নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির ইউনিট কমিটি নিয়ে বিতর্ক লেগেই আছে। মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী ও বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত নেই এমন ব্যক্তিদের উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিতে স্থান দিয়ে তুমুল সমালোচিত হন উত্তর জেলার আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। এবার নিজস্ব বলয় তৈরির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সাংগঠনিক এলাকায় না থেকেও আধিপত্য বিস্তারে জাল পাতছেন গোলাম আকবর। নিজের লোকজনকে পাকাপুক্ত করতে প্রতিটি ইউনিট কমিটিতে আনা হয়েছে সংশোধনী। এ পর্যন্ত ৯ বার সংশোধন করা হয়েছে সন্দ্বীপ বিএনপির কমিটি। পান থেকে চুন কষলেই নেতাদের বহিস্কার করা হচ্ছে উত্তর জেলার ইউনিটগুলোতে। গোলাম আকবর নিয়ে সমলোচনা করলেই বহিস্কার হয়ে যাচ্ছেন সেই নেতা। আবার নিজস্ব বলয় তৈরি করতে সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তভুক্ত করা হচ্ছে কাউকে না কাউকে।
সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ফোরকান উদ্দিন রিজভীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে অব্যাহতি দেয়া হলেও ফোরকান উদ্দিন রিজভীকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানো হয়নি। রিজভীকে অব্যাহতির মাধ্যমে সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির কমিটির ৯বার সংশোধনী আনা হয়েছে। শুধু উপজেলা বা পৌরসভা ইউনিট কমিটি নিয়ে বিতর্ক আছে তা নয়, উত্তর জেলার ইউনিয়ন কমিটি পর্যন্ত আধিপত্যের দখলে চলে গেছে। উপজেলার অধীনে বিভিন্ন জায়গায় গঠন করা ইউনিয়ন কমিটিগুলো নিয়ে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম নিচ্ছে। সম্প্রতি সন্দ্বীপ কালাপানিয়া ইউনিয়নের ১২ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনদিন পর সেই কমিটির ১০ সদস্য নিজেরা তা প্রত্যাখান করেছে। এসব ঘটনায় সংগঠনিক ভিত্তি নষ্ঠ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি সংশ্লিষ্টরা।
সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া ফোরকান উদ্দিন রিজভীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কোনো সাংঠনিক নিয়ম পালন করা হচ্ছে না। আমাকে হুট করে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কারণ দর্শানো ছাড়া অব্যাহতি সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। নিজস্ব বলয় করার জন্য যাকে ইচ্ছে বহিস্কার বা আবিস্কার সাংগঠনিক নিয়ম বিরোধী। আমাকে অব্যাহতি দেয়ার মাধ্যমে ৯ বার সংশোধন করা হয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলা কমিটির।
সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রীয় থাকলেও হুট করে উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিট ঘোষণার মাধ্যমে আলোচনায় আসে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। একসাথে সবগুলো ইউনিটের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। গত ৩১ জানুয়ারি অনুমোদন করা সেই কমিটি প্রকাশ পায় পরের দিন ১ ফেব্রুয়ারি। উত্তর জেলা বিএনপির আওতাধীন ৭ উপজেলা ও ৮ পৌরসভা ইউনিটে প্রায় সবগুলো কমিটি নিয়েই বিস্তর অভিযোগ আসে। কমিটিতে মৃত ব্যক্তিদের নাম দেখে হতবাক হন অনেকে। তাছাড়াও সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন করা, ত্যাগী কর্মীদের বাদ দেয়া, প্রবাসীদের স্থান দেওয়াসহ নানাভাবে বিতর্ক চলে কমিটি নিয়ে। কমিটি গুলো নিয়ে অভিযোগ উঠে, প্রত্যেকটা কমিটি গোলাম আকবর খোন্দকারের নিজস্ব পছন্দের লোক নিয়ে গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে কমিটি গঠনে থাকা ত্রুটি সরাতে সংশোধনি আনা হয়। এসব সংশোধনীতেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে।
সাবেক ছাত্র নেতা ও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফোরাম কেন্দ্রীয় মহাসচিব সৈয়দ মোস্তফা আলম মাসুম বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনমুখী যে কমিটি করা দরকার, উত্তর জেলায় প্রত্যেকটা উপজেলায় সেটা অনুপস্থিত। উত্তর জেলার অতীত ইতিহাস, সেখানে কমপক্ষে ৬টি আসন বিএনপির দখলে ছিল। আজকে সেখানে খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী অযোগ্য নেতৃত্ব। বর্তমান আহবায়ক আকবর সাহেব কোনো কর্মকান্ডে নেই। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে সুযোগ থাকার পরও নিজ আসনে মনোনয়ন পর্যন্ত চাননি। সেখানে দ্বিতীয় সারির নেতাকে নির্বাচন করতে হয়েছে। আজকে প্রত্যেকটা ইউনিট কমিটি বিতর্কীত। নিজস্ব বলয় গঠন করতে গিয়ে সংগঠনকে শেষ করে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করছে ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে। বিএনপির রাজনীতিতে নেই এমন ব্যক্তি এনে করা হচ্ছে উপদেষ্ঠা কমিটি। গঠনতন্ত্রে না থাকলেও এমন কমিটি গঠন করা নিয়ে প্রত্যেকটা ইউনিয়নে চলছে সমালোচনা। ইতিমধ্যে কিছু ইউনিয়নে বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে উপদেষ্ঠা কমিটি নিয়ে। আবার ইউনিয়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে যুবদল বা অঙ্গসংগঠনের পদে থাকা ব্যক্তিদের রাখার অভিযোগ উঠছে।
বারবার কমিটি সংশোধনী সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, কমিটি ৯বার সংশোধনী দিয়েছি তাতে অসুবিধা কি ? আমি তো বলবো ১৬বার দিয়েছি। এসব যে বলেছে তাদের প্রমাণ দিতে বলেন। প্রয়োজন হয়েছে তাই সংশোধন করেছি। কয়বার সংশোধনী দিয়েছি সেটা আমি বলবো না, যারা বলতেছে তাদের প্রমাণ দিতে বলেন।
পান থেকে চুন কষতেই বহিস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শোকজ করার কোনো দরকার নেই। আমি তো দল থেকে বহিস্কার করিনি, কমিটি থেকে বহিস্কার করেছি। সংগঠন সাংগঠনিক ভিত্তিতে চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কমিটি গঠনে সম্মেলন হচ্ছে বা হচ্ছে না সেটা বড় বিষয় নয়। আমাদের যে গাইডলাইন সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।



