চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় চকরিয়ার কর্মরত চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দু’টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশের কাজে বাঁধা ও অপরটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুইটির মামলার বাদি চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আল ফোরকান। মুলত আসল ঘটনা আড়াল করতে চার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে দাবী করেন সাংবাদিক নেতারা।
তারা বলেন, দিনদুপুরে মিছিল থেকে কারা গুলি চালালো এবং কারা গাড়ি ভাঙচুর করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অথচ আসল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই চার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা থেকে চার সাংবাদিকদের বাদ না দিলে আন্দোলন করারও ঘোষণা দেন তারা।
তারা হলেন, চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক মানবকন্ঠের চকরিয়া প্রতিনিধি আবদুল মজিদ, চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দৈনিক নয়াদিগন্তের ওমর আলী, দৈনিক কক্সবাজার সংবাদের একেএম বেলাল উদ্দিন ও চকরিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের চকরিয়া প্রতিনিধি একেএম ইকবাল ফারুক।
এদিকে চার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে চকরিয়া প্রেসক্লাব, চকরিয়া জাতীয় সংবাদ সংস্থা, চকরিয়া রিপোর্টাস ক্লাব, চকরিয়া সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির নেতৃবন্দরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তারা অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবী জানিয়েছেন। ঘটনার সাথে কারা জড়িত সঠিকভাবে তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। গাড়ি ভাঙচুর ও কারা গুলিবর্ষণ করেছে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাদেরকে মামলার আসামি না করে উল্টো সাংবাদিকদের মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এভাবে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা যাবে না। সবধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে সাংবাদিকদের মামলা থেকে বাদ দেওয়ার দাবী জানান সাংবাদিক নেতারা।
এব্যাপারে চকরিয়া সাংবাদিক সোসাইটির সভাপতি জহিরুল আলম সাগর বলেন, কন্ঠরোধ করতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ কারা করেছে দিবালোকের মতো সত্য।দ্রুত সময়ের মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান তিনি।
চকরিয়া রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি বশির আল মামুন বলেন, ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ সংঘর্ষের ঘটনায় আসল আসামিদের বাদ দিতে এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চার সাংবাদিকদের মামলা থেকে বাদ দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজবাউল হক জানান, জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার পর কারা সহিংসতা করেছে তা সবাই জানে। কারা গাড়ি ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণ করেছে দেশের মুলধারার সংবাদপত্র গুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কী কারণে সাংবাদিকদের আসামি করা হলো? তদন্ত পূর্বক সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার জোর দাবী জানানো হয়।
চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পরবর্তী হামলা সংঘাত, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণ কোন ঘটনার ধারে কাছে না থাকলেও সম্পূর্ন উদ্দেশ্য ষড়যন্ত্রমুলকভাবে চার সাংবাদিককে পুলিশ শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়িয়েছে। এঘটনায় তিনি তিব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অচিরেই চার সাংবাদিককে বাদ না দিলে চকরিয়া প্রেসক্লাবসহ কর্মরত সাংবাদিকরা বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবো।
স্থানীয়রা জানান, ১৫ আগস্ট বিকাল চারটার দিকে যুদ্ধাপরাধী মামলার আমৃত কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার নামাজ শেষে পুলিশ ও জামায়াত-শিবির কর্মীর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উত্তেজনা জড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ১টি পুলিশ ভ্যান ও চকরিয়া সরকারি হাসপাতালের ১টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ এগিয়ে আসলে তাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। একপর্যায়ে চকরিয়া থানা পুলিশ দুই-তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পৌরশহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। পরে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী শান্তি মিছিল বের হয়।
১৬ আগস্ট চকরিয়া থানার এসআই মোহাম্মদ আল ফোরকান বাদি হয়ে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাঁধা দিয়ে তাদের উপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা এবং পুলিশ ও চিকিৎসকের গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
দুইটি মামলার এজাহারে ৭৫ জন করে ১৫০ জনকে এজাহারনামীয় এবং দুই থেকে তিন হাজার আসামী করে দুটি মামলায় ৬ হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।