাত ধরে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সওজের পক্ষ থেকে একাধিকবার ভবন নির্মাণ বন্ধের নোটিশ দেওয়ার পরও ভূমিদস্যুরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, চকরিয়া পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডের নামার চিরিঙ্গার বাসিন্দা ফজল করিমের পুত্র মোহাম্মদ এহেসান প্রকাশ দুবাই এহেসান ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে প্রায় ১.৬০ একর জায়গাতে মার্কেটসহ কয়েকটি স্থাপনা তৈরী করে। বিগত সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কয়েকদফা অভিযান চালানোর পরও পূনরায় স্থানপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে ভবন নির্মাণ করার কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় চার’শ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত ৬ লেইনের ব্রিজ ও এপ্রোচ সড়ক মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের ৬ লেইনের অধিগ্রহণ করা জায়গাও বেহাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এদিকে জায়গা দখলের পর সরকারি সম্পদ উদ্ধারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় এলাকাবাসি। রহস্যজনক কারণে দখলবাজের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। ফলে সরকারি জায়গা দখলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দখলবাজরা।
চকরিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় মহাসড়কের আওতাধীন প্রায় ৩৩২ কিলোমিটার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত ৬ লেইন বিশিষ্ট সেতু ও সেতু সংযোগ (এপ্রোচ) সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। ৬ লেইনের সড়ক বাবস্তবায়নের জন্য মাতামুহুরী নদীর উপর ৬ লেইনের সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতু দিয়ে যান চলাচল ও শুরু করেছে। মাতামুহুরী নদীর সেতুর সামনে এপ্রোচ রোডের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬ লেইনের মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ চলমান রয়েছে।
এদিকে চকরিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের নামার চিরিঙ্গার বাসিন্দা ফজল করিমের পুত্র মোহাম্মদ এহেসান প্রকাশ দুবাই এহেসান ও খুটাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মৃত আবদু শুক্কুরের পুত্র ডা. সোলতান সিরাজী মাতামুহুরী ব্রিজের সামনে সওজের জায়গাটি ভূয়া দলিল দেখিয়ে দখল করে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক এমপি জাফর আলমের ছত্রছায়ায় ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মহাসড়কের পাশে ভবন নির্মাণ না করার জন্য সওজের পক্ষ থেকে একাধিকবার নোটিশ ও দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামীলীগ সরকারে পতন হলে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে অর্ধশতাধিক শ্রমিক দিয়ে পূনরায় ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ এহেসান প্রকাশ দুবাই এহেসান জানান, গত ২০০৫ সালে মাতামুহুরী নদীর ব্রিজের সামনে প্রায় ১.৬০ একর জমি ক্রয় করি। মাতামুহুরী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমার ক্রয় করা ২৩ শতক জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগ অধিগ্রহণ করে। বাকী ২০ শতক জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করছি। তাছাড়া সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ অভিযোগ দেওয়ায় টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। আমি সরকারি জমি দখল করে থাকলে ক্ষতিপুরণের টাকা দেবে কেন? এমনও প্রশ্ন করেন তিনি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া শাখার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাহাত আলম জানান, বিগত সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে দখলবাজদের বিরুদ্ধে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এরপরও দখলবাজরা নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করছেন। ইতোমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।




