মিজবাউল হক, চকরিয়া : আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কক্সবাজার-১ আসনে (চকরিয়া-পেকুয়া) নির্বাচন সফল করতে উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। স্ব-স্ব ভোট কেন্দ্রে পৌছে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পরিমান আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। পাশাপাশি রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
একাধিক নতুন ভোটারদের ধারণা, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নতুন ও তরুণ ভোটাররাই বড় একটা ফাক্টর হবে। তাদের ভোটেই জয় পরাজয় নির্ভর করতে পারে। নতুন ভোটারদের প্রত্যাশা রয়েছে কর্মসংস্থান ও বিশ^বিদ্যালয় তৈরির প্রতি।’ তারা সবাই নিজ নিজ আসনের কেন্দে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’
এদিকে সব প্রার্থীরাও শেষ করেছে প্রচার প্রচারণা। তারাও ব্যস্থ সময় করছেন নিজস্ব এজেন্ট ও কর্মী নিয়োগ নিয়ে। শেষ মূহুর্তে যোগাযোগ করছেন ভোট কেন্দ্রের সম্পৃক্ত কর্মীদের সাথে। ঝালাই করে নিচ্ছেন ছোট ছোট সমস্যা গুলো। এ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন ৭জন। নির্বাচনে ৭জন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে লড়াই হবে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের মধ্যে। দু’জনেরই থার্গেট প্রথম ও নতুন ভোটার। এবারে নির্বাচনে নতুন ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী বীর মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে বেচে নিবে। অনেকেই রণাঙ্গণের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রার্থী পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের প্রথম ভোটটি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেবো।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে নতুন ভোটারদের তালিকা। তাই নতুন ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বসছেন চায়ের দোকানে। চায়ের আড্ডার ছলে উঠে আসছে তাদের মনের আশা। তরুণদের ভাষ্য, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন তারা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভয়ভীতি উপেক্ষা তারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে যারা কাজ করবে ও পাশাপাশি এলাকায় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এমন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেয়ার কথাও ভাবছেন নতুন ভোটাররা। ভোটে অংশ নেয়া দলগুলোর নজরও তাই এই তরুণ ভোটারদের দিকে।
নতুন ভোটার ছাত্রনেতা আকিত হোসেন সজীব বলেন, প্রথমবার ভোটার হয়েছি। এক ধরনের উচ্ছ্াস কাজ করছে। চকরিয়া-পেকুয়ার উন্নয়ন নিয়ে যে কাজ করবে তাকেই ভোট দেব। আমরা চাই নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।’
আরেক ভোটার ছাত্রনেতা আরহান মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ‘আমার প্রথম ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ চাই। আমি চকরিয়া উপজেলায় একটি বিশ^বিদ্যালয় চাই। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চাই। জীবনের প্রথম ভোটটা আমি মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তিকেই দিতে চাই।’
নতুন ভোটার স্কুল শিক্ষিকা ফাহমিদা খানম মিতু বলেন, আমরা পরিবর্তন চাই। প্রথম ভোটটি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে দেবো। চকরিয়া-পেকুয়া সমানভাগে উন্নয়ন হোক। যাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন করবে, বিপদ-আপদে পাশে থাকবে, নতুন ভোটার হিসেবে তাকেই ভোটটা দেব।’
শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলো কক্সবাজার-১ আসনটি। এই আসনে চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও পেকুয়ায় ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। এ আসনে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ২২ ভোট রয়েছে। চকরিয়ায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ২৫২জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৮ হাজার, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৮জন। চকরিয়ায় মোট ভোট ১১৪টি। পেকুয়ায় ১ লাখ ৩৩ হাজার, পুরুষ ভোটার ৭২ হাজার ১১৪ জন, মহিলা ৬০ হাজার ৮৭৮জন। পেকুয়ায় ৪৪টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এ দুই উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার নতুন ভোটার রয়েছে।
দুই প্রার্থীই জমজমাট প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে। আসনেই ভোটের উৎসবে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে নতুন ও তরুণ ভোটাররা। এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।
স্বতন্ত্র হিসেবে ৭জন প্রার্থী ভোটের লড়াইতে নামলেও মাত্র দুইজনকে ঘিরেই আলোচনা সীমাবন্ধ ছিলো ভোটের মাঠ। সেই দুইজন হলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক (হাতঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম এমপি (ট্রাক)।
তারা দু’জন ছাড়া অল্প বিস্তর পোস্টার লাগানো, প্রচারণা চালায় জাতীয় পার্টির হোসনে আরা (লাঙ্গল) ও ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি)।
এছাড়া ইসলামী ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী কমরউদ্দিন (কলারছড়ি) ও এমপি পুত্র তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল)। এ চারজন কোন ধরণের প্রচার প্রচারণা চালায়নি বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন নিজের জন্য ভোট না চেয়ে পিতা জাফর আলমের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন।




