সম্পাদকীয়——————-

মাথাপিছু আয় বরাবরই একটা বিতর্কের ইস্যু। কারণ,এটি গড় হিসাব। ধনী গরিব সবার আয় এবং জাতীয় উৎপাদন যোগ করে যে গড় করা হয় সেটিই মাথাপিছু আয়। অঙ্কের হিসাবে শুধু মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বিষয়টি শুধু এমন নয়। এর প্রতিক্রিয়া পড়বে আমাদের অন্যান্য হিসাবে। সরকার জাতীয় আয়কে ভিত্তি করে নানা রেশিও বা অনুপাত তৈরি করে। সেসবে পরিবর্তন আসবে। তাতে কারও মাসিক আয় হয়তো এক কোটি টাকা, সেখানে হয়তো অবৈধ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকাও আছে।

পক্ষান্তের একজন দিনমজুরের মাসিক আয় যদি হয় ১৫ হাজার টাকা, তাহলে ওই এক কোটির সঙ্গে এই ১৫ হাজার যোগ করে যদি দুজনের গড় আয় বের করা হয়, সেটা অর্থনীতির ভাষায়ও হাস্যকর। কিন্তু তারপরও মাথাপিছু আয়ের একটা গুরুত্ব আছে। এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক স্ট্যান্ডার্ড বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল সমস্যা হচ্ছে আয় বৈষম্য। এখানে অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে একটি গোষ্ঠী, যে টাকার বিরাট অংশই জনগণের ট্যাক্সের পয়সা। অর্থাৎ যে টাকা লুটপাট হয় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং কেনাকাটায়। এই লুটপাটের টাকা আবার চলে যায় বিদেশে।

কানাডার বেগমপাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে কিংবা কিছু টাকা খরচ হয় দেশের ভেতরেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনা এবং রাজকীয় রিসোর্ট তৈরিতে কিন্তু এর বাইরে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা দুর্নীতি ও লুটপাটের সঙ্গে যুক্ত নয় বা সেই সুযোগও যাদের নেই।

দেশে আগে দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষেরা টিসিবির লাইনে দাঁড়াতো।এখন ভালো ভালো পোশাক পরা মানুষদের টিসিবি’র গাড়ীর পেছনে লাইন দেখলেই বুঝা যায় দেশে মাথা পিছু আয়ের প্রকৃত হিসাব। এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয় এবং কম দামে জিনিস কেনার লাইন একইসঙ্গে দীর্ঘ হওয়াটা যে কতটা সাংঘর্ষিক তা সহজে অনুমেয়। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে না পারা,বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে না পারা এ সংকটে বিপর্যস্ত যে বিরাট জনগোষ্ঠী, মূলত এ কারণেই শাঁখের করাতে চেরাই হতে হতে মধ্যবিত্তরাও চলে আসছেন নিম্নবিত্তের জন্য নির্ধারিত টিসিবির লাইনে। টিসিবির লাইন ক্রমে বাড়ছে, দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয় ইত্যাদির হিসাবে একটা ‘গোমর’ আছে। জাতীয় আয়ের অথবা মাথাপিছু আয়ের যে অঙ্ক সরকার প্রকাশ করে, তা বলাই বাহুল্য একটি ‘গড়ের’ হিসাব। এর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির হিসাব যেমন আছে, তেমনি হিসাব আছে সবচেয়ে গরিব লোকেরও। এমনকি যার কোনো আয় নেই তারও। যিনি বেকার তারও বার্ষিক আয় ২,৭৮৪ ডলার।গড়ের হিসাবের এই হচ্ছে মজা। এতে প্রকৃত অবস্থা লুকায়িত থাকে।প্রকৃত অবস্থা প্রতিফলিত হয় না। ধনী-গরিব সব সমান হয়ে যায়।সরকারের বাদ্যযন্ত্র বাদকরা সারাদিন ঢাকঢোল পিঠিয়ে প্রচার করছে মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের উপরে। বেলা শেষে এদেশের মানুষের যে মাথাপিছু ঋণ কত ডলার এ হিসাব তারা করে না বা জানতে চায় না।

