নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামির আমির, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরীকে চট্টগ্রাম ১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার(১৩ জুন) সকালে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাটস্থ একটি রেস্টুরেন্টের হল রুমে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনের প্রার্থী ঘোষণা ও সর্বস্তরের দায়িত্বশীল সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এ প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলা) মোট ২৩টি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করল জামায়াত। চলতি বছরের ২৯ মে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জামায়াত ইসলামির সংসদ সদস্য প্রার্থীদের পরিচিতি সভায়ও এ অঞ্চলের অন্যান্য আসনের দলীয় প্রার্থীদের সাথে শাহজাহান চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুহাম্মদ শাহজাহান। তবে এর আগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শুধু চট্টগ্রাম-১৫ আসন ছাড়া অন্যান্য আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিল জামায়াত।
দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণা ও দায়িত্বশীল সমাবেশে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, জন আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে জামায়াতে ইসলামি যে কোনো দলের সাথে ঐক্যে যেতে রাজি আছেন। নির্বাচন সামনে আসলে রাজনীতিতে অনেক মেরুকরণ হয়। বিভিন্ন দল ও অ্যালায়েন্স ইতিমধ্যে সমঝোতার রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা চাই ফ্যাসিবাদের জন্ম আর না হোক। দেশ প্রেম ও গণতন্ত্রের জন্য ইসলামি দল ও অনেক ছোট-বড় দলের সাথে আামাদের অভ্যন্তরীণ আলাপ ও মতবিনিময় চলছে। আশা করি ঐক্য হয়ে যাবে। আমরা (জামায়াত) ৩০০ আসনে আমাদের প্রার্থী প্রস্তুত করেছি। কিছু না ছাড়লে তো প্রেম হবে না। প্রেম কি একতরফা হয় ? দু’তরফা লাগে। তাকে কিছু আমাকে দিতে হবে, সেও আমাকে কিছু দিবে। আর যে আসনগুলো এখন ঘোষণা করা হচ্ছে, পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা জামায়াত আমির বলে দিয়েছেন-আপনাদের যে আসন দেওয়া হলো তার অর্থ এটা না, এ আসন আপনার। মনে রাখবেন এটা জামায়াতের আসন। জামায়াত যখন বলবে তখন ছেড়ে দিতে রাজি। প্রয়োজনে আমির সাহেবও তাঁর আসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন বৈঠকে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, অতীতে দিল্লিই ঠিক করে দিত কে ইলেকশনে যাবে, কে ইলেকশনে হবে। দিল্লির নির্দেশেই দেশ চলত। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমন শক্তিশালী সরকার ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে পার্লামেন্ট গঠন করা হবে, সে পার্লামেন্ট দিল্লির তাবেদার মুক্ত হয়ে মাথা উঁচু করে দুনিয়ার বুকে স্বাধীন দেশে পরিণত হবে। জামায়াতে ইসলামী জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেশ পরিচালনা করতে চায়। এজন্য আগামীতে দেশের আদর্শ ও মূল্যবোধকে যাতে কেউ ধ্বংস করতে না পারে সেজন্য দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক ইসলামী রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে সমঝোতা করে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। তাই ঐক্যের বারতা নিয়ে বাংলাদেশ মুসলিম উম্মার ঐক্য গড়ে তুলে একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামের আমির জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জামায়াতে ইসলামির মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দলের দুঃসময়ে যারা আন্দোলন সংগ্রাম ও লড়াইয়ে থেকেছে তাদের আমি বাদ দিতে পারি না। ৪৩ বছর ধরে রাজনীতি করছি। ন্যায় ইনসাফ, বৈষম্যহীন, মানবিক মূল্যবোধের রাষ্ট্র কায়েমের জন্য আমি নিজেকে উজার করে দিব। তিনি বলেন, আমি একজন সহজ- সরল মানুষ। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও শহীদ ভাইদের স্বার্থে এলাকার জনগণকে বুকে নিয়ে থাকার জন্য চেষ্টা করেছি। তবে কারো দুঃখ বা প্রশ্ন থাকলে আমাকে মাফ করে দিবেন। আগামীতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন শাহাজাহান চৌধুরী।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামির আমির আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি বদরুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিমের সদস্য জাফর সাদেক।
বক্তব্য দেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন মুহাম্মদ নোমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইসহাক, সাতকানিয়া উপজেলা আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন, পৌরসভা আমির হামিদ উদ্দিন, লোহাগাড়া উপজেলা আমির আসাদ উল্লাহ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবিরের সভাপতি আরমান হোসাইন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাকারিয়া, মুহাম্মদ আবু নাছের, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেন, জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য আবুল ফয়েজ ও কামাল উদ্দিন প্রমুখ।




