নিজস্ব প্রতিবেদক: দোল পূর্ণিমা এর আরেক নাম দোলযাত্রা। একটি সনাতন হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব। বহির্বঙ্গে পালিত হোলি উৎসবটির সঙ্গে দোলযাত্রা উৎসবটি সম্পর্কযুক্ত। এই উৎসবের অপর নাম বসন্ত উৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোল যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে ভগবান রাঁধা-কৃষ্ণ এই দিন পুজিত হয়। বাঙালি হিন্দুদের দোলযাত্রাটি রাঁধা কৃষ্ণকে ঘিরেই, তাকে দোলায় বসিয়ে ওই দিনে পূজা পার্বণ করা হয়। দোল পূর্ণিমার মূল আকর্ষণ আবির। এই দিনটি আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। দোলের পরের দিন হোলি উৎসব। হোলি হল রঙের উৎসব।
সম্প্রতি নগরীর জামালখান ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও হিন্দু ধর্মালম্বী শৈবাল দাশ সুমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে সনাতন ধর্মালম্বীদের দোলযাত্রার অনুষ্টানের সময় পিছিয়ে দেন। ভিডিও তৎক্ষণাৎ ভাইরাল হয়। কাউন্সিলর কতৃক এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারনে স্থানীয় সনাতনী হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখ বিরাজ করছে। এতে সনাতনী ধর্মালম্বীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
মূলত ইসলাম ধর্মালম্বীদের পবিত্র সবে বরাতের সময় একই দিন হওয়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বাধীন বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রামের সকল নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে আগামি ১৮ মার্চ রোজ শুক্রবার চট্টগ্রামের বাওয়া স্কুলের মাঠে পার্থ সারথী ছাত্র সংঘের উদ্যোগে যে বিশাল দোল উৎসবটির আয়োজন করতে যাচ্ছিলাম, আপনাদের সকলের কথা চিন্তা করে, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের যে মহিমান্বিত সবে বরাতের রাতের কথা চিন্তা করে, সেই দোল উৎসবটি আগামি ১৯ মার্চ রোজ শনিবার আয়োজন করতে যাচ্ছি। আমরা এই বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মিলে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে যেই যার মত ধর্মীয় অনুষ্টানগুলো পালন করবো। এটিই হোক নতুন প্রজন্মের কনসেপ্ট। এটিই হোক আমাদের ৭১ এর স্বাধীনতার যে চিন্তা, যে চেতনার যে মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে ১৯ মার্চ রোজ শনিবার আয়োজন করতে যাচ্ছি। আমি, আপনি, আপনারা সবাই মিলে অনুষ্টানটি মুখরিত করে তুলবো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু! ‘
কাউন্সিলরের এমন বক্তব্যের জের ধরে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র’ ব্যাখা দিয়ে একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে মহুয়া ভট্টাচার্য প্রশ্ন ছুঁড়েন। ভোটারদের মন পেতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঐ বক্তব্যের সাথে তিনি দ্বিমতপোষণ করে আপত্তি জানান। আপত্তিতে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মানে হোলো এক ঘরের দুই কোণে দু’জন মানুষের একজন নামাজ পড়তেছেন, অন্যজন পূজা করে। এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সংজ্ঞা আমরা নতুন করে শিখতেছি।’
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, যা পাঠকের সুবিধার জন্য হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
‘কাউন্সিলরের জামালখান ২১ নং ওয়ার্ডের মাননীয় কাউন্সিলর মহোদয় শ্রীমান শৈবাল দাশ সুমন ঘোষণা দিয়েছেন যেহেতু ১৮ তারিখ হোলি উৎসব এবং শবে বরাত দুটোই, তাই ” সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে ” হোলি উৎসবটি ১৮ তারিখের পরিবর্তে ১৯ তারিখে করা হবে। হোলি উৎসবের ইভেন্টটি একটি তরুণ সংগঠন থেকে আয়োজন করা হয়েছিলো বাংলাদেশ মহিলা সমিতি ( বাওয়া) স্কুলের মাঠে।
হোলি উৎসব এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব না – রঙ মারামারি। এরচেয়ে শবে বরাতের ভাবগাম্ভীর্য অনেক গুণ বেশি এটা ঠিক। তাই এই রঙ মারামারি উৎসব পিছিয়ে না দিয়ে বন্ধ করে দিলেও কিছু আসে যায় না। শুধু রঙ মারামারি উৎসব কেন, হিন্দু ধর্মের যেকোনো উৎসবই যদি পালন বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাতেও খু বেশি সমস্যা হবে না, কারণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। বাকি ধর্মগুলা এমনে দুধভাত।
রঙ মারামারি পিছিয়ে নেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু রঙমারামারি পেছানোটাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ট্যাগ দেওয়াতে এই অধমের, শৈবাল দাশ সুমনের ওয়ার্ডের বিগত বছরের একজন ভোটার হিসেবে আমার আপত্তি আছে। আমি তো বুঝতাম, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মানে হোলো এক ঘরের দুই কোণে দুজন মানুষের একজন নামাজ পড়তেছেন, অন্যজন পূজা করে। এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সংজ্ঞা নতুন করে শিখতেছি। অবশ্য শিখতে তো হবেই! তারাই কন্যার বাপ! তারাই দুলার বাপ! তারা যা শিখাবেন তাই সই।
কিন্তু যে ভোটের রাজনীতিকে জিইয়ে রাখতে এত সম্প্রীতি, যে ভোটারদের মন পেতে এত আয়োজন তারাই একদিন শৈবাল দাশের বিপরীতে কোনো শক্ত মুসলমান প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করাতে পারলে, শৈবাল বাবুকে মালাউনের ছেলে বলে চেয়ার থেকে নামিয়ে দেবেন না তো!’
ভাইরালকৃত এই ভিডিও সনাতনী হিন্দু ধর্মালম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত করবে বলে ধারনা সনাতনী বিশ্লেষকদের। এতে দুঃখপ্রকাশ করে নিন্দা জানিয়ে দীনেশ চন্দ্র মজুমদার নামক একজন বলেন, ‘এই শৈবালেরাই যুগে যুগে হিন্দু ঘাতক যোগেন মন্ডল সেজে ঘরে সিঁদ কেটেছে । শৈবাল দাসের মুখে থু ।’
সঞ্জয় সিকদার বলেন, ‘ভবিষ্যতে হয়তো সম্প্রীতি রক্ষার্থে এমন বহু পূজা পর্বন এইরকম অভিভাবকদের দেওয়া দিনক্ষণে ও গণ্ডিতে পালন করতে হবে। ‘




