আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্টারনেটের এই যুগে অনলাইন মিডিয়ার দাপটে যখন ছাপাখানায় বন্ধের পথে, তখন ভারতের চেন্নায় থেকে ক্যালিগ্রাফির ছোঁয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে একটি দৈনিক পত্রিকা। বর্তমান বিশ্বের একমাত্র সচল হাতে লেখা দৈনিক হিসাবে স্বীকৃত এটি। ‘দ্য মুসলমান’ নামের এই পত্রিকাটি তাদের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ-কে ধরে রেখে রমরমা ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় ১০০ বছর ধরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবাদপত্রের আদি উৎস প্রাচীন রোমে। সেকালে রোম শাসকদের রাষ্ট্রীয় ঘোষণা পত্রকে পাথরে খোদাই করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে টাঙিয়ে দেওয়া হতো, একে বলা হতো ‘অ্যাক্টা দিউরমা’। এরপর ৮ম শতাব্দীর দিকে চীনের রাজদরবার থেকে ‘কাইয়ুয়ান ঝা বাও’ বা ‘আদালতের বার্তা’ নামে একটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। সে থেকেই মূলত সংবাদপত্রের জন্ম। এরপর বহু সময় গড়িয়েছে, অনেক বাঁক পেরিয়েছে, এসেছে অসংখ্য সংবাদপত্র। সাথে পরিবর্তন এসেছে তাদের ধরন ও প্রকাশনায়। এরপর কম্পিউটারের বদৌলতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া—হাতে লেখার চল পেরিয়ে এসেছে ছাপা পত্রিকা আর ছাপাখানা পেরিয়ে এখন এসেছে অনলাইন পত্রিকা। অনলাইন পত্রিকার এই যুগে এসেও সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে টিকে থাকা হাতে লেখা শতবর্ষী পত্রিকার নাম শুনলে বেশ অবাক হওয়াই স্বাভাবিক।

দ্য মুসলমানের সূচনা হয় ১৯২৭ সালে, ভারতের তামিলনাড়ুর চেন্নায়ে। উর্দু ভাষায় লেখা সংবাদপত্রটি প্রতিষ্ঠা করেন সৈয়দ আজমতুল্লাহ। বর্তমানে পত্রিকাটি সম্পাদনা করছেন তাঁর নাতি সৈয়দ আরিফুল্লাহ। এর পূর্বে তার পিতা সৈয়দ ফজলুল্লাহ এটি সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। জওহরলাল নেহেরু এবং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে দ্য মুসলমান পত্রিকার নাম। পত্রিকা অফিসে এখনো নিয়মিত আগমন ঘটে বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক ও নামকরা ব্যক্তিদের। তাদের অনেকের লেখাই এখানে প্রকাশিত হয়।


‘দ্য মুসলমান’ ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন উর্দু সংবাদপত্রও বটে। সাধারণত দৈনিক পত্রিকাগুলো সকালে প্রকাশিত হলেও ‘দ্য মুসলমান’ প্রকাশিত হয় সন্ধ্যায়। এর কারণ, পত্রিকাটি হাতে লিখে প্রস্তুত করতে করতেই দুপুর হয়ে যায়, তারপরে প্রেসে ছেপে পাঠকদের হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়ে যায় সন্ধ্যা। শুধুমাত্র হাতে লেখাই এই পত্রিকাটির বিশেষত্ব নয়; আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি পেশাদার ক্যালিগ্রাফারদের ক্যালিগ্রাফি দ্বারা সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়।

তিনজন বিশেষজ্ঞ ক্যালিগ্রাফার সংবাদপত্রটি লেখার কাজ করেন, যাঁদের বলা হয় কাতিব। একেকজন কাতিব একেকটি পৃষ্ঠা লেখার দায়িত্বে থাকেন। কুইল কলম ও কালিতে এক পাতা লিখতে একজন ক্যালিগ্রাফারের দুই ঘণ্টা সময় লাগে। কোনো কিছু ভুল হলে সাধারণত পুরো পাতার কাজই নতুন করে করতে হয়। লিখিত কপিটি এরপর নেগেটিভে রূপান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে পত্রিকাটি সরাসরি প্রিন্টিংয়ে যায়। পত্রিকার সংবাদ সংগ্রহ করেন তিনজন প্রতিবেদক বা সংবাদদাতা। ৮০০ বর্গফুটের সীমিত পরিসরে সংবাদপত্রটির এক কক্ষবিশিষ্ট কার্যালয়। কিন্তু তাতে পত্রিকার কর্মীদের কাজের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। একনিষ্ঠতা ও সর্বোচ্চ দক্ষতা দিয়ে কাজ করে যান তারা।

