ক্রাইম প্রতিবেদক: জিআরপি থানা ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীসহ কোতোয়ালী পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে অবৈধভাবে হারু বাবুর ‘কান্ট্রি স্প্রীড সপ’। শেলী চক্রবর্ত্তী ও বিজয় চক্রবর্ত্তী (শাওন) তারা দুজনেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তপন চক্রবর্ত্তীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও পালক পুত্র। কিন্তু বছরের পর বছর তারা রিয়াজ উদ্দীন বাজারের দক্ষিণ পাশে অথাৎ নিজাম হোটেলের লাইনের ৩/এ স্টেশন রোড বাগদাদ হোটেলের পিছনে রেলের জায়গা অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে ভেজাল মদের মহাল করে মাদক ব্যবসা করে আসছে।
সূত্রে জানা গেছে, তপন চক্রবর্ত্তী মারা যাওয়ার পর হারু বাবুর ‘কান্ট্রি স্প্রীড সপের” মালিকানা নিয়ে তপন চক্রবর্ত্তীর ভাতিজা অজয় চক্রবর্ত্তীর সাথে বিরোধ চলছে। এই বিরোধ শেষমেশ আদালতে উঠে। এখন মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। হিন্দু দায়ভাগা আইন অনুুযায়ী সপিন্ডকারকই মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তারাধীকার হওয়ার যোগ্য। যেহেতু তপন চক্রবর্ত্তীর ঔরশজাত কোন সন্তান নেই সেহেতু এই সম্পত্তির উত্তরাধীকার মনোনীত করার এখতিয়ার আদালতের।
অভিযোগ রয়েছে, তপন চক্রবর্ত্তী মারা যাওয়ার পর শেলী চক্রবর্ত্তী ও বিজয় চক্রবর্ত্তী ও অমিত চক্রবর্ত্তীর নেতৃত্বে রেলের জায়গায় মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চলে আসলেও রহস্যজনক ভুমিকায় রয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ৩/এ স্টেশন রোডের ‘কান্ট্রি স্প্রীড সপ’ নামের মদের মহালের লাইসেন্সটি (যার নম্বর ১৭৮-০১/১৯৬৪-৬৫) হারু বাবুর স্ত্রী মিসেস অনিতা দাশগুপ্তার নামে ইস্যু করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরবর্তীতে তাদের নিকট থেকে কৌশলে জাতীয় পার্টির ক্ষমতা ব্যবহার করে তপন চক্রবর্ত্তী মহালের লাইসেন্সটি হাতিয়ে নেই। অতপর তপন চক্রবর্ত্তী মারা গেলে এই মদের মহালটি তারা একক মালিকানা দাবি করে পরিচালনা করেন তপনের দ্বিতীয় স্ত্রী শেলী চক্রবর্ত্তী ও বিজয় এবং অমিত চক্রবর্ত্তী।
জানা গেছে, মদের মহালটির লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী যে স্থানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তারা সেই স্থানে মদের মহাল না করে রেলের জায়গায় অবৈধভাবে ভেজাল দেশি মদের ব্যবসা করে আসছে। তারা সেখানে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেছেন মাদকের সাম্রাজ্য। এতে করে সরকার প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মদের মহালটির কারণে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে স্টেশন রোড। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত মদের মহাল কেন্দ্রীক চলে না এমন কোন অপরাধ নেই। চলে মদ, জুয়া আর পতিতাবৃত্তির রমরমা বাণিজ্য। মাদকের প্রধান হাট হিসেবেও এখন এই এলাকাটি বেশ পরিচিত।
জানা যায়, ‘কান্ট্রি স্প্রীড সপ’ নামের এই অবৈধ মদের মহালের আশেপাশে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন জাতের মাদক হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। হারু বাবুর স্ত্রীর নামে ইস্যু করা এই লাইসেন্স মদের দোকানের হলেও কিন্তু তপনের দ্বিতীয় স্ত্রী শেলী ও বিজয় ও অমিত চক্রবর্ত্তীরা লাইসেন্সের আড়ালে করছেন ভেজাল দেশি মদসহ রমরমা মাদক ব্যবসা। তারা গড়ে তুলেছেন স্টেশন রোডে মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য।
জানা যায়, বরিশাল কলোনি, স্টেশন কলোনি, রেলের প্লাটফর্ম, স্টেশন রোড, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, বিআরটিসি মোড়, কভার স্টোরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় চলে তাদের রমরমা মাদক বাণিজ্য, আবার মাদক বহনের জন্য রয়েছে তাদের নিজস্ব ২০/৩০ জনের একটি বহরও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক বহনকারী জনৈক মাদক ব্যবসায়ী জানান, মদের সাথে দ্বিগুণ পানি স্পিরিট মিশেয়ে ভেজাল মদও বিক্রি করছে। তারা এই কাজটি করেন তাদের বিশ্বস্ত কর্মচারীদের মাধ্যমে। তাদের মদের ড্রামে সবসময় মেশানো থাকে নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক। ফলে, ভেজাল মদপানে বাড়ছে অসুস্থতা ও প্রাণহানি।
বিষয়টি জানার জন্য মাদক ব্যবসায়ী বিজয় চক্রবর্ত্তী শাওনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি এই বিষয়ে নিউজ না করলে খুশি হব, কারণ আমরা এখানে এমনিতে ব্যবসা করিনা, স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে রেল কর্মকর্তা, মাদকদ্রব্য কর্মকর্তা, আরএনবি, জিআরপি থানাসহ সবাইকে মোটা অংকের টাকা দিই বলে রেল কর্তৃপক্ষ আমার মদের মহাল উচ্ছেদ করছে না। আর তাদের হেডামও নেই আমাদের মদের মহালটি উচ্ছেদ করার।
বিষয়টি নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (মেট্রো) উপ পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা জানান, বিষয়টি আমি জানি না, কাগজপত্র দেখে বলতে হবে, আমি অফিসের বাহিরে আছি, তাহলে কিছু না জেনে কি ভাবে মদের লাইসেন্স ইস্যু করেন জানতে চাইলে সাথে সাথে তিনি লাইন কেটে দেন।
পূর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রেলের জায়গায় কেউ অবৈধভাবে মদের মহাল করতে পারে না, আর ভূসম্পত্তি বিভাগ কাউকে স্টেশন রোডে মদের মহাল করার অনুমতি দেয়নি, আমরা অচিরেই খোঁজ খবর নিয়ে স্টেশন রোডের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করব।



