#সংঘবদ্ধ ভূমি খেকো চক্র পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি
#বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস
#থামছে না পাহাড় কর্তনের মহোৎসব
চাইথোয়াই মারমা, বিশেষ প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ভারী বর্ষণে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করে সকাল থেকে জেলা সদরের শালবন, মোহাম্মদপুর, সবুজবাগ ও কুমিল্লাটিলা ঘুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীতে সরিয়ে নিতে মাঠে নামেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
জেলা সদরের শালবন, মোহাম্মদপুর, সবুজবাগ ও কুমিল্লাটিলা ঘুরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীতে সরিয়ে নিতে মাঠে নামনে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং চলছে।
এ দিকে ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির আন্ত: সড়কে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ভারী বর্ষণে সকালে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহালছড়ির চব্বিশ মাইলে সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে রাঙ্গামাটির সাথে খাগড়াছড়ির যান চলাচল বন্ধ ছিলো।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, পৌর এলাকায় ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। ৯টি ওয়ার্ডের পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং চলছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা ইসলাম আজ সোমবার (০১ জুলাই) বিকালে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ের যেতে অনুরোধ জানান।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকায় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র গুলো প্রস্তুুত রয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকির পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বান্দরবানের থানচিতে সাঙ্গু নদীতে নৌকা ডুবে দুই স্কুল শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এলাকাটি দুর্গম ও নেটওয়ার্কবিহীন হওয়ায় নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের নাম পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। সোমবার(০১ জুলাই) দুপুরে তিন্দু ইউনিয়নের পদ্মঝিড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী নৌকা যোগে হরিসচন্দ্র পাড়া থেকে রুনাধন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। এসময় পদ্মা ঝিড়ি এলাকায় পৌঁছালে নৌকাটি ডুবে যায়। এসময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা সাঁতার কেটে প্রাণ রক্ষা করতে পারলেও দুই শিক্ষার্থীর পানিতে ডুবে যায়। নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা রুনাদন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র বলে জানা যায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভাগ্যচন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, হরিসচন্দ্র পাড়ার ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী রুনাধন পাড়ায় যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয়েছে। এখনো বিস্তারিত খবর পাওয়া যায়নি। আমরা খবর নিচ্ছি নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিচয় জানার জন্য।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, থানচিতে নৌকা ডুবে দুই স্কুল শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনেছি। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসে পড়ে মো: আবু বক্কর(৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার(২৯ জুন) দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৯নং নম্বর ওয়ার্ডের ফুলতলি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক সদর ইউনিয়নের ফুলতলি গ্রামের মৃত আলী মিয়ার ছেলে আবু বক্কর।অপরদিকে খাগড়ছড়ি ও রাঙামাটিতে বর্ষা মানেই পাহাড় ধসের শঙ্কা। কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বেড়েছে পাহাড়ের ঢালে বসবাস। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি।
জানা গেছে, নাগরিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে আবাসস্থল নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাঁচ হাজার পরিবারের প্রায় ২০হাজার লোক পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। শহরের ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাঙামাটি সদরের শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন ও রাঙাপানি এলাকা এবং কাপ্তাই, কাউখালী, নানিয়ারচরসহ প্রায় সব উপজেলাতেই ঝুঁকিপূর্ণ বসতি দেখা যায়। অথচ পাহাড়ে ২০১৭সালের ভয়াবহ ধসের চিহ্ন এখনও দৃশ্যমান। ২০১৭সালে পাহাড় ধসে ১২০জনের এবং ২০১৮ সালে ১১জনের মৃত্যু হয় জেলায়। তারপরেও সেই সব স্থানে আবারও বসবাস করছে মানুষ।
