নিজস্ব প্রতিবেদক: মীরসরাই উপজেলার ৫ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সেগুন বাগিচা বরাবরে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে জেলা প্রশাসককের নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীর দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে মো. আবদুর রহিম কর্তৃক স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, মীরসরাইয়ের উপজেলার ৫ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি. অনিয়ম, সন্ত্রাস, লুটরাজ, রাহাজানি মাদক সহ সরকারী পাহাড় ও বন কেটে উজাড় করছে এ জনপ্রতিনিধিরা।
ভুক্তভোগীরা হলেন-আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহমান মিল্টন, জোবেদা বেগম, সালেহা খাতুন ও মো. পারভেজ উদ্দীন।
অভিযোগের আলোকে জানা যায় যে, ইউনিয়নের দায়িত্বরত বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সোনা মিঞা মাদক ও সন্ত্রাস জগতের গডফাদার । সে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে অর্থ যোগানদাতা এই সোনা মিঞা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সরকারের আওয়ামালীগের দলীয় নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার মতো এমন কারো সাহস নেই। যেই প্রতিবাদ করতে যায় তাকে কখনো মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়াসহ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নানাভাবে হয়রানি করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এক সময়কার জামাত-বিএনপি অঙ্গসংগঠনের কর্মকান্ডে জড়িত থাকা বর্তমানেও ক্ষমতার চেয়ারে আওয়ামীলীগের পদ পদবী এবং ইউপি চেয়ারম্যানের পদাধিকার বলে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জামাত বিএনপিকে অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, তিনি এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান হলেও পাশ্ববর্তী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বর্ডার হওয়ায় তার রয়েছে চোরাকারবারীদের সাথে রয়েছে সুসম্পর্ক। প্রতিরাত্রে তার নেতৃত্বে ভারত থেকে অবৈধ পথে ভারতীয় ফেনসিডিল, ইয়াবা, মাদক, মদ ও ভারতীয় মূল্যবান কাপড় পাচার সহ নানা অপরাধ অপকর্মে জড়িত রয়েছে সোনা মিঞা চেয়ারম্যান। ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোতে শিক্ষার হার কম থাকার কারণে সহজ সরল গরিব পরিবারের নারীদের বিভিন্ন প্রকারের প্রলোভন দেখিয়ে ভিটেমাটি দখলসহ অনেক গরিব দু:খীর বসবাসরত ভিটেমাটিও জোর জবর পূর্বক দখল করেছেন।
সম্প্রতি মীরসরাইয়ে এবার খোদ বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পেশীশক্তির জোরে ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে রক্ষক হলো ভক্ষক।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে অবস্থিত টিলাটি কাটছেন হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া। টিলা কাটার মাটি বিক্রিও করা হচ্ছে।
গত শনিবার সকালে সরেজমিনে রসুলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রসুলপুর সরকারি আবাসন এলাকার দক্ষিণে একটি কৃষিজমির পাশে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু টিলাটির অবস্থান। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে মাঝারি একটি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পাদদেশ থেকে কাটা শুরু হয়েছে টিলাটি। কয়েকটি পিকআপ পালা করে পরিবহন করছে টিলার মাটি। মাটি পরিবহনের জন্য পাশেই মাটি কেটে করা হয়েছে নতুন রাস্তা। মো. ইয়াছিন মিয়া নামের জনৈক ব্যক্তি ওইখানে মাটি আনা-নেওয়ার তদারক করছিলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিলাটি কাটছেন সোনা মিয়া চেয়ারম্যান। টিলা কেটে এখানে একটি স্কুল করা হবে বলে শুনেছি। আমার এক আত্মীয় এখান থেকে মাটি কিনেছেন জায়গা ভরাট করতে। আমি মাটি নেওয়ার কাজের তদারকি করছি।’
টিলা কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বলেন, ‘রসুলপুর গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় করে দেওয়া গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। তাই আমার ব্যক্তিগত ৮৮ শতক (প্রায় ৩ বিঘা) কৃষি শ্রেণি জমিতে মায়ের নামে একটি বিদ্যালয় করছি। এ জন্য একটি টিলার কিছু অংশ কাটতে হচ্ছে। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি। মানুষের কল্যাণে নিজের জায়গায় নিজ অর্থে বিদ্যালয়টি করছি। এখানে কোনো লুকোচুরি নেই।’
