দি ক্রাইম ডেস্ক: সবুজের চাদরে মোড়া পাহাড়ি লাল মাটির গ্রাম। সেই গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন সাক্ষী দুই শতাব্দীর পুরনো এক লিচু গাছ। স্থানীয়দের কাছে এটি শুধু একটি ফলের গাছ নয়; এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিস্ময়ের এক জীবন্ত প্রতীক।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট বিলপাড় গ্রামের আনোয়ার হোসেন আকন্দের বাড়িতেই রয়েছে এ বিশাল আকারের ‘মাদ্রাজী’ লিচু গাছটি। কয়েক গ্রাম দূর থেকেও দেখা যায় এর বিশাল মাথা। আনোয়ার হোসেনের বর্ণনা অনুযায়ী, গাছটির বয়স দুই শত বছরেরও বেশি। গত মৌসুমে শুধু এই একটি গাছ থেকেই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকার লিচু।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই শতবর্ষী লিচু গাছটি দেখতে। কেউ আসে ছবি তুলতে, কেউ ইতিহাস জানতে। স্থানীয়দের কাছে এটি যেন ফুলবাড়ীয়ার এক জীবন্ত প্রতীক যে গাছ যুগের পর যুগ ধরে ছায়া, ফল আর বিস্ময় বিলিয়ে যাচ্ছে নিরবে।
গাছটির ইতিহাসও কম রোমাঞ্চকর নয়। আনোয়ার হোসেন আকন্দ জানান, তার দাদা দেনত আলী আকন্দ হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পুরোনো বাড়ি কিনেছিলেন ব্রিটিশ আমলে। সেই সময় বাড়ির আঙিনায় ছিল নানা প্রজাতির ফল-ফুলের গাছ। সময়ের পরিক্রমায় সব গাছ হারিয়ে গেলেও টিকে আছে এই প্রাচীন লিচু গাছটি। ধারণা করা হয়, কোনো হিন্দু পরিবারের সদস্য ভারত থেকে মাদ্রাজী জাতের এই লিচুর চারা এনে রোপণ করেছিলেন।
গাছটির আকার এতই বিশাল যে, লিচু পাড়তে মই বেয়ে উঠতে হয়। মৌসুমে পাখির হাত থেকে ফল রক্ষা করতে গাছের ডালে বানানো হয় মাচা। সেখানে রাতযাপনও করেন লোকজন। আশ্চর্যের বিষয় হলো এত পুরনো গাছ হলেও এতে এখনো কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, বয়স বাড়লেও লিচুর মান কমেনি। বরং ফল আরও মিষ্টি ও রঙে উজ্জ্বল হয়েছে। অন্য মাদ্রাজী লিচুর তুলনায় এর বিচি ছোট, অনেকটিতেই বিচি নেই। তাই এটি খেতে আরও সুস্বাদু।
তিনি আরও জানান, গাছের জাতটি রক্ষা করতে তিনি ইতোমধ্যে ৩৫টি কলমচারা রোপণ করেছেন। সেগুলোতেও ফল আসা শুরু হয়েছে।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর মোহাম্মদ জানান, লিচু গাছ এত বড় হয়, এত বয়স হলেও কোন রোগবালাই গাছে নেই এটা অবাক করার মত। আমি নিজে গাছ দেখে এসেছি। গাছের মালিককে কলম চারা করে জাতটি আরও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কোন বাড়ীতে এমন একটি লিচু গাছ থাকলে পুস্টির চাহিদা যেমন মিটবে। তেমনি আর্থিকখাবে লাভবান হবে পরিবারটি।