সচেতন স্থানীয়দের তথ্যমতে, ২০১৭সালে পাহাড় ধসের পরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি বেড়েছে কয়েকগুণ। এসব এলাকায় বেড়েছে নাগরিক সুবিধা। প্রশস্ত সড়কের পাশাপাশি পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ফলে সাত বছরে জায়গার দাম বেড়েছে শতগুণ। প্রশাসনের জরদারির অভাবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বসতি। মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নন বসবাসকারীরা।
সদর উপজেলার শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা মো: মিঠু জানান, এই এলাকার যারা বসবাস করে তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অন্য জায়গায় থাকার সুযোগ নেই। আবার শহরে থাকতে গেলে অনেক টাকা ঘরভাড়া লাগে। তাই তারা বাধ্য হয়েই এখানে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন।
রূপনগর এলাকার আরেক বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, এসব জায়গা স্থানীয় বাঙালি অথবা পাহাড়িদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে খাস জমিতে অনেকে বসবাস করছেন। ২০১৭সালের পর এসব এলাকার জায়গার দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। মানুষ টাকা দিয়েও জায়গা পাচ্ছে না।
যুব উন্নয়ন এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল চাকমা বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম ছাড়া তেমন সমস্যা হয় না। বেশি বৃষ্টি হলে আশেপাশের আশ্রয়কেন্দ্র্র চলে যাই। ২০১৭সালের পর আর পাহাড় ধস হয়নি। এখন অনেকের মধ্যে সেই ভয় কেটে গেছে। কেউ আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও চায় না।’
রাঙামাটি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীদের বেশির ভাগই স্বল্প আয়ের মানুষ। এই অবৈধ স্থাপনা যখন গড়ে ওঠে তখন নজরদারি করলে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি হতো না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে পাহাড়ে এমন বসতি গড়ে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাঙামাটির স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। তাদের জন্য নিরাপদ বসতি নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে প্রতি বছর বর্ষায় এমন দৌড়াদৌড়ি করতে হবে সবাইকে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘যারা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব পাঠাবো।’ তিনি জানান, পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ এবং খাস জমি কেনাবেচার তথ্য পেলে প্রশাসন সব সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অন্যদিকে খাগড়াছড়িতে ভূমি খেকোরা যেন নিয়ন্ত্রণহীন। পুরো জেলায় পরিবেশ আইন না মেনে দেদারছে চলছে পাহাড় কাটা,পাহাড় কেটে বাড়ি-ঘর নির্মাণ,পুকুর ভরাট ও ইটভাটার মাটি সংগ্রহসহ বিভিন্ন কাজের অজুহাতে পাহাড় কাটা।একটি সংঘবদ্ধ ভূমি খেকো চক্র পাহাড়ের মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। দিনে-রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে সন্ধ্যা নামলে তৎপরতা আরো বেড়ে যায়। পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় প্রাণ যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অবাধে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে জীবনহানির শংকা প্রবল হয়ে উঠছে। কিন্তু থামছে না এই মহোৎসব। এক শ্রেনীর ভূমি খেকো দেদারছে পাহাড়ের বুকে যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ের জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়ে ও পাহাড় কেটে সেখানে গড়ে তুলছে বসতি। প্রশাসনের বক্তব্য অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো, অথচ খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার ৩ সপ্তাহ পরও নিরব প্রশাসন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে খাগড়াছড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশ।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে শুধু খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে ৩ জনের প্রাণ গেছে। সর্বশেষ শনিবার রাতে(২০শে মে) খাগড়াছড়ি রামগড়ে রাতে আধারে পাহাড় কাটার সময় স্কেভেটর উল্টে চালক মো: মিজানুর রহমান নিহত হয়েছেন। এছাড়া ২০১৭সালে খাগড়াছড়ি পাহাড় ধসে প্রানহাণির পাশাপাশি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় রাকিব হোসেন নামে এক ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন শ্রী মতি রঞ্জন ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু পত্র গ্রহণের প্রায় তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি।
