বিশেষ প্রতিবেদক: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি যে মুহূর্তে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে, ঠিক তখনই বিএনপির পুরোনো ও নতুন মিত্র মিলিয়ে মোট সাতটি দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে পৃথক রাজনৈতিক মোর্চা তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাড়িতে রবিবার (২৯ মে) সাতটি দলের নেতারা বৈঠক করে ‘স্বল্পতম সময়ে’ গণতন্ত্র মঞ্চের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিএনপির তিনটি পুরোনো এবং চারটি নতুন মিত্র মিলে সাতটি সংগঠন এই ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গড়ে তুলছে। যদিও বিএনপি বলছে, সরকারবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শেষের দিকে। মিত্রদের কেউ কেউ পৃথক মোর্চা গড়লেও কেউ-ই বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও মনে করছে বিএনপি। এছাড়া বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপি মিত্র এই সাতটি দলের সঙ্গেও পর্যায়ক্রমে বৈঠক করবে, ইতিমধ্যে কারও কারও সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে।
বিএনপির যেই সাতটি মিত্র সংগঠন ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো হলো—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি রাজনৈতিক দল এবং শেষের দুটি রাজনীতি-মিশ্রিত সংগঠন। আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য হচ্ছে বিএনপিকে মূল শক্তি ধরে গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বর্তমানে বিলুপ্ত। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ড. কামাল হোসেন সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেই বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অকার্যকর, এটি আর নেই’।
আ স ম রবের সভাপতিত্বে গতকাল তার বাড়িতে অনুষ্ঠিত সাত দলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য বহ্নি শিখা জামালী ও আকবর খান, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার ও কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
সাত দলের এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে এই মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করবে। সভায় একই সঙ্গে বর্তমান ‘ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন’ মোকাবিলায় গণতন্ত্র মঞ্চের রাজনৈতিক ভিত্তি ও কর্মসূচিসমূহ চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
এদিকে, নতুন এই মঞ্চের অন্যতম উদোক্তা দুটি দল গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এতদিন বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও শরিক ছিল। দল দুটি পৃথক রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার উদ্যোগ নেওয়ায় গত বুধবার বাম জোটের এক বৈঠকে জোটে তাদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জানান, পৃথক রাজনৈতিক মোর্চা গড়ে তুলছেন বিধায় তারা নিজেরাই তাদের সদস্যপদ স্থগিত রাখতে বাম জোটকে অনুরোধ জানিয়েছেন।