মাত্র ৭৫ পয়সা মূল্যের পত্রিকাটি মোট চার পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২২ হাজারেরও বেশি। চেন্নাই ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এর গ্রাহক। অনেকে শুধুমাত্র ঐতিহ্যগত কারণেই পত্রিকাটির গ্রাহক হয়ে আছেন। দূরের পাঠকদের জন্য রয়েছে ডাকের মাধ্যমে পত্রিকা পৌঁছানোর পদ্ধতি। গ্রাহকদের বেশিরভাগই মুসলিম, তবে উর্দু ভাষা জানেন এমন কিছু হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নিয়মিত পড়েন পত্রিকাটি।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্টারনেটের এই যুগে অনলাইন মিডিয়ার দাপটে যখন ছাপাখানায় বন্ধের পথে, তখন ভারতের চেন্নায় থেকে ক্যালিগ্রাফির ছোঁয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে একটি দৈনিক পত্রিকা। বর্তমান বিশ্বের একমাত্র সচল হাতে লেখা দৈনিক হিসাবে স্বীকৃত এটি। ‘দ্য মুসলমান’ নামের এই পত্রিকাটি তাদের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ-কে ধরে রেখে রমরমা ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় ১০০ বছর ধরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবাদপত্রের আদি উৎস প্রাচীন রোমে। সেকালে রোম শাসকদের রাষ্ট্রীয় ঘোষণা পত্রকে পাথরে খোদাই করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে টাঙিয়ে দেওয়া হতো, একে বলা হতো ‘অ্যাক্টা দিউরমা’। এরপর ৮ম শতাব্দীর দিকে চীনের রাজদরবার থেকে ‘কাইয়ুয়ান ঝা বাও’ বা ‘আদালতের বার্তা’ নামে একটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। সে থেকেই মূলত সংবাদপত্রের জন্ম। এরপর বহু সময় গড়িয়েছে, অনেক বাঁক পেরিয়েছে, এসেছে অসংখ্য সংবাদপত্র। সাথে পরিবর্তন এসেছে তাদের ধরন ও প্রকাশনায়। এরপর কম্পিউটারের বদৌলতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া—হাতে লেখার চল পেরিয়ে এসেছে ছাপা পত্রিকা আর ছাপাখানা পেরিয়ে এখন এসেছে অনলাইন পত্রিকা। অনলাইন পত্রিকার এই যুগে এসেও সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে টিকে থাকা হাতে লেখা শতবর্ষী পত্রিকার নাম শুনলে বেশ অবাক হওয়াই স্বাভাবিক।

দ্য মুসলমানের সূচনা হয় ১৯২৭ সালে, ভারতের তামিলনাড়ুর চেন্নায়ে। উর্দু ভাষায় লেখা সংবাদপত্রটি প্রতিষ্ঠা করেন সৈয়দ আজমতুল্লাহ। বর্তমানে পত্রিকাটি সম্পাদনা করছেন তাঁর নাতি সৈয়দ আরিফুল্লাহ। এর পূর্বে তার পিতা সৈয়দ ফজলুল্লাহ এটি সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। জওহরলাল নেহেরু এবং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে দ্য মুসলমান পত্রিকার নাম। পত্রিকা অফিসে এখনো নিয়মিত আগমন ঘটে বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক ও নামকরা ব্যক্তিদের। তাদের অনেকের লেখাই এখানে প্রকাশিত হয়।


‘দ্য মুসলমান’ ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন উর্দু সংবাদপত্রও বটে। সাধারণত দৈনিক পত্রিকাগুলো সকালে প্রকাশিত হলেও ‘দ্য মুসলমান’ প্রকাশিত হয় সন্ধ্যায়। এর কারণ, পত্রিকাটি হাতে লিখে প্রস্তুত করতে করতেই দুপুর হয়ে যায়, তারপরে প্রেসে ছেপে পাঠকদের হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়ে যায় সন্ধ্যা। শুধুমাত্র হাতে লেখাই এই পত্রিকাটির বিশেষত্ব নয়; আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি পেশাদার ক্যালিগ্রাফারদের ক্যালিগ্রাফি দ্বারা সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়।

তিনজন বিশেষজ্ঞ ক্যালিগ্রাফার সংবাদপত্রটি লেখার কাজ করেন, যাঁদের বলা হয় কাতিব। একেকজন কাতিব একেকটি পৃষ্ঠা লেখার দায়িত্বে থাকেন। কুইল কলম ও কালিতে এক পাতা লিখতে একজন ক্যালিগ্রাফারের দুই ঘণ্টা সময় লাগে। কোনো কিছু ভুল হলে সাধারণত পুরো পাতার কাজই নতুন করে করতে হয়। লিখিত কপিটি এরপর নেগেটিভে রূপান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে পত্রিকাটি সরাসরি প্রিন্টিংয়ে যায়। পত্রিকার সংবাদ সংগ্রহ করেন তিনজন প্রতিবেদক বা সংবাদদাতা। ৮০০ বর্গফুটের সীমিত পরিসরে সংবাদপত্রটির এক কক্ষবিশিষ্ট কার্যালয়। কিন্তু তাতে পত্রিকার কর্মীদের কাজের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। একনিষ্ঠতা ও সর্বোচ্চ দক্ষতা দিয়ে কাজ করে যান তারা।

মাত্র ৭৫ পয়সা মূল্যের পত্রিকাটি মোট চার পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২২ হাজারেরও বেশি। চেন্নাই ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এর গ্রাহক। অনেকে শুধুমাত্র ঐতিহ্যগত কারণেই পত্রিকাটির গ্রাহক হয়ে আছেন। দূরের পাঠকদের জন্য রয়েছে ডাকের মাধ্যমে পত্রিকা পৌঁছানোর পদ্ধতি। গ্রাহকদের বেশিরভাগই মুসলিম, তবে উর্দু ভাষা জানেন এমন কিছু হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নিয়মিত পড়েন পত্রিকাটি।