নিজস্ব প্রতিবেদক: পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম ও একমাত্র আইকনিক রেল স্টেশনে ফাটল দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের টাইলস, যা এখনি বিভিন্ন স্থানে ফেটে গেছে। আবার কিছু স্থানে খুলে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ওয়াকওয়ের বিভিন্ন স্থানে বড় ফাটল, আবার অনেক জায়গা ভেঙে গেছে।
নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ফলে এমটি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এর কোনটিকেই সমস্যা মনে করছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যেহেতু এখনো প্রকল্প আমাদের কাছে হস্তান্তর করেনি, তাই বুঝিয়ে দেয়ার আগে সবকিছু রিপিয়ার করে দিবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বলছিলাম আইকনিক স্টেশনের কথা, যেটি ”কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন” নামে পরিচিত। এটি ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন দোহাজারি কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত একটি স্টেশন। স্থানীয় ব্যক্তি, একাধিক যাত্রীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্টেশনের ভেতরে মাস্টারের জন্য নির্মিত রুমের একটি দেয়ালের উপর নিচে প্রায় ৭/৮ ফুট লম্বা একটি ফাটল দেখা গেছে। এছাড়া স্টেশনের ভেতরে লাগানো মার্বেল পাথরের টাইলস, প্লাটফরম ও ওয়াকওয়েতে লাগানো পার্কিং টাইলসগুলো খুব নিম্নমানের। অনেক জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। সিমেন্টের আস্তর খুলে পড়ে যাচ্ছে, অনেক লম্বা ও বড় ফাটল রয়েছে ওয়াকওয়েতে, যেকোন সময় গাইড ভেঙে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া প্লাটফরম ও মূল স্টেশনের ছাদে সমস্যার কারনে পানি পড়ছে ভেতরে। যা একধিক গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, দোহাজারি কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম চৌধুরী তাৎক্ষনিক কোন একজনকে ফোন করে ফাটলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ নেই, তবে বড় প্রকল্পে ২/১ টা জিনিষ একটু এদিক সেদিক হতে পারে”।
মূলভবনে ফাটল ও টাইলস ভাঙার বিষয়ে তিনি বলেন, “উদ্বোধনের জন্য একটু জরুরীভাবে কিছু কাজ করা হয়েছে, সেখানে একটু ত্রুটি থাকতে পারে। তবে পুরো প্রকল্প শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরো ৪ মাস সময় চেয়েছেন। আশা করা যায় তারা ৩ মাস সময় পাবেন অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের বুঝিয়ে দিবে। যেখানে যা সমস্যা আছে এর আগে সবকিছু মেরামত করে দিবে”।
নষ্ট হলে মেরামত করে দিবে এটা ঠিক কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মেরাত করে দিলেও সরকারকে ঠকানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রকল্প বুঝিয়ে দেয়ার পরেও একবছর সময় থাকে এরমধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজ খরচে মেরামত করে দিতে বাধ্য।”
নিমন্মানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি দেখব। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।”
উল্লেখ্য, কক্সবাজার রেলওয়ে (আইকনিক) স্টেশনটি কক্সবাজার জেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় অবস্থিত একটি ছয়তলা বিশিষ্ট রেলওয়ে স্টেশন। এটি বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। এটি দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের শেষ স্টেশন। স্টেশনটি একটি ঝিনুক আকৃতির, ২৯ এশর জমির উপর নির্মিত এই স্টেশনটির মোট আয়তন ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট।
স্টেশনটিতে ৬টি প্ল্যাটফর্ম, টিকিট কাউন্টার, রেস্তোরাঁ, হোটেল, শপিংমল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লকার, ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ এবং প্রার্থনার স্থান রয়েছে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রকল্পটি, তবে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কালাম চৌধুরী জানান প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা খরচ হয়নি।
গত ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণে খরচ হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এটি নির্মাণ করেছে।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছয়তলা ভবনের রেলস্টেশনের সামনে খোলা মাঠে তৈরি হয়েছে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন। তারপর চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে পদচারী–সেতু হয়ে উঠবেন ট্রেনে। আবার ট্রেন থেকে নেমে ভিন্ন পথে বেরিয়ে যাত্রীরা পা বাড়াবেন সমুদ্রসৈকতের দিকে। গমন ও বহির্গমনের জন্য তৈরি হয়েছে পৃথক দুটি সড়ক। আছে গাড়ি পার্কিংয়ের পৃথক তিনটি বড় জায়গা।