জানা গেছে, মেসার্স সেলিম এন্ড ব্রাদার্স রাবার প্লান্ট’র ব্যবস্থাপক মতি রঞ্জন ত্রিপুরা দীঘিনালায় রাকিব হোসেন নামে এক ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রটি ৩ মে গৃহীত হয়। চিঠি গ্রহণের দীর্ঘ দিন পার হলেও কোন ধরণের তদন্ত বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি রাকিব হোসেনের বিরুদ্ধে। গত রমজান মাসে খাগড়াছড়ি শহরের গঞ্জপাড়া এলাকায় দিনে-রাতে একটি বিশাল আকৃতির পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করায় প্রতিবেদককে মিথ্যা মামলা ও হামলার হুমকি দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘ দিন ধরে খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন ,ধানি জমি, পুকুর ও নালা নিরহ মানুষের কাছ কিনে ভরাট করে বেশি দামে বিক্রি করে আসছে। এ ক্ষেত্রে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিতে কেনা ও বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্য কম দেখানো হচ্ছে। এতে চক্রটি লাভবান হলেও সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জায়গার মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে হওয়ায় স্থানীয়রা জায়গা ক্রয় করতে পারছেন না। সমতলের লোকজন এসে সে সব জায়গা কিনে নিচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, গত কয়েক বছর ধরে চক্রটি খাগড়াছড়ি শহরের জিরোমাইল থেকে শুরু করে জেলা শহরের অধিকাংশ ধান্য জমি,নালা ও পুকুর নিরহ পাহাড়িদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে কিনে নেয়। পরে সে সব জমি মাটি ভরাটের মাধ্যমে উপযুক্ত করে বেশি দামে দামে বিক্রি করছে। জায়গার মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় সে সব জায়গা কিনতে পারছে না। ভূমি খেকোদের সহযোগিতায় ভূমি চলে যাচ্ছে সমতলের ব্যবসায়ীদের হাতে। গড়ে তুলছে নানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে কেনা ও বিক্রির প্রকৃত মূল্য গোপন করে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিচেছ। সে ক্ষেত্রে চক্রটি রাতারাতি ‘ আগুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, এক শ্রেনীর প্রভাবশালী পাহাড়ের জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়ে ফেলছে। কয়েকটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে সমান করে বেশি দামে বিক্রি করছে। এছাড়াও একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘ দিন ধরে পাহাড় ছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায়। ভূমি খেকোরা ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ি শহরের অনেক ছড়া-নালা দখল করে নিয়েছে। সেখানে তৈরী করা হয়েছে বিলাস-বহুল ভবন। ফলে ছড়া-খাল সংকোচিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে খাগড়াছড়ি শহর পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পরিবেশবাদী সংগঠক ও গণমাধ্যমকর্মী অপু দত্ত বলেন, অভিযোগ-আন্দোলনত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। সবুজ পাহাড় এখন আর নেই। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি পরিবেশগত প্রভাবও পড়ছে। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার ফলে রাঘব-বোয়ালদের থামানো যাচ্ছে না। বরং সিন্ডিকেটগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠছে। জেল জরিমানার পাশাপাশি সঠিক আইনের প্রয়োগে এখন পাহাড় রক্ষার বড় হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের উপ-বন সংরক্ষক হুমায়ুন কবীর জানান, যত্রতত্র পাহাড় কাটা ও বন উজাড়ের ফলে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের জীব বৈচিত্র্য। নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এছাড়াও ঝুঁকিও বাড়ছে। পাহাড় ও পাহাড়ের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলছেন তিনি। একইসাথে সামাজিক বনায়ন সৃষ্টির প্রতি নজর দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধ ও পুকুর-জলাশয় দখল যাতে দখল করতে না পারে তার জন্য নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকতাদেরও সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যুবকরা ভালো চাইলে ভালো করতে পারে, মন মানসিকতা জাগ্রত করতে হবে বলে বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি সাথে খাগড়াছড়ি জেলা নাগরিক প্লাটফর্ম ও উপজেলা ইয়ুথ গ্রুুপ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।




