নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে বাস্তবায়িত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা বারবার পরিবর্তন, হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি, পিলারে ফাটল, যত্রতত্র র্যাম্প স্থাপন ও কাজের গুণগত মান নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
৪ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কতটা সুফল মিলবে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এই ছয় বিষয় সরেজমিন খতিয়ে দেখতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দেবে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কাছে। এ প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।
আজ বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) ও শুক্রবার এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শনে আসছে সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবে তারা।
সংসদীয় সাব-কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ বলেন, প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পর স্থায়ী কমিটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, শতভাগ গুণগত মান নিশ্চিত করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ করা হয়েছে। সব কাজে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে হয়েছে। পরিদর্শনে স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদও আসছেন।
এ প্রকল্প যখন অনুমোদন হয়, তখন তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মূলত সে অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা, তা দেখতে আসছেন।
নগরের লালখানবাজারে এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প নেমেছে। এখানে র্যাম্পের চারটি পিলারে দেখা দিয়েছে ফাটল। পিলার নম্বরগুলো হলো– পিআর-১ থেকে ৩ ও আপওয়ার্ড পিয়ার বা ইউপিআর-২২।
বিশেষজ্ঞরা ফাটলের গভীরতা যাচাই ও মেরামতের পদ্ধতি নির্ধারণে উচ্চতর কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা করেনি সিডিএ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই সেটি মেরামত করে। অবশ্য তাদের দাবি, এই ফাটল এক্সপ্রেসওয়ের সক্ষমতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বিষয়টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দৃষ্টিগোচর হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গুণগত মান যাচাইয়ে তিন সদস্যের সাব-কমিটি গঠন করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মজনু ও পারভীন জামান এ কমিটির সদস্য। অন্য সদস্যরা দুই দিন চট্টগ্রামে থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। বিশেষ আমন্ত্রণে কমিটির সঙ্গে পরিদর্শনে আসবেন গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শরীফ আহমেদ।
গত ২০১৭ সালে লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শুরুর পর তিন দফা নকশা পরিবর্তন হয়েছে। দৈর্ঘ্য কমেছে ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে যত্রতত্র র্যাম্প যুক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের চাহিদা অনুযায়ী ফকিরহাটে নামানো হয় র্যাম্প। নৌবাহিনী, সিইপিজেড ও কেইপিজেডের অনুরোধে চারটি র্যাম্পের স্থান পরিবর্তন করা হয়। বারবার নকশা সংশোধন হওয়ায় বেড়েছে ব্যয়। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদিত সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা; ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকা।
প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের বাধার মুখে পড়ে। অ্যালাইনমেন্টসহ নানা বিষয়ে আপত্তি তোলে তারা। এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামো নির্মাণ শেষে র্যাম্প নির্মাণকাজ শুরু হলেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আপত্তি তোলে।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, প্রকল্পটি ৯৯ শতাংশ মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বারবার নকশা নিয়ে আপত্তি ওঠার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, প্রকল্পটি কতটা অপরিকল্পিত।
এ বিষয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটির নকশা তৈরির সময় সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করেছি। তাদের সম্মতি নিয়েই নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। অনেক সভায় প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা ছিলেন না। তাদের প্রতিনিধিরা ছিলেন। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা আপত্তি দিয়েছেন। আমরা সব মতামত গুরুত্ব দিয়েছি।