দেশে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যের দামই বেড়েছে। বারংবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচও অনেকাংশে বেড়েছে। এরইমধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দামও বেশ কয়েকবার করে বেড়েছে। তার মানে টিসিবির লাইনে ভালো পোশাক পরা লোকের লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

মুশকিলটা হলো, ১৯ কোটি মানুষের দেশে এক কোটি মানুষও যদি বৈধ অবৈধ নানা তরিকায় বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয় এবং তখন মাথাপিছু আয় যদি ৫০০০ ডলারও ছাড়িয়ে যায়,তারপরও টিসিবির লাইনে মানুষের সংখ্যা কমবে কিনা,তা বলা কঠিন।

নিত্যপণ্যের দাম একেবারে প্রান্তিক মানুষের ক্রয়সীমার নাগালে রাখাই হচ্ছে একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের প্রধান কাজ। আমাদের দেশে একেবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের যে দাম,তা যথেষ্ট বেশি এবং এই খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ যে অত্যন্ত দুর্বল, তা বোঝার জন্য গবেষণার প্রয়োজন হয় না। যদিও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া বেড়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এরকম পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকার কী করছে?

তবে মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেলেও নিত্যপণ্যের দামও যে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে এবং এর ফলে ওই মাথাপিছু আয়ের নিচে যে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস চাপা পড়বে; টিসিবির লাইন যে আরও দীর্ঘ হবে,সে কথা সরকারের তেল মর্দনকারীরা বলে না।

যদিও মাথাপিছু আয় একটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানের একটা নিয়ামক। মাথাপিছু আয় দিয়েই দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থার কথা বলা হয়। যে দেশের মাথাপিছু আয় যত বেশি, সে দেশ তত বেশি উন্নত বলা হয়। আর যে দেশের মাথাপিছু আয় যত কম, সে দেশের অবস্থা তত অনুন্নত বলা হয়।কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন,দেশে মাথাপিছু যে আয় বেড়েছে এই আয়গুলো কার? শ্রমিক,জনতা, মেহনতি সাধারণ মানুষের,নাকি এদেশের ব্যাংক লুটেরা ও দূর্ণীতিবাজ আমলাদের.?

সম্পাদকীয়——————-

মাথাপিছু আয় বরাবরই একটা বিতর্কের ইস্যু। কারণ,এটি গড় হিসাব। ধনী গরিব সবার আয় এবং জাতীয় উৎপাদন যোগ করে যে গড় করা হয় সেটিই মাথাপিছু আয়। অঙ্কের হিসাবে শুধু মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বিষয়টি শুধু এমন নয়। এর প্রতিক্রিয়া পড়বে আমাদের অন্যান্য হিসাবে। সরকার জাতীয় আয়কে ভিত্তি করে নানা রেশিও বা অনুপাত তৈরি করে। সেসবে পরিবর্তন আসবে। তাতে কারও মাসিক আয় হয়তো এক কোটি টাকা, সেখানে হয়তো অবৈধ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকাও আছে।

পক্ষান্তের একজন দিনমজুরের মাসিক আয় যদি হয় ১৫ হাজার টাকা, তাহলে ওই এক কোটির সঙ্গে এই ১৫ হাজার যোগ করে যদি দুজনের গড় আয় বের করা হয়, সেটা অর্থনীতির ভাষায়ও হাস্যকর। কিন্তু তারপরও মাথাপিছু আয়ের একটা গুরুত্ব আছে। এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক স্ট্যান্ডার্ড বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল সমস্যা হচ্ছে আয় বৈষম্য। এখানে অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে একটি গোষ্ঠী, যে টাকার বিরাট অংশই জনগণের ট্যাক্সের পয়সা। অর্থাৎ যে টাকা লুটপাট হয় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং কেনাকাটায়। এই লুটপাটের টাকা আবার চলে যায় বিদেশে।

কানাডার বেগমপাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে কিংবা কিছু টাকা খরচ হয় দেশের ভেতরেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনা এবং রাজকীয় রিসোর্ট তৈরিতে কিন্তু এর বাইরে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা দুর্নীতি ও লুটপাটের সঙ্গে যুক্ত নয় বা সেই সুযোগও যাদের নেই।

