খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি, রাংগামাটি, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জুম্মদের মধ্যে সংঘাত বাঁধিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে, জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।
সম্প্রতি পাহাড়ি-বিরোধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর সরকার ও সেনাবাহিনীর বিপক্ষে যে গণক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল জুম্মদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাঁধিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য একটি বিশেষ দলের সশস্ত্র সদস্যদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তারা এখন ইউপিতিএফের সাংগঠনিক এলাকায় উস্কানীমূলকভাবে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। তবে স্বার্থান্বেষী মহলটির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে জনগণকে সোচ্চার ও সক্রিয় হতে হবে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইউপিডিএফ। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)’র মুখপাত্র সশস্ত্র মহড়া বিষয়ে তা অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত(০৮ অক্টোবর) রাত থেকে পানছড়ির রূপসেন পাড়া, হাতিমারা ও মধুরঞ্জন পাড়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)’র একদল সশস্ত্র সদস্য অবস্থান করছে। কয়েকদিন আগে এই দলের এক সদস্য ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক নিকোলাস চাকমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।
এলাকায় পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুুপের সশস্ত্র দলটির অবস্থানের কারণে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগি সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে বলে, দলের এক নেতা প্রেস বিভাগের প্রধান মুখপাত্র নিরন চাকমা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “তাদের অবস্থানের কারণে আমরা অন্তবরতীকালীন সরকারের কাছে দাবি নিয়ে আন্দোলন করার জন্য এখন পূর্ণ মনোযোগ ও শক্তি নিয়োজিত করতে পারছি না।”পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)’র প্রচার ও প্রকাশনা সহ-সম্পাদক সজীব চাকমা জানান, আমাদের সশস্ত্র দল নেই, একটি অপপ্রচার মাত্র, এটি সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াত বলে মন্তব্য করেন। রুটিন মাফিক আমরা গনতন্ত্র আন্দোলনের দাবী-দাওয়া আদায়ের উপস্থাপন করা বিশ্বাসী।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির(সন্তু) উক্ত সশস্ত্র দলটি জনগণের সমালোচনা ও চাপের মুখে সেখান থেকে কয়েকদিন আগে নো-ম্যানস ল্যান্ডে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। নিকেলাস চাকমাকে মৃত্যুর হুমকি কার্যকর করতে তারা আবার ফিরে এসেছে। সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনসহ ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচলসহ দেশ বিদেশের প্রবাসী জুম্মদের ঐক্যের ডাক ও সংঘাত বিরোধী জোরালো প্রচারণা সত্বেও পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুুপের সশস্ত্র দলটির ইউপিডিএফের সাংগঠনিক এলাকায় অবস্থান করার বিষয়টি একটি সত্যকে প্রকাশ করে। আর তা হলো, এই দলটি জনগণের স্বার্থ, মতামত, দাবি ও আকাঙ্ধসঢ়;ক্ষার কোন তোয়াকা করে না।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাতে পিসিজেএসএসের(সন্তু) অন্য একটি সশস্ত্র দল দীঘিনালা থেকে সাজেকের গঙ্গারাম হয়ে গলাছুড়(উগুদোছড়ির কাছে) যায়। বুধবার(০৯ অক্টোবর) সকালে তারা সেখানে দুপুরের খাবার খায়। এলাকাটিও ইউপিডিএফের সাংগঠনিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া পিসিজেএসএসের(সন্তু) আরও কিছু সশস্ত্র সদস্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাজেকের মাজলং-এ হরেন্দ্রপাড়া ও শিবপাড়ায় অবস্থান করছে। তবে আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থে এতদিন ইউপিডিএফ সে বিষয়ে নিশ্চুপ ছিল বলে দলের এক নেতা জানিয়েছেন।
লক্ষ্য করার বিষয় হলো, পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুুপের সশস্ত্র দলগুলোর উস্কানিমূলকভাবে ইউপিডিএফের সাংগঠনিক এলাকায় আনাগোনার বৃদ্ধি এমন সময়ে ঘটছে যখন পাহাড়িদের দোকানপাট, বাড়িঘর ও বিহারে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাংগঠনিকভাবে এ বছর কঠিন চীবর দানোৎসব পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরো উল্লেখ্য, ২০১৮সালে ইউপিডিএফ ও পিসিজেএসএসের মধ্যে যে সমঝোতা হয় তাতে উভয় পক্ষ একে অপরের সাংগঠনিক এলাকায় বিচরণ করবে না বলে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পিসিজেএসএস(সন্তু) উক্ত সমঝোতা লঙ্ঘন করে ইউপিডিএফের সাংগঠনিক এলাকায় নিয়মিত সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ইউপিডিএফ সদস্যকে খুন করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, কায়েমী স্বার্থবাদী মহলটি চায়, যে কোন প্রকারে পাহাড়িদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটাতে, যাতে জনগণের দৃষ্টি “সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন” ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কর্মসূচি থেকে অন্য দিকে সরিয়ে নেয়া যায়। ওই মহলটি চায় পাহাড়িদের দলগুলো যাতে কোনভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। এ জন্য তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। আর তারা এটা জানে যে, এ কাজে সফল হতে হলে তাদেরকে পাহাড়িদের যে কোন একটি রাজনৈতিক দলকে হাত করতে হবে। তবে বর্তমানে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের কারণে পাহাড়িরা আগের যে কোন সমযের চাইতে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কাজেই কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলটির ষড়যন্ত্র অতীতে সফল হলেও এবার জনগণ তা হতে দেবে না।
ইউপিডিএফ জানিয়েছে তারা পিসিজেএসএসকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে।




