রুহুল আমিন, বনানী: গত ২১ মার্চ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল (নিয়ন্ত্রণ) প্রবিধান’-এর গেজেট জারি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এতে ডিএনসিসি এলাকায় এক রিকশায় ৩ জন ওঠা যাবে না এবং দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রবিধান অনুযায়ী, অঞ্চলভেদে রিকশাচালকদের পোশাকের রং ভিন্ন হবে। অযান্ত্রিক যানবাহন বা রিকশাচালকের কাছ থেকে মালিক দৈনিক সর্বোচ্চ কত টাকা ভাড়া (জমা) আদায় করতে পারবেন, তা করপোরেশন নির্ধারণ করে দিতে পারবে। কোনো রিকশায় দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বেশি বহন করা যাবে না।এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা বা নির্ধারিত জোনে নির্দিষ্ট দূরত্বে যেতে অস্বীকৃতি জানালে রিকশাচালককে জরিমানা করা যাবে। রিকশাচালকের বয়স ১৮ বছরের কম বা ৫০ বছরের বেশি হতে পারবে না।
প্রবিধান অনুযায়ী, অনিয়মের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং নিবন্ধন-লাইসেন্স বাতিল ও রিকশা জব্দ করতে পারবে সিটি করপোরেশন।
প্রবিধান অনুযায়ী, করপোরেশনের অঞ্চল বা ওয়ার্ডভিত্তিক ‘অযান্ত্রিক যানবাহন ব্যবস্থাপনা শীর্ষক কমিটি’ দায়িত্ব পালন করবে। কমিটির আহ্বায়ক হবেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা/মেয়রের মনোনীত কর্মকর্তা/ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সাত সদস্যের এই কমিটিতে শ্রমিক, রিকশা মালিক ও চালক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
প্রবিধানে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো অযান্ত্রিক যানবাহন চালাতে চাইলে তাকে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স প্রথমত এক বছরের জন্য ইস্যু করা হবে এবং মেয়াদ শেষে নির্ধারিত ফি দিয়ে তা নবায়ন করতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালক দিয়ে অযান্ত্রিক যানবাহন বা রিকশা চালাতে দেওয়া যাবে না। যদি কোনো মালিক ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা চালক দিয়ে রিকশা চালান তবে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে চালককে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। একই সঙ্গে জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করা হবে করপোরেশনের দেওয়া রিকশার নম্বরটি। একবার জব্দ করা হলে রিকশার লাইসেন্স নম্বরটিও বাতিল হয়ে যাবে বলে প্রবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত বলে সিটি করপোরেশনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সনদ বা প্রত্যয়ন লাগবে। আবেদনকারীকে সিটি করপোরেশন ও এর আশপাশের প্রধান প্রধান সড়ক, স্থাপনা, অফিস আদালত, গুরুত্বপূর্ণ স্থান ইত্যাদির বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। আবেদনকারীকে সড়কপথে চলাচল করার সময় যেসব নিয়ম-কানুন, ট্রাফিক সংকেত অন্য চালকরা মেনে চলেন- তা জানতে ও বুঝতে হবে। রিকশাচালকের লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম এবং ৫০ বছরের বেশি হতে পারবে না।
অনেকের মতে- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এই প্রবিধান নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে এমন প্রবিধান বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। প্রথমত ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে যদি বলি তবে গুলশান-বনানী ও নিকেতন এলাকায় পূর্বে থেকেই ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। তবুও কোনো রিকশা চালক নির্ধারিত ভাড়ায় চলে না, তাদের খামখেয়ালি মতো চলে। তাদের কাছে যাত্রীরা পুরোপুরি অসহায়। ভাড়া সোসাইটি নির্ধারণ করলেও ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে কিনা জনবল সংকটের অযুহাতে সরেজমিনে তা তদারকিতে সোসাইটির নীরব ভূমিকা। সোসাইটি যাত্রীর অভিযোগের উপর নির্ভরশীল। অভিযোগ করলেও লিখিত অভিযোগ করতে হবে। তাহলে সোসাইটি ব্যবস্থা নিবে। সময় নষ্ট করে এমন ঝামেলা কেউই পোহাতে চান না। এছাড়া কখনো কখনো অযৌক্তিক ভাড়া দাবি করলেও মানবিক কারণে রিকশা চালকের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনা।
কেউ কেউ মনে করেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রবিধান অনুযায়ী রিকশা চলতে গেলে মালিকের রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ও চালকের লাইসেন্স করা বাবদ খরচ বাড়বে। এতে নিঃসন্দেহে রিকশার জমা আগের চেয়ে বেশি হবে। তাই বাড়বে ভাড়া। বাড়তি ভাড়ার চাপ যাত্রীর কাঁধেই পড়বে। এক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া যায় সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে। এমন নানা অজুহাতে ৯৯ ভাগ সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। শুরু থেকেই সিএনজি অটোরিকশার মিটারে না চলা নিয়ে আমাদের অভিযোগ থাকলেও এখনো এমনি চলছে। কয়েক দফায় ভাড়াও বেড়েছে তাতেও কাজ হয়নি। চালকদের কাছে আমরা একপ্রকারের জিম্মি। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসংখ্য সিএনজি অটোরিকশায় তো এখন মিটারও নেই। মিটারে চলার আইন থাকলেও তা শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে আমরা সুফল ভোগ করতে পারি না।
রিকশা চালকের লাইসেন্স ও জরিমানার বিষয়টি একটি সমপযোগি জনস্বার্থমূলক সিদ্ধান্ত। তবে যদি শতভাগ বাস্তবায়ন হয়। ‘অযান্ত্রিক যানবাহন ব্যবস্থাপনা শীর্ষক কমিটি’কে অবশ্যই টাকার বিনিময়ে অযোগ্য চালকরা যাতে লাইসেন্স না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এবং যোগ্য চালকদের লাইসেন্স পেতে বাড়তি টাকা নেওয়া বা হয়রানি না করা হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যায় না করেও মিথ্যা অভিযোগে হয়রানিমূলক জরিমানা আদায় ও জরিমানার নামে ঘুষ আদায় বন্ধে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।
Post Views: 333