দেশে আগে দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষেরা টিসিবির লাইনে দাঁড়াতো।এখন ভালো ভালো পোশাক পরা মানুষদের টিসিবি’র গাড়ীর পেছনে লাইন দেখলেই বুঝা যায় দেশে মাথা পিছু আয়ের প্রকৃত হিসাব। এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয় এবং কম দামে জিনিস কেনার লাইন একইসঙ্গে দীর্ঘ হওয়াটা যে কতটা সাংঘর্ষিক তা সহজে অনুমেয়। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে না পারা,বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে না পারা এ সংকটে বিপর্যস্ত যে বিরাট জনগোষ্ঠী, মূলত এ কারণেই শাঁখের করাতে চেরাই হতে হতে মধ্যবিত্তরাও চলে আসছেন নিম্নবিত্তের জন্য নির্ধারিত টিসিবির লাইনে। টিসিবির লাইন ক্রমে বাড়ছে, দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয় ইত্যাদির হিসাবে একটা ‘গোমর’ আছে। জাতীয় আয়ের অথবা মাথাপিছু আয়ের যে অঙ্ক সরকার প্রকাশ করে, তা বলাই বাহুল্য একটি ‘গড়ের’ হিসাব। এর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির হিসাব যেমন আছে, তেমনি হিসাব আছে সবচেয়ে গরিব লোকেরও। এমনকি যার কোনো আয় নেই তারও। যিনি বেকার তারও বার্ষিক আয় ২,৭৮৪ ডলার।গড়ের হিসাবের এই হচ্ছে মজা। এতে প্রকৃত অবস্থা লুকায়িত থাকে।প্রকৃত অবস্থা প্রতিফলিত হয় না। ধনী-গরিব সব সমান হয়ে যায়।সরকারের বাদ্যযন্ত্র বাদকরা সারাদিন ঢাকঢোল পিঠিয়ে প্রচার করছে মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের উপরে। বেলা শেষে এদেশের মানুষের যে মাথাপিছু ঋণ কত ডলার এ হিসাব তারা করে না বা জানতে চায় না।

দেশে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যের দামই বেড়েছে। বারংবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচও অনেকাংশে বেড়েছে। এরইমধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দামও বেশ কয়েকবার করে বেড়েছে। তার মানে টিসিবির লাইনে ভালো পোশাক পরা লোকের লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

মুশকিলটা হলো, ১৯ কোটি মানুষের দেশে এক কোটি মানুষও যদি বৈধ অবৈধ নানা তরিকায় বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয় এবং তখন মাথাপিছু আয় যদি ৫০০০ ডলারও ছাড়িয়ে যায়,তারপরও টিসিবির লাইনে মানুষের সংখ্যা কমবে কিনা,তা বলা কঠিন।

নিত্যপণ্যের দাম একেবারে প্রান্তিক মানুষের ক্রয়সীমার নাগালে রাখাই হচ্ছে একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের প্রধান কাজ। আমাদের দেশে একেবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের যে দাম,তা যথেষ্ট বেশি এবং এই খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ যে অত্যন্ত দুর্বল, তা বোঝার জন্য গবেষণার প্রয়োজন হয় না। যদিও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া বেড়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এরকম পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকার কী করছে?

তবে মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেলেও নিত্যপণ্যের দামও যে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে এবং এর ফলে ওই মাথাপিছু আয়ের নিচে যে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস চাপা পড়বে; টিসিবির লাইন যে আরও দীর্ঘ হবে,সে কথা সরকারের তেল মর্দনকারীরা বলে না।

যদিও মাথাপিছু আয় একটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানের একটা নিয়ামক। মাথাপিছু আয় দিয়েই দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থার কথা বলা হয়। যে দেশের মাথাপিছু আয় যত বেশি, সে দেশ তত বেশি উন্নত বলা হয়। আর যে দেশের মাথাপিছু আয় যত কম, সে দেশের অবস্থা তত অনুন্নত বলা হয়।কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন,দেশে মাথাপিছু যে আয় বেড়েছে এই আয়গুলো কার? শ্রমিক,জনতা, মেহনতি সাধারণ মানুষের,নাকি এদেশের ব্যাংক লুটেরা ও দূর্ণীতিবাজ আমলাদের.?