খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার টানা ভারী বর্ষণে ৯টি উপজেলাতে বন্যার পাশাপাশি ব্যাপক পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার(০২ জুলাই) খাগড়াছড়ি শহরের শালবাগান, হরিনাথ পাড়া, রসুলপুর ও মেহেদীবাগে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মাটিরাঙ্গার সাপমারায় পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ ৪ঘন্টা ব্যাপী বন্ধ হয়। ফাযার সার্ভিস ও পুলিশের ৪ঘণ্টার চেষ্টায় যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
এদিকে বন্যার কারণে জেলার চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দীঘিনালার কবাখালী ও মেরুং এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রাঙামাটির সাজেক ও লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়ির আন্ত: সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হযেছে। এছাড়া জেলা শহরের রাজ্যমনি পাড়া, বটতলী, কালাডেবা, দক্ষিন গোলাবাড়ি, গুগড়াছড়ি, মুসলিম পাড়ার একাংশ, মিলনপুর, কল্যাণপুর, মেহেদিবাগ, উত্তর ও দক্ষিণ গঞ্জপাড়া, শান্ধিসঢ়;নগর ও বাঙ্গালকাটির একাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাহাড় ধস ও বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় খোলা হয়েছে ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং চলছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, পৌর এলাকায় ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত ও পানিবন্দি পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং চলমান।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান জানান, পুরো জেলায ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হযেছে। সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হযেছে। পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
দীঘিনালায় টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত: প্রবল বর্ষণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দীঘিনালা-সাজেক-লংগদু প্রধান সড়কে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ঠেলাগাড়ি ও ভ্যান গাড়ি দিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। এছাড়াও উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ছোবাহানপুর, চিটাগাংপাড়া, ১নং কলোনি, ৩নং কলোনি এলাকায় নিম্নাঞ্চলের পানি ডুকে পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে বহু পরিবার।
এদিকে কবাখালী ইউনিয়নের মাইনী ব্রীজ থেকে কবাখালী বাজার পর্যন্ত সাজেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছ। এমিকে প্লাবিত অঞ্চলের পরিবারগুলোর জন্য উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়াও প্রবল বর্ষণে উপজেলার ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোর বসবাসরত পরিবারগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রেচলে আসার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকী জানান, দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে বন্যায় বেশি ক্ষতির আশংকা থাকে। ইতিমধ্যে চার-পাঁচটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত অঞ্চলগুলোনও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার মাইকিং করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো: মামুনুর রশীদ জানান, টানা ভারি বৃষ্টির কারণে উপজেলার ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, এবং ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্যায় প্লাবিত বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল
ভারী বর্ষণ ও বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদসহ ওই এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে খোলা হযেছে আশ্রকেন্দ্র। সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। জরুরি ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুুত করে রেখেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ছোট-খাটো পাহাড় ধসে মাটি ও গাছপালা রাস্তায় পড়ে গিয়ে সড়ক ব্যবস্থার বিঘ্ধসঢ়;নতা ঘটছে। এতে বড় ধরনের কোন ক্ষয়- ক্ষতি হয়নি। মারিশ্যা-দিঘিনালা সড়কেও রযেছে পাহাড় ধসের সম্ভবনা এবং মারিশ্যা-বাঘাইছড়ি থেকে অন্যান্য জেলা-উপজেলাযর সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রযেছে।
টানা ৪দিনের থেমে-থেমে হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাতে এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে বাঘাইছড়ি কাচালং নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বাঘাইছড়ি পৌরসভা সদরসহ মাষ্টার পাড়া, পশ্চিম মুসলিম ব্লক, লাইল্যা ঘোনা, এফ ব্লক, উগলছড়ি ও পুরাতন মারিশ্যা গ্রামসহ উপজেলার বঙ্গলতলী, রুপকারী, মারিশ্যা, বাঘাইছড়ি, খেদারমারা, সাজেক, বাঘাইহাট, সারোয়াতলী ও আমতলী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়েছে এবং সাজেক ইউনিয়নের মাচালং ও বাঘাইহাট এলাকায সড়কের অংশ বিশেষ তলিযে যাওযায সাজেক পর্যটন এলাকায় যাওয়া শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে এবং নিজ গন্তব্য আপাতত ফিরত পারছেনা। এছাড়াও তলিযে গেছে চাষাবাদের অসংখ্য জমি।
বন্যায় প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের মানুষজন আশ্রয় কেন্দ্রে ও আত্ময় স্বজনের বাড়িতে(উচু স্থানে) আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে এবং কৃষক ও খামারীরা তাদের গবাদি পশু গুলো নিরাপদ স্থানে সরিযে নিচ্ছে। কোরবানি ঈদের ১-২পরেও বন্যা হয়েছে বাঘাইছড়িতে। এটা দ্বিতীয় ধাপের বন্যা বলে স্থানীয়রা জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের ফলে বাঘাইছড়ির নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারনে ইতিমধ্যে উপজেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। নিন্মাঞ্চলের লোকদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য আহবান করা হয়েছে এবং বন্যার্তদের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুুতি রয়েছে। প্রায় ২-৩ হাজার পরিবার বন্যায় কবলিত।
সাজেকে আটকা পড়েছেন ৭০০ পর্যটক
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি-বাঘাইহাট সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকে প্রায় ৭০০পর্যটক আটকা পড়ে খাগড়াছড়ি ফিরে আসতে পারছেন না। এতে পর্যটকরা আতঙ্ক বোধ করছেন। মঙ্গলবার(২রা জুলাই) সকালে সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মন এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-লংগদু আন্ত: সড়কের হেডকোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার। টানা বর্ষণে দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়ন ও কবাখালি ইউনিয়নে প্রায় ২৫গ্র্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণে মাইনী নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কেও যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।




