মিজবাউল হক, চকরিয়া: চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার (২০ মে) বিকালের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ১১৪ ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম।
বিকাল দু’টার পর থেকে একজন জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ভোট কেন্দ্র গুলোতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই হাজার ২০০ সদস্য। আর ভোট গ্রহণে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় দুই হাজার ৬০০ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম।
চকরিয়ার ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মে)সকালে অনুষ্ঠিতব্য চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখছেন। এরই অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা নজরদারি শুরু করেছেন।
আমরা বিকালের পর উপজেলার ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা উপজেলা নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যদের সহযোগিতায় নির্বাচনী সামগ্রী বুঝে নিয়ে নিরাপদে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক সবধরনের অপরাধের সাজা নিশ্চিতে কাজ করবেন। একইসাথে জেলা প্রশাসনের ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে। তাদের তত্ত্বাবধানে ১২০ জনের ৬ প্লাটুন বিজিবি, ৫৫০ জন পুলিশ সদস্য, ১৬ জনের একটি র্যাব টিম, প্রতি ভোট কেন্দ্রে ১৩ জন করে ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে ১৪৮২ জন আনসার ভিডিপির সদস্য ভোট গ্রহণ কাজে দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচনে ১১৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ৭৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ১৫৩২ জন পোলিং কর্মকর্তা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে নিয়োজিত থাকবেন। র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা টইলে থাকবেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ বাহিনীর ৫৫০ জন সদস্য ভোট কেন্দ্র ও মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। আনসার ভিডিপির সদস্যদের পাশাপাশি প্রতি কেন্দ্রে একজন অফিসারসহ তিনজন পুলিশ সদস্য ভোগ গ্রহণে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রের বাইরে একজন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি টিমে ৮ জন করে ২০টি মোবাইল টিম, ১০ থেকে ১২ জন করে একজন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে চারটি স্টাইকিং ফোর্স ১১৪ ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইরফান উদ্দিন বলেন, চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬১ হাজার ১০৩ জন৷ তৎমধ্যে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭ জন পুরুষ ভোটার ও ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬ জন নারী ভোটার। নির্বাচনে মোট ১১৪ ভোট কেন্দ্রের ৭৬৬টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।
জানা গেছে অনুষ্ঠিতব্য চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন চারজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী (দোয়াত কলম), সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম (ঘোড়া), আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব (আনারস) ও বদিউল আলম (মোটর সাইকেল)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টো-(বই), মহসিন বাবুল (টিউবওয়েল), তপন দাশ টিয়া পাখি, বেলাল উদ্দিন শান্ত (তালা), নুরুল আমিন (চশমা), মুবিনুল ইসলাম (উড়োজাহাজ)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি চৌধুরী (কলস), সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়া বেগম শম্পা (ফুটবল) ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা পারভীন (হাঁস)।
স্থানীয় জনগণ ও সাধারণ ভোটাররা বলেন, বিরামবিহীন নির্বাচনী প্রচারণা শেষে চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে ভোটের আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি জাফর আলম ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী।
বেশিরভাগ ভোটারের ধারণা, এমপি নির্বাচনে হেরে গিয়ে সর্বশেষ স্থানীয় রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি জাফর এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তার পক্ষেও মাঠে ছিলেন অনুসারী কিছু নেতাকর্মী। তিনি টানা ১৫ বছর ধরে পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, এমপি নির্বাচিত হয়ে চকরিয়াকে শাসন করেছেন। জনগণের মাঝে সেবা দিয়েছেন। এতে তাঁর একটি ভোট ব্যাংক রক্ষিতও আছে।
অন্যদিকে অপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীও চকরিয়ার জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি পৌর কমিশনার থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে।
এছাড়া কক্সবাজার ১ (চকরিয়া পেকুয়া) আসনের বর্তমান এমপি সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম থেকে শুরু করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ এবং দলের অনেক সিনিয়র নেতা, সাবেকও বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈদীর পক্ষে কাজ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে ভোটের মাঠে সাঈদীর অবস্থান বেশ ভালো।
বিভিন্নস্থরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কক্সবাজার জেলা ও উপজেলার বেশিরভাগ সিনিয়র নেতারা এখন সাঈদীর পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন। তাছাড়া সাঈদী উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সাধারণ মানুষের তেমন কোন ক্ষতি করেননি। অন্যদিকে জাফর আলম (২০১৮-২০২৩) মেয়াদে এমপি থাকাকালীন সর্বশেষ চকরিয়া পৌরশহরে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবী জানাজার নামাজে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চকরিয়া উপজেলার সাধারণ মানুষ জাফর আলমের লোকজনের উপর অনেকটা ক্ষুব্ধ। এছাড়াও এমপি থাকাকালে বেশকিছু কর্মকাণ্ডের কারণে জাফর সাধারণ মানুষের কাছে আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন।
তবে অনেকে দাবি করেন, নির্বাচনের শেষমুহুর্তে এসে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে। টাকার খেলায় সবকিছু বদলেও যেতে পারে। সবমিলিয়ে এবারের নির্বাচন জাফর আলম এবং ফজলুল করিম সাঈদীর জন্য অস্তিত্বের লড়াই। কারণ জাফর আলম যদি পরাজিত হন তাহলে তিনি রাজনীতিতে সংকটে পড়ে যাবেন। আবার যদি জিতে যান তাহলে এমপি ইলিয়াছের আমলের মতো উপজেলার অনুষ্ঠানে যেমন এমপিকে বাদ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে (জাফর) রাখা হতো সেভাবে বর্তমান এমপি সৈয়দ ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন করে বলয় তৈরি করবেন তিনি।
যদি ভোট বিপ্লবে ফজলুল করিম সাঈদী জিতে যায় তাহলে বর্তমান এমপি সৈয়দ ইবরাহিম এর বলয় ঠিক রেখে সালাহউদ্দিন সিআইপির নেতৃত্বে চকরিয়া জনপদে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একছাত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।