দৃশ্যমান একটি টিলা কীভাবে কাগজপত্রে কৃষিজমি হলো এবং টিলা কাটার অনুমতি কীভাবে মিলল, জানতে চাইলে মীরসরাইয়ের ইউএনও মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘প্রথমত টিলা কেটে বিদ্যালয় করতে আমি কাউকে কোনো অনুমতি দিইনি। আর ব্যক্তিগত কৃষি শ্রেণির জায়গা হলেও সেখানে পাহাড় বা টিলা থাকলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তা কাটার সুযোগ নেই। আর টিলার জায়গাটি কৃষি শ্রেণি হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে ভূমি কর্মকর্তা ও তহশিলদারকে পাঠানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘মীরসরাইয়ের হিঙ্গুলী ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে এক চেয়ারম্যানের টিলা কাটার বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’
উল্লেখ্য যে, মীরসরাইয়ের ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিঞার বিরুদ্ধে ধুমঘাট ফেনী নদীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বালু উত্তোলনের মতো ব্যাপক গুরুত্বর অভিযোগ থাকা স্বত্বেও প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের মন্ত্রী এমপিদের অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ধরাকে স্বরাজ্ঞানে পরিণত করে ব্যাপক অপরাধ করছে বলে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে।
অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি অবৈধ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বহু অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন মর্মে স্থানীয় আলাউদ্দীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যা নিয়ে পরবর্তী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, মীরসরাই জোরারগঞ্জ থানার ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনা মিঞা চেয়ারম্যান দুবাইতে আলিশান বাড়ী, আবাসিক হোটেল মোটেল নিমার্ণ করেছেন। এমনকি তার আত্মীয় ও স্ত্রী সন্তানদের নামে রয়েছে নামে বেনামে অসংখ্য ব্যাংক একাউন্ট। আর এ সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে সরকার ও স্থানীয় এমপি মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে জবরদখলকৃত আয়কৃত হাজার হাজার কোটি টাকা। তিনি চেয়ারম্যানের ক্ষমতায় বসে বিভিন্ন লোকের নামে বেনামে এমনকি রোহিঙ্গাদের নামে ভুয়া জন্ম সনদ, ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি কোটি কোটি টাকা।
ধুমঘাট ফেনী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ধুমঘাট ব্রিজ ও রেলওয়ে ব্রিজটি বর্তমানে সম্পূর্ণ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ধুমঘাট বালু মহলের অ-ঘোষিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে জিম্মি করে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করছে। ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর ঘর-বাড়ী ফসলী জমি বিলীন করে রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, তার সাথে স্থানীয় এমপি -মন্ত্রী ও প্রশাসনের অবৈধ মাসিক লেনদেনের চুক্তি থাকার কারণে প্রশাসনও নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
৯নং মীরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ দিদারুল আলম দিদার, ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মাস্টার, মীরসরাই উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক জুনুকে আটক করেছে ডিএমপি বনানী থানা পুলিশ, রয়েছেন সাহেরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামরুল হায়দার চৌধুরীসহ অসংখ্য জনপ্রতিধিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ সরকারীবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকাসহ রোহিঙ্গাদের নামে বেনামে জন্মমৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ, জায়গা ও ভূমি দখল সহ নানা অনিয়ম অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এমনকি এ সমস্ত চেয়ারম্যানগণ নিয়মিত কার্যালয়ে আসেন না মর্মে স্থানীয় সরকার তাদেরকে শোকজ লেটারও পাঠিয়েছেন যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
জানা যায়, ইতিপূর্বে এ অভিযুক্ত মীরসরাই জোরারগঞ্জ থানার ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনা মিঞা চেয়ারম্যানের ছেলের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীসহ যুবতী নারীকে অপহরণের মতো ঘটনা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং তার ছেলের বিরুদ্ধেও মাদক ও চোরকারবারের অভিযোগ রয়েছে।
উপরোক্ত ৫ ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী দুর্নীতি অভিযান যখন শুরু হয়েছে ঠিক সেই মুহুর্তেই মীরসরাইয়ের ভুক্তভোগীদের তাদের মুখ খুলতে শুরু করেছে।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত উক্ত ৫ ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা কোন দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত নই, ষড়যন্ত্রের স্বীকার।




