দি ক্রাইম ডেস্ক: শিল্প ও বাণিজ্যনগরী নওয়াপাড়ায় নদীবন্দরে নোঙরকৃত বার্জ-কার্গো জাহাজে মাদকসেবী ও মাদকবিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রায়ই জাহাজগুলোতে ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে। এতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে জাহাজের নাবিক ও শ্রমিকরা।

জানা গেছে, ভারত, চীন, ব্রাজিল, কানাডা, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বড় জাহাজে বিভিন্ন ধরনের সার, খাদ্যশস্য, কয়লা, পাথর, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য প্রথমে চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দরে আসে। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা কার্গোজাহাজে করে তা নওয়াপাড়া নৌবন্দরে আনেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে সাড়ে ৬ শতাধিক পণ্যবোঝাই এ ধরনের জাহাজ নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে অবস্থান করে। সেখান থেকে নামানোর পর এসব পণ্য প্রতিদিন স্থলপথে ট্রাকে করে এবং নদীপথে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে দেশের উত্তর, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে পাঠানো হয়। ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি মোকাম এই নওয়াপাড়া।

এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের সময় জানা যায়, এখানে অবস্থান নেওয়া জাহাজে মাদকসেবী ও বিক্রেতারা জাহাজের স্টাফদের ভয় দেখিয়ে জাহাজের কেবিন দখল করে মাদকসেবন ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। জাহাজশ্রমিকরা বাধা দিলে তাদের ভয়ভীতি দেখানোসহ মারধর করা হয়। জোরপূর্বক টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে। আবার সুযোগ বুঝে তারা জাহাজ স্টাফদের মোবাইল ফোন ও টাকা চুরি করে।

গত ২২ অক্টোবর নৌবন্দরের পরশঘাটে নোঙর করা এমভি দাওয়াত জান্নাত-৯ নামক জাহাজে উপজেলার মশরহাটি গ্রামের মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল যুবক মাদকসেবনের জন্য জোর করে উঠে জাহাজটির লোকজনকে কেবিন খুলে দিতে বলে। রাজী না হওয়ায় জাহাজের স্টাফ লিমন হোসেন ও সৈয়দ মো. সেলিমকে মারধর করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। বিষয়টি নৌপুলিশকে মোবাইল ফোনে জানালে ঐ সময় নৌপুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও জাহাজের মালিক হাসান মুন্সির নির্দেশে ঘাটের লেবার সরদার মনিরুজ্জামান মানিক বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এমভি সুরমা-২ এর মাস্টার মো. এরশাদ আলী বলেন, ‘মাসখানেক আগে মাদকসেবীরা জাহাজে উঠে আমাদের জাহাজের ঘুন্টি চুরি করে নিয়ে গেছে।’ এমভি কুইন অব দোহারের ড্রাইভার মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে সন্ধ্যায় মাদকসেবীরা জোরপূর্বক আমাদের জাহাজে উঠে মাদকসেবনের এক পর্যায়ে রান্নার রুমে থাকা খাবারের মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়। রাতে খাবার খাওয়ার পর আমরা অচেতন হয়ে পড়ি। ঠিক ঐসময় বাইরে থাকা আমাদের স্টাফের একজন জাহাজে ফিরে আসায় মাদকসেবীরা কিছু নিতে পারেনি। পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা নওয়াপাড়ায় জাহাজ আনব না।’

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া ও খুলনা অঞ্চলের সভাপতি হাসান মুন্সি বলেন, ‘জাহাজে মাদকসেবীদের আনাগোনা সবসময় ছিল, তবে সম্প্রতি জাহাজে তাদের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। গত ২২ তারিখে পরশঘাটে আমার জাহাজে মারধরের ঘটনায় প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ব্যবস্থা না নিলে আমরা মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য ও অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব। প্রয়োজনে নওয়াপাড়া নৌবন্দরে মালামাল বহন বন্ধ করে দেব।’

নওয়াপাড়া নৌবন্দরের উপপরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ জানান, নদীতে থাকা জাহাজের মাদকসেবীদের আড্ডা, শ্রমিকদেরকে ভয়ভীতি দেখানো, তাদের ওপর হামলা, চুরি ও ছিনতাইয়ের ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে বারবার বলেছি। নৌযান শ্রমিকদের সঙ্গে মিটিং করে তাদেরকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ লাইটার জাহাজ নওয়াপাড়া নৌবন্দরে না এনে এখন খুলনা এলাকায় নোঙর করে মাল খালাস করছে।

