বিশেষ প্রতিবেদক: মো. মাহবুবুল মুনির একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তার ছোট ছেলে ফাইয়াজ জামির বয়স এখন ১৬ বছর। ফাইয়াজ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন বিশেষ শিশু। মাহবুবুল মুনির তাকে বিশেষ স্কুলে দিয়েছেন। ফাইয়াজের জীবনকে স্বাভাবিক করতে সকাল থেকে রাত অবধি সস্ত্রীক যুদ্ধ করে চলেছেন মাহবুবুল মুনির। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলেও বাবা-মাকে অনেকটাই বোঝে ফাইয়াজ। তার পরও বাবার চিন্তার অন্ত নেই। এই পৃথিবীতে যখন তারা থাকবেন না তখন ফাইয়াজের কী হবে—এমন প্রশ্ন তার মতো প্রতিটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বাবা-মায়ের।

অটিজমসহ নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত এই ধরনের শিশুদের ভবিষ্যৎ কী—এ প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আজ ২ এপ্রিল ‘এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি’ প্রতিপাদ্যে দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আজ তাদের শনাক্তকরণ ও সেবাদান-সম্পর্কিত দুটি অ্যাপস উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

ফাইয়াজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা-মা বলেন, একেবারে সাড়ে তিন বছর বয়সে ফাইয়াজকে তারা স্কুলে দিয়েছেন। তাদের তিন ছেলের মধ্যে দুই জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। মেজো ছেলে আহনাফ নাফি ডাউন সিনড্রম শিশু আর ছোট ছেলে ফাইয়াজ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। তাই তারা অতিদ্রুতই জামিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। মা হিসেবে শুরুতে অনেক নেতিবাচক প্রশ্নে সম্মুখীন হয়েছেন সাহানা। কিন্তু কোনোভাবে ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে আনার চেষ্টা থেকে পিছপা হননি। এমন হয়েছে ছেলেকে শিশু পার্কে নিয়ে গেছেন সেখানে লোকে বলেছে দেখ দেখ ছেলেটা ‘পাগল’। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে শিক্ষিত ভদ্র মানুষ তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। দুই ছেলেকে দেখাশোনা, স্কুলে নেওয়া, খাওয়ানো সবই করেছেন দুজনে মিলে। এখন ডাউন সিনড্রম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাফিও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছোট ভাইয়ের অনেক দায়িত্ব নিতে শিখেছে বলে জানান সাহানা।

মাহবুবুল মুনির নিজের সন্তানদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি সুইড বাংলাদেশের মহাসচিব। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমরা না থাকলেও ওরা স্বাভাবিক জীবন পাবে। সে জন্যই কাজ করছি আমরা।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন আছে, নিউরো ডেভেলপমেন্ট এ্যাক্ট আছে। কিন্তু আইনগুলো বাস্তবায়ন ও প্রচার নেই। আইনে এমন ধারা আছে, যেখানে বাবা-মায়ের সম্পত্তির সমান ভাগ প্রতিবন্ধী সন্তানও পাবে। একজন অভিভাবক হয়ে তাদের দেখাশোনা করবে। তার কেউ না থাকলে প্রতিবেশী কেউ তার অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারবে। তিনি জানান, সুইড বাংলাদেশের বেশ কিছু অটিজম ও ডাউন সিনড্রম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেছে। তাদের সুস্থ সন্তান হয়েছে।

সুইডের সাংস্কৃতিক সচিব রাশিদা জেশমিন জানান, ৪০ জন শিশুকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা পেশায় যুক্ত করতে পেরেছেন। অটিজমসম্পন্ন শিশুরা যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে এগিয়ে আসতে পারে। তবে সবার উন্নতি একরকম হয় না। তারা মনে করেন, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার পাশাপাশি সরকার প্রতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করলে আরো বেশি উন্নতি হবে এবং টেকসই হবে। সেজন্য জেলা ভিত্তিক কাজ করতে হবে।

অটিজম আসলে কী

তরি ফাউন্ডেশনের পরিচালক মারুফা হোসেন জানান, অটিজম মস্তিষ্কের বিন্যাস ও বিকাশগত সমস্যা। এর লক্ষণ জন্মের তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর মধ্যে সামাজিক আচার আচরণ, যোগাযোগ ও ব্যবহারে সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। অটিজমসম্পন্ন শিশু বা ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বা সমস্যা স্বতন্ত্র। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি অটিজম আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে অটিজম আক্রান্তের অনুপাত ৪:১। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম ব্যক্তির মধ্যে একটা বড় পার্থক্য হলো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর বিকাশ প্রতিটি স্তরে সমান গতিতে চলে, কিন্তু অটিজমের বিকাশ সব স্তরে একইরকম হয় না। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি একটি বিশেষ দিকে বাড়ে। এরা ছবি আঁকায় ভলো করে। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে এরাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তার স্কুলের অনেক শিশুর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের হিসাব মতে, মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে ৪ লাখ ৪৬ হাজার অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে। তবে বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হার মতে, প্রতি ১০০ জনে একজন নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার জনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তাই এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। বর্তমান সরকার অটিজম তথা সকল প্রকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে নানারকম কাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ অটিজম নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন।

