নিজস্ব প্রতিবেদক: রাতে মশা দিনে মাছি এই নিয়ে শহরে আছি। বাসাবাড়ি কিংবা অফিস- আদালত কোথাও মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার মিলছে না। সন্ধ্যা থেকে রাত, এমনকি দিনেও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে মশা বৃদ্ধি পায়। মশার অত্যাচার থেকে চট্টগ্রামের মানুষ কোনো কালেই রেহাই পায়নি। এ অঞ্চলের মানুষ সহ্য করতে শিখেছে তাই এই অত্যাচার সহ্য করে আসছে বিগত এক দশক থেকে। প্রতিবারই চসিকের মেয়রগণ মশা নিধনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশ্বাস দেন কিন্তু চেয়ারে বসে ভুলে যান সেই কথাটি। মশার অত্যাচার সহ্যসীমার মধ্যে থাকলে হয়তো জনসাধারণ হয়তো এই কথা বলতেন না। কিন্তু দিন দিন যেভাবে মশার অত্যাচর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হয়, এবার বোধহয় রক্ষা নেই ! অথচ এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আগে চসিক নগরীর ছোট ছোট নালা কিংবা রাস্তার ধারে ঝোপ ঝাড় গুলোতে মশার ঔষুধ ছিঠানো হত। এখন তা আগের মতো নেই।
অন্যদিকে, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের খাল ও নালাগুলোর সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। নগরীর বড় বড় নালা ও খালগুলোর সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে সেগুলোতে বাঁধ দিয়ে বছরের পর বছর রেখে দেওয়ায় আবজনার ভাগারে পরিনত হয়ে সেখান থেকে মশার প্রজনন আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি পাথরঘাটার মরিয়মবিবি খাল। এই খালের বেশ কিছু জায়গায় পানি চলাচল পুরোদমে বন্ধ থাকায় ওই এলাকার জনসাধারণ মশার উপদ্রব থেকে কোন ভাবে রেহায় পাচ্ছে না।
শহরে জনজীবনের সমস্যাগুলোর মধ্যে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। বর্তমানে যেভাবে মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে, তা বিগত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।চট্টগ্রামের এমনকোনো স্থান নেই যেখানে মশার অত্যাচর নেই। অবাক করার বিষয়, যেখানে কখনও মশা খুঁজে পাওয়া যেতো না, এখন সেখানেও মশার মারাত্বক অত্যাচার চলছে।
চট্টগ্রামের বন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডিপো গুলোতে ২৪ ঘন্টা কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। বিশেষ করে যাঁরা রাতে ডিউটি করেন ইয়ার্ড কিংবা শেডের মধ্যে কাজ করেন তাঁদের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়। শিপিং ট্রেডের জনৈক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে জানতে চেয়েছেন , মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট কি চট্টগ্রামে আছে কি না ! চট্টগ্রামের মশা দেখলে তাঁর নাকি হেলিকপ্টার মনে হয়। ওই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এজন্য অনেকেই সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করছেন।
বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতি নগরবাসীর বর্তমান চাওয়া, মশার এই অত্যাচর থেকে চট্টগ্রামের মানুষকে রক্ষা করা। আমি বিশ্বাস করি চট্টগ্রামবাসী তাঁর প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে তিনি সেটার যথাযত মর্যাদা রাখবেন। এই নগরকে মশামুক্ত নগরে পরিণত করবেন। আবার আসা যাক নিজেদের দিকে। চসিকের পাশাপাশি দায়িত্ব কিছু আমার-আপনার আমাদেরও নিতে হবে।
আমরা জানি, কচুরিপনা, ডোবা, নালা এবং অপরিষ্কার ড্রেন মশার জন্মস্থল। এগুলো পরিষ্কার রাখা অতীব জরুরি। যদি আমরা পারি তবে আমরা নিজেরাই করবো। যদি চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীর প্রয়োজন হয়, তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের নিকট এলাকাবাসীরা যাবো। এছাড়াও রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা থেকেও মশার সৃষ্টি হয়। আমাদের উচিৎ নিজের এলাকা নিজেদের পরিষ্কার রাখা। মনে রাখতে হবে, জনসচেতনতাই সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তবে সিটিকর্পোরেশনের উপর হাজার দায় চাপালেও কোনো সমাধান হবে না। মশার প্রজননের ক্ষেত্রগুলো অনেকাংশই ঘরের মধ্যে থাকে। বাসা-বাড়ির আঙ্গিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি ফ্রিজের জমানো পানি থেকে মশার বংশ বিস্তার বেশী ঘটে। এগুলো তো আর সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই মাসে একবার হলেও নিজেদের বাসা-বাড়ি এবং ভবনের আশপাশ পরিষ্কার করা জরুরি।
এভাবেই আমরা সকলেই চাইলে মিলেমিশে মশামুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে পারি। এজন্য আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে মশা যেনো জন্মাতে না পারে। কারণ মশা জন্মাতে না দিলে আমাদের আর মশা নিধন করার জন্য ওষুধ ছিটাতে হবেনা। সব ধরনের মশা নিধনের ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। যাদের হাঁপানী ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের জন্য বড় ধরনের অসুবিধা এসব ওষুধে। তাই মশার ক্ষেত্র যেমন ধ্বংস করতে হবে, তেমনি মশা যেনো আর না জন্মাতে পারে সেই ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে ।