জানতে চাইলে নওয়াপাড়া নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই ইয়াকুব হোসেন নৌপুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যে কোনো ধরনের অভিযোগ পেলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কয়েকদিন আগে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দি ক্রাইম ডেস্ক: শিল্প ও বাণিজ্যনগরী নওয়াপাড়ায় নদীবন্দরে নোঙরকৃত বার্জ-কার্গো জাহাজে মাদকসেবী ও মাদকবিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রায়ই জাহাজগুলোতে ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে। এতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে জাহাজের নাবিক ও শ্রমিকরা।

জানা গেছে, ভারত, চীন, ব্রাজিল, কানাডা, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বড় জাহাজে বিভিন্ন ধরনের সার, খাদ্যশস্য, কয়লা, পাথর, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য প্রথমে চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দরে আসে। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা কার্গোজাহাজে করে তা নওয়াপাড়া নৌবন্দরে আনেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে সাড়ে ৬ শতাধিক পণ্যবোঝাই এ ধরনের জাহাজ নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে অবস্থান করে। সেখান থেকে নামানোর পর এসব পণ্য প্রতিদিন স্থলপথে ট্রাকে করে এবং নদীপথে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে দেশের উত্তর, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে পাঠানো হয়। ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি মোকাম এই নওয়াপাড়া।

এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের সময় জানা যায়, এখানে অবস্থান নেওয়া জাহাজে মাদকসেবী ও বিক্রেতারা জাহাজের স্টাফদের ভয় দেখিয়ে জাহাজের কেবিন দখল করে মাদকসেবন ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। জাহাজশ্রমিকরা বাধা দিলে তাদের ভয়ভীতি দেখানোসহ মারধর করা হয়। জোরপূর্বক টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে। আবার সুযোগ বুঝে তারা জাহাজ স্টাফদের মোবাইল ফোন ও টাকা চুরি করে।

গত ২২ অক্টোবর নৌবন্দরের পরশঘাটে নোঙর করা এমভি দাওয়াত জান্নাত-৯ নামক জাহাজে উপজেলার মশরহাটি গ্রামের মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল যুবক মাদকসেবনের জন্য জোর করে উঠে জাহাজটির লোকজনকে কেবিন খুলে দিতে বলে। রাজী না হওয়ায় জাহাজের স্টাফ লিমন হোসেন ও সৈয়দ মো. সেলিমকে মারধর করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। বিষয়টি নৌপুলিশকে মোবাইল ফোনে জানালে ঐ সময় নৌপুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও জাহাজের মালিক হাসান মুন্সির নির্দেশে ঘাটের লেবার সরদার মনিরুজ্জামান মানিক বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এমভি সুরমা-২ এর মাস্টার মো. এরশাদ আলী বলেন, ‘মাসখানেক আগে মাদকসেবীরা জাহাজে উঠে আমাদের জাহাজের ঘুন্টি চুরি করে নিয়ে গেছে।’ এমভি কুইন অব দোহারের ড্রাইভার মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে সন্ধ্যায় মাদকসেবীরা জোরপূর্বক আমাদের জাহাজে উঠে মাদকসেবনের এক পর্যায়ে রান্নার রুমে থাকা খাবারের মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়। রাতে খাবার খাওয়ার পর আমরা অচেতন হয়ে পড়ি। ঠিক ঐসময় বাইরে থাকা আমাদের স্টাফের একজন জাহাজে ফিরে আসায় মাদকসেবীরা কিছু নিতে পারেনি। পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা নওয়াপাড়ায় জাহাজ আনব না।’

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া ও খুলনা অঞ্চলের সভাপতি হাসান মুন্সি বলেন, ‘জাহাজে মাদকসেবীদের আনাগোনা সবসময় ছিল, তবে সম্প্রতি জাহাজে তাদের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। গত ২২ তারিখে পরশঘাটে আমার জাহাজে মারধরের ঘটনায় প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ব্যবস্থা না নিলে আমরা মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য ও অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব। প্রয়োজনে নওয়াপাড়া নৌবন্দরে মালামাল বহন বন্ধ করে দেব।’

নওয়াপাড়া নৌবন্দরের উপপরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ জানান, নদীতে থাকা জাহাজের মাদকসেবীদের আড্ডা, শ্রমিকদেরকে ভয়ভীতি দেখানো, তাদের ওপর হামলা, চুরি ও ছিনতাইয়ের ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে বারবার বলেছি। নৌযান শ্রমিকদের সঙ্গে মিটিং করে তাদেরকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ লাইটার জাহাজ নওয়াপাড়া নৌবন্দরে না এনে এখন খুলনা এলাকায় নোঙর করে মাল খালাস করছে।

জানতে চাইলে নওয়াপাড়া নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই ইয়াকুব হোসেন নৌপুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যে কোনো ধরনের অভিযোগ পেলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কয়েকদিন আগে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’