বিশেষ প্রতিবেদক: মো. মাহবুবুল মুনির একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তার ছোট ছেলে ফাইয়াজ জামির বয়স এখন ১৬ বছর। ফাইয়াজ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন বিশেষ শিশু। মাহবুবুল মুনির তাকে বিশেষ স্কুলে দিয়েছেন। ফাইয়াজের জীবনকে স্বাভাবিক করতে সকাল থেকে রাত অবধি সস্ত্রীক যুদ্ধ করে চলেছেন মাহবুবুল মুনির। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলেও বাবা-মাকে অনেকটাই বোঝে ফাইয়াজ। তার পরও বাবার চিন্তার অন্ত নেই। এই পৃথিবীতে যখন তারা থাকবেন না তখন ফাইয়াজের কী হবে—এমন প্রশ্ন তার মতো প্রতিটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বাবা-মায়ের।

অটিজমসহ নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত এই ধরনের শিশুদের ভবিষ্যৎ কী—এ প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আজ ২ এপ্রিল ‘এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি’ প্রতিপাদ্যে দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আজ তাদের শনাক্তকরণ ও সেবাদান-সম্পর্কিত দুটি অ্যাপস উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

ফাইয়াজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা-মা বলেন, একেবারে সাড়ে তিন বছর বয়সে ফাইয়াজকে তারা স্কুলে দিয়েছেন। তাদের তিন ছেলের মধ্যে দুই জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। মেজো ছেলে আহনাফ নাফি ডাউন সিনড্রম শিশু আর ছোট ছেলে ফাইয়াজ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। তাই তারা অতিদ্রুতই জামিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। মা হিসেবে শুরুতে অনেক নেতিবাচক প্রশ্নে সম্মুখীন হয়েছেন সাহানা। কিন্তু কোনোভাবে ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে আনার চেষ্টা থেকে পিছপা হননি। এমন হয়েছে ছেলেকে শিশু পার্কে নিয়ে গেছেন সেখানে লোকে বলেছে দেখ দেখ ছেলেটা ‘পাগল’। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে শিক্ষিত ভদ্র মানুষ তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। দুই ছেলেকে দেখাশোনা, স্কুলে নেওয়া, খাওয়ানো সবই করেছেন দুজনে মিলে। এখন ডাউন সিনড্রম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাফিও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছোট ভাইয়ের অনেক দায়িত্ব নিতে শিখেছে বলে জানান সাহানা।

মাহবুবুল মুনির নিজের সন্তানদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি সুইড বাংলাদেশের মহাসচিব। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমরা না থাকলেও ওরা স্বাভাবিক জীবন পাবে। সে জন্যই কাজ করছি আমরা।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন আছে, নিউরো ডেভেলপমেন্ট এ্যাক্ট আছে। কিন্তু আইনগুলো বাস্তবায়ন ও প্রচার নেই। আইনে এমন ধারা আছে, যেখানে বাবা-মায়ের সম্পত্তির সমান ভাগ প্রতিবন্ধী সন্তানও পাবে। একজন অভিভাবক হয়ে তাদের দেখাশোনা করবে। তার কেউ না থাকলে প্রতিবেশী কেউ তার অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারবে। তিনি জানান, সুইড বাংলাদেশের বেশ কিছু অটিজম ও ডাউন সিনড্রম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেছে। তাদের সুস্থ সন্তান হয়েছে।

সুইডের সাংস্কৃতিক সচিব রাশিদা জেশমিন জানান, ৪০ জন শিশুকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা পেশায় যুক্ত করতে পেরেছেন। অটিজমসম্পন্ন শিশুরা যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে এগিয়ে আসতে পারে। তবে সবার উন্নতি একরকম হয় না। তারা মনে করেন, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার পাশাপাশি সরকার প্রতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করলে আরো বেশি উন্নতি হবে এবং টেকসই হবে। সেজন্য জেলা ভিত্তিক কাজ করতে হবে।

অটিজম আসলে কী

তরি ফাউন্ডেশনের পরিচালক মারুফা হোসেন জানান, অটিজম মস্তিষ্কের বিন্যাস ও বিকাশগত সমস্যা। এর লক্ষণ জন্মের তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর মধ্যে সামাজিক আচার আচরণ, যোগাযোগ ও ব্যবহারে সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। অটিজমসম্পন্ন শিশু বা ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বা সমস্যা স্বতন্ত্র। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি অটিজম আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে অটিজম আক্রান্তের অনুপাত ৪:১। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম ব্যক্তির মধ্যে একটা বড় পার্থক্য হলো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর বিকাশ প্রতিটি স্তরে সমান গতিতে চলে, কিন্তু অটিজমের বিকাশ সব স্তরে একইরকম হয় না। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি একটি বিশেষ দিকে বাড়ে। এরা ছবি আঁকায় ভলো করে। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে এরাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তার স্কুলের অনেক শিশুর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের হিসাব মতে, মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে ৪ লাখ ৪৬ হাজার অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে। তবে বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হার মতে, প্রতি ১০০ জনে একজন নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার জনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তাই এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। বর্তমান সরকার অটিজম তথা সকল প্রকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে নানারকম কাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ অটিজম নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন।