ঢাবি প্রতিনিধি: অনতিবিলম্বে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করা, ইমতিয়াজ রাব্বির সিট ফিরিয়ে তাকে হলে বরণ করে নেয়া এবং অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। দাবি মানা না হলে ছাত্রলীগ কীভাবে দাবি আদায় করতে হয় তা জানে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রবিবার (৩১ মার্চ) ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বুয়েটে প্রবেশের প্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধের আন্দোলন ও ঢুকতে সহযোগিতা করা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বীর সিট বাতিল করার প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে এ প্রশ্ন রাখেন সাদ্দাম।
সাদ্দাম বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যেকোনো জায়গায় প্রবেশের অধিকার আমার রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন সময় কাটানোর জন্য আমি যাই, সংবিধান প্রদত্ত অধিকার হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল যাওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। কাদের কাছে পারমিশন নিতে হবে! যাদেরকে সংবিধান অধিকার দিয়েছে, তাদেরকে মামাবাড়ির আবদারের মত ঠুনকো বানিয়ে দেবেন? আমরা মেনে নেব বলে আশা করছেন, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। একটি নন ইস্যুকে ইস্যু বানানো হয়েছে, পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় আমার প্রবেশের অধিকার রয়েছে। আমাদের প্রবেশের জায়গা সংকুচিত করে অন্ধকারের চাষাবাদ শুরু করেছেন। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও নিষিদ্ধ রাজনীতির নমুনা আমরা ক্ষণে ক্ষণে দেখতে পাচ্ছি।
সাদ্দাম বলেন, বুয়েটের সিদ্ধান্ত অন্যায্য, অসাংবিধানিক এবং নাগরিক অধিকার বিরোধী। বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধের এই নাটক বন্ধ করতে হবে। বুয়েট যে নিয়ম চালু করেছে, তা কালাকানুন। অনতিবিলম্বে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। ইমতিয়াজ রাব্বির সিট ফিরিয়ে তাকে হলে বরণ করে নিতে হবে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। দাবি মানা না হলে ছাত্রলীগ জানে, কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়।
ছাত্রলীগ সভাপতি আরো বলেন, ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক দিক রয়েছে। এখানে র্যাগিং,’ভাই’ ও গেস্টরুম কালচার রয়েছে। এটি পরিবর্তনের উপায় আরো ভালো রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা; রাজনীতি বন্ধ করা নয়। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির কাঠামো কেমন হবে তা শিক্ষার্থীরাই নির্ধারণ করবে; তবে সেখানে রাজনীতি থাকতে হবে। আবরার তাদের ভাই নয়, তাদের কাছে আবরার কেবল রাজনৈতিক পুঁজি, যার পেছনে তারা অন্ধকার রাজনীতি করছে।
তিনি আরো বলেন, ইমতিয়াজের অপরাধ সে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ইফতার বিতরণ করেছে। স্বাধীনতা দিবসে পুস্পস্তবক অর্পণ করেছে। নাগরিক হিসেবে রাজনীতি করার অধিকার সবার রয়েছে, কার অনুমতি নিতে হবে? টাঙুয়ার হাওড়ে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, জামিনে এসে তারা নির্ধারণ করছে কে ক্লাস করতে পারবে, কে পারবে না। শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা বুয়েটই বন্ধ রেখেছে। সেখানে নিষিদ্ধ রাজনীতির চাষাবাদ হচ্ছে। অবