তবে এরকম কমিটি গঠিত হলে সেক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, পদ বাণিজ্য বা পকেট কমিটি করা হয়েছে বলে নানা ধরনের সমালোচনা উঠে। আর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্র যদি এসব বিষয় না ভাবে তাহলে স্বেচ্ছাসেবকলীগের মত যুবলীগের কমিটি নিয়েও সমালোচনা উঠতে পারে বলে বিভিন্ন মহলের অভিমত।
এমন অবস্থায় কমিটি গঠনের পরিকল্পনায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়ার এই উদ্যোগে রাজনৈতিক বোদ্ধারা এমন আলোচনা তুলেছেন যে, নগর যুবলীগের কমিটি কোন পদ্ধতিতে হবে? গণতান্ত্রিক সম্মেলন ব্যবস্থার মাধ্যমে নাকি মনোনয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে হবে যুবলীগের নতুন কমিটি?
সম্মেলন করতে হলে করণীয়
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি যদি সম্মেলনের মাধ্যমে করতে হয় তাহলে এর অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে কাউন্সিলর ভোট। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের রয়েছে বিশাল দুর্বলতা। সংগঠনটির ৪৩ টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে কমিটি আছে মাত্র ৫ টিতে। বাকি ৩৮ টি ওয়ার্ডে কমিটিই নেই। সেই ৩০-৩৫ বছর আগের পুরোনো কমিটিই এখনো কাগজে বেঁচে আছে মাত্র। আবার সম্মেলনের জন্য নিয়মানুযায়ী ৬৪৫ জন কাউন্সিলর লাগবে। অর্থাৎ এক ওয়ার্ড থেকে ন্যূনতম ১৫ জন কাউন্সিলর হতে হবে। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক নিয়ম মানলে নগর যুবলীগের কাউন্সিলর হতে পারে মাত্র ৭৫ জন। কারণ কমিটি থাকা ঐ ৫টি ওয়ার্ড থেকেই কাউন্সিলর নির্বাচন করা যাবে। এখন সম্মেলন যদি গণতান্ত্রিক বা সাংগঠনিক নিয়ম মেনে করতে হয় তাহলে কাউন্সিলদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সম্মেলন করতে হবে।
তবে প্রশ্ন ওঠেছে, এই সম্মেলন কি স্বেচ্ছাসেবকলীগের মত লোক দেখানো সম্মেলন হবে? নাকি সময় নিয়ে সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী আগে ওয়ার্ড কমিটি, তারপর সেখান থেকে কাউন্সিলর নির্বাচন এবং সর্বশেষ নগর সম্মেলন অনুষ্ঠান?
কেন্দ্রের মনোনয়ন যদি হয়
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় যুবলীগ যদি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগকে অনুসরণ করে তাহলে এই কমিটি নিয়েও উঠতে পারে সমালোচনার ঝড়। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড কমিটি, তৃণমূল সম্মেলন বা কাউন্সিলর অধিবেশন বাদ দিয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের মতো লোক দেখানো সম্মেলন বা পছন্দসই কমিটি ঘোষণা করে দিতে পারে কেন্দ্র।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১৯৮৭’র ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৩’র নভেম্বর সভাপতির দায়িত্ব পালন করা নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘আমি এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হাসান আমাদের কমিটি থাকা অবস্থায় ৪১টি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর সৈয়দ মাহমুদুল হককে আহবায়ক করে আহবায়ক কমিটি হয়েছে। এরপর চন্দন ধর-মসিউর রহমানকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি হয়েছে। এরপর মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহবায়ক করে কমিটি করা হয়েছে।’
কিন্তু কেউই ওয়ার্ডে সম্মেলন করে কমিটি করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন না হওয়ায় তৈরি হয়েছে কাউন্সিলর শূণ্যতা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশাসহ নানামুখী অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে নগর যুবলীগ। কিন্তু সংগঠনের সম্মেলন যদি করতে হয় তাহলে কাউন্সিলর অধিবেশনের মাধ্যমেই করতে হবে। তা না হলে তো প্রশ্ন উঠবেই। সুতরাং চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে সবকিছু বিবেচনায় রেখে কাজ করতে হবে বলে নোমান আল মাহমুদ জানান।
এদিকে, মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটির জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। আগামী ২ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেয়া হবে। এই খবরে যুবলীগের কমিটিতে থাকার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে অনেকেই জীবনবৃত্তান্ত পাঠাচ্ছেন। এদের মধ্যে বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন, দিদারুল আলম দিদার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান ফেরদৌস, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির দিদারুল আলম দিদার, আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আনোয়ার, এম আর আজিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু, যুবলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু, কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন, সুমন দেবনাথ, ওয়াহিদুল আলম শিমুল, সাহেদ হোসেন টিটু, সাইফুল আলম লিমন, নুরুল আজিম রণিসহ অনেক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এনামুল হক দানু ও খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়। ১৯৯৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ঐ কমিটি দায়িত্ব পালন করেছিল। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের জুলাই মাসে নগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়। এরপর ২০১৩ সালে ১০১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।