আদালত প্রতিবেদক: সোনার বার পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল পতেঙ্গা থানাতে মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামে এক শিশুর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার। শিশুটিকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুবীর পাল। এবার সেই বাদী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এবং মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ এনে মামলার আবেদন করেন শিশু আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা। আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলার আবেদন করা হলে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামে এক শিশুর বিরুদ্ধে সোনা পাচারের মামলা করেছিলেন অভিযুক্ত এসআই আনোয়ার এবং সে মামলায় মিথ্যা সাক্ষীও দিয়েছিলেন তিনি। একইভাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ারকে বাচাতে আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তিনি আরও বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিশুটি নির্দোষ বলে রায় দেন আদালত। জেনে শুনে মিথ্যা মামলা দায়ের, মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় এবার ফেঁসে গেছেন পুলিশের ওই দু কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে হয়েছে মামলা দায়ের করা হয়। আর মামলাটি করেছেন খোদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল রাত পৌনে ১০টার দিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুটি সোনার বার পাচারের অভিযোগে মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামে এক শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন এসআই আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে পতেঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পতেঙ্গা থানার এসআই সুবীর পাল মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনিও নিজের মতো তদন্ত শেষ করে একই বছরের ৩ অক্টোবর শিশুটিকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল এজাহার ও দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর সাক্ষ্য দেন পুলিশের ওই দুএসআই। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে শিশুটি নির্দোষ বলে আদালত রায় দেন।
আদালত লিখিত ও দালিলিক সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে দেখেন, শিশুটির এক আত্মীয় এএইচএম সুমন শুল্ক বিধান না মেনে দুটি সোনার বার নিয়ে আসেন বাহারাইন থেকে। বিমানবন্দরে ব্যাগেজ পরিদর্শক সুমনকে আটক করলে তিনি শুল্ক পরিশোধ করে সোনার বার দুটি শিশুটির কাছে গচ্ছিত রাখেন। অন্যদিকে সোনার বারের কাগজপত্র উপস্থাপন করার পরও তা আমলে না নিয়ে মামলা দায়ের করে ওই এসআই। এ বিষয়ে সংশিষ্ট রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে মামলার এসআই আনোয়ারকে বাঁচানোর জন্য আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা সুবীর পাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিট পুলিশের বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার শাকিলা সোলতানা বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



