খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে ইউপিডিএফের ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করেছে। নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে প্রসীত খীসা সমর্থিত ইউপিডিএফ।
আজ সোমবার(১৮ নভেম্বর) খাগড়াছড়ির রামগড়ে ‘ছাত্র- জনাতার সংগ্রাম পরিষদ’র ব্যানারে সংগঠনটি এ কর্মসূচি পালন করে। তারা প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী জালিয়াপাড়া-রামগড় সড়ক অবরোধ করে দাতারামপাড়া ও যৌথখামার এলাকায় তাদের এ বিক্ষোভ- সমাবেশ করে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে দাতারামপাড়া হতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যৌথখামার এলাকায় সমাবেশে যোগ দেন ইউপিডিএফের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সকাল ১০টার সময় ‘ফ্যাসিস্ট শাসনমুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই’ শ্লোগানে “ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ” এর ব্যানারে রামগড় উপজেলার যৌথ খামার এলাকায় খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামীলীগের ফ্যাসিবাদের শাসনের অবসান হলেও সমতলের পাশাপাশি পাহাড়েও ফ্যাসিষ্টদের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। তারা এখনও বিভিন্নভাবে ফ্যাসিবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা হিসেবে অগণতান্ত্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পদটি সন্তুু লারমা দখল করে রাখার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, অবিলম্বে উক্ত আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন আয়োজন করে যোগ্য ব্যাক্তিকে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে হবে। অবিলম্বে মিটন চাকমাসহ বিভিন্ন সময় সংঘটিত হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাহাড়ের সকল আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত পরিহার করে এক হয়ে গন আন্দোলন তৈরী করা অতি জরুরী বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে এলাকার ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ইউপিডিএফেরর মূল দল সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা কমিটির সভাপতি বাহাদুর ত্রিপুরা(রাজু ত্রিপুরা)”র সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন, গনতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সভাপতি তৈমাং লিটন ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সদস্য ধন ত্রিপুরা প্রমূখ।
রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ অনুষ্ঠানের কারণে রামগড়- জালিয়াপাড়া-খাগড়াছড়ি সড়কে প্রায় ১ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
বক্তারা বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার সহযোগিদেরকে এখনও আঞ্চলিক পরিষদে বহাল রাখা হয়েছে। তাদেরকে আঞ্চলিক পরিষদে রাখার উদ্দেশ্য হলো পাহাড়ে ফ্যাসিজম বহাল রাখা, তাকে উৎসাহিত করা, যেন পাহাড় সব সময় অশান্ত থাকে। আর পাহাড় অশান্ত থাকলে তা কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীটির জন্য লাভ। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা, উচ্চ আদালতের বিচারকরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন মান সম্মান বাঁচাতে। সন্তু বাবুদেরও তাই করা উচিত। সামান্যতম লজ্জা ও আত্মমর্যাদা থাকলে তারা বহু আগে পদত্যাগ করতেন।
তারা প্রশ্ন রেখে আরো বলেন, সন্তু লারমা একবার বলেছিলেন, একজন পুলিশ কনস্টেবলের যে ক্ষমতা, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও তার সেই ক্ষমতা নেই। তারপরও কেন তিনি আঞ্চলিক পরিষদের গদি কামড়ে থাকেন? বক্তারা আঞ্চলিক পরিষদের বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, সরকার থেকে আঞ্চলিক পরিষদে যে বরাদ্দ দেয়া হয় সেই টাকা কোথায় কীভাবে কোন খাতে খরচ করা হয় আমরা তা জানতে চাই, হিসাব চাই। এই টাকা সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকা। আঞ্চলিক পরিষদ গত ২৫-২৬ বছরে কী কাজ করেছে তার জবাবদিহি চাই। সাধারণ জনগণ আঞ্চলিক পরিষদ থেকে কিছুই পায়নি। সন্তু বাবুরা আঞ্চলিক পরিষদে বসে বসে কেবল ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন, বাস্তবে জনগণের জন্য কোন কাজ করেননি। তারা জনগণের কল্যাণের জন্য কোন কাজ করেছেন এমন কোন নজীর নেই। আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের আপামর জনগণের দাবি।
বক্তারা বলেন, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যদের ক্ষমতার মেয়াদ হলো ৫ বছর হলেও তারা ক্ষমতায় আছেন ২৫-২৬বছর ধরে। তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ক্ষমতায় রয়েছেন। কারণ তারা নির্বাচিত নন। দ্বিতীয়ত, প্রতি ৫ বছর পর পর তাদেরকে সরকার পুনঃনিয়োগ দিয়েছে বলে আমরা কখনও শুনিনি, সংবাদ মাধ্যমেও এ বিষয়ে কোন খবর বের হয়নি। কাজেই সন্তু বাবুরা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আঞ্চলিক পরিষদে বসে আছেন। ১৯৯৯ সালে সেই যে তাদেরকে বসানো হলো, সেই পর থেকেই তারা আছেন সেখানে, যেন আঞ্চলিক পরিষদ তাদের বাপ দাদার সম্পত্তি।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য অন্তবরতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, এর আগে তিন পার্বত্য জেলায় একটি মাত্র প্রতিষ্টান নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে রাঙ্গামাটি সদরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গত শনিবার(১৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার মসজিদ মার্কেটের সামনে ‘ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে এই মানববন্ধন করা হয়। “ফ্যাসিস্ট শাসন মুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই’ শ্লোগানে আধা ঘন্টা ব্যাপি চলা মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের সদস্য শ্রদ্ধা চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সরকার অবশেষে গত ৭ নভেম্বর তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করেছে। আমরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম সরকার একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদও পুনর্গঠন করবে। আমাদের প্রশ্ন, পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হলে, আঞ্চলিক পরিষদ কেন পুনর্গঠন করা হচ্ছে না? ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন পাস করার পর ১৯৯৯ সালের ২৭ মে হাসিনা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করেছিল। সেই সময় এই পরিষদে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তারা এখনও একনাগাড়ে ক্ষমতায় রয়েছে। গত ২৫-২৬ বছরে কোন সরকার আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন বা পুনর্গঠন করেনি; এমনকি পুনঃনিয়োগও দেয়নি। অথচ পরিষদের মেয়াদ হলো ৫ বছর। সুতরাং বর্তমানে যারা আঞ্চলিক পরিষদে রয়েছে, তারা বৈধভাবে আছে কীনা দেখা দরকার? আঞ্চলিক পরিষদ কী কাজ করে, তার জবাবদিহিতা কোথায়, তার তহবিলের হিসাব কী এসব বিষয়ে আমরা সাধারণ জনগণ কিছুই জানি না। জনগণের উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হলেও, জনগণের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই, জনগণের কাছে তার কোন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই।
অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে, নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে এবং এরপর এই সরকারের আমলে তিন জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে তারা আরো দাবি জানান-পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগি ও সুবিধাভোগিদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকেও ফ্যাসিস্ট শাসন মুক্ত করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসন কায়েম করতে হবে।
“জঈ-এর পুনর্গঠন চাই; পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন হলে জঈ কেন নয়?; জঈ-তে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের চাই না; জঈ-এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত কর; জঈ-এর তহবিলের হিসাব দাও; পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিষদসমূহের সংস্কার চাই; অবিলম্বে পাহাড়কে ফ্যাসিস্টমুক্ত কর” ইত্যাদি শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয় ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ।




