সুকান্ত বিকাশ ধর, সাতকানিয়া: সাতকানিয়ায় বন্ধক দেওয়া স্বর্ণ এনে না দেওয়ায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অটোরিক্সা চালক ছেলের ছুরিকাঘাতে আহমেদ হোসেন (৫২) নামে এক কৃষক বাবা খুন হয়েছেন। রোববার (০৯ নভেম্বর) রাতে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর কাঞ্চনা নয়াপাড়া ডাক্তার ইউছুফ এর বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আহমেদ হোসেন উল্লিখিত এলাকার জলিল বক্সের ছেলে।
এদিকে, ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে (রোববার) রাতে পালিয়ে যাওয়া ঘাতক সন্তান রিয়াদ হোসেন (২২) কে সাতকানিয়ার পার্শ্ববর্তী বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া চৌমুহনী বাজার থেকে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে ।
স্থানীয়, পুলিশ ও কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু তৈয়ব জানান, বিয়ের পর থেকে ছেলে রিয়াদের সাথে পারিবারিক নানা বিষয়ে বাবার সাথে ঝগড়া হত। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ রিয়াদকে ঘর থেকে বাবা বের করে দিলে কলহ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর পর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করে রিয়াদ। পরে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । ১৫ দিন আগে তার স্ত্রী এক সন্তানের জন্ম দেয়। রিয়াদ অটোরিক্সা চালিয়ে শুরু করে জীবিকা নির্বাহ। ঘরে ঢুকতে দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাবা ছেলের সাথে প্রায় সময় ঝগড়া হত। ঘটনার দিন রোববার রাতে এ বিষয়ে রিয়াদের চাচারা ও বাবাসহ একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে বাবা ছেলের সাথে কাটাকাটির একপর্যায়ে বাবা ছেলেকে টর্চ ও শারীরিকভাবে আঘাত করে। ফলে বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে যায়। পরে ছেলে রিয়াদ তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে বাবার গলায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী বাবার চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে তাকে (বাবা) উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার মিরাজ বলেন, নিহত আহমেদ হোসেন গলার ডান পাশে ধারালো কোন কিছুর আঘাতে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা যান।
ঘাতক সন্তান রিয়াদ হোসেনের ভাষ্য, ৬ বছর ধরে বিদেশ ছিলাম। আমার নিজস্ব একাউন্ট না থাকায় মায়ের একাউন্টে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পাঠিয়েছি। বাবা সেই টাকা দিয়ে আলাদাভাবে কৃষি খামার ও বাগান বাড়ি গড়ে তোলে। ২০২৪ সালে দেশে এসে বিয়ে করি। বিয়ের পর আমাকে দিয়ে শুধু কৃষি কাজ করাতো বাবা। এসময় বাবার কাছ থেকে টাকা খুঁজতে গেলে প্রায় সময় আমার সাথে বাবার ঝগড়া হত। পরে আমাকে পরিবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। তখন আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, আমার ছোট ভাইকে ঢাকা থেকে এনে আমাকে অপমান ও মারধর করা হয়। পরে আমার স্ত্রীর বিয়ের স্বর্ণগুলো নিয়ে আমার বাবা বন্ধক দিয়ে দেয়। আগে অনেকবার বললেও তিনি আমাকে পাত্তা দেননি। রোববার রাতে আমার চাচাদের উপস্থিতিতে বন্ধক দেওয়া স্বর্ণগুলো এনে দিতে বললে বাবার সাথে আমার তর্ক হয়। তখন বাবা আমাকে মুখে কামড়, টর্চ দিয়ে ও শারীরিকভাবে আঘাত করে। তখন আমার হাতে তরকারি কাটার জন্য একটি ছুরি ছিল, সেই ছুরি দিয়ে রাগের মাথায় বাবার গলায় আঘাত করে পালিয়ে যায়।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মাহমুদ কাওসার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বুলু আকতার বাদী হয়ে ছেলে রিয়াদকে একমাত্র আসামি করে সোমবার সকালে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে সোমবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল-হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, অভিযুক্ত রিয়াদ হোসেন বিয়ে করার পর পারিবারিক কলহ শুরু হয়। পরে সব বিষয় নিয়ে তার বাবার সাথে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে, রোববার রাতে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছেলের হাতে থাকা ছুরি দিয়ে বাবার গলায় ছুরিকাঘাত করলে হাসপাতালে নেওয়ার পর বাবার মৃত্যু হয়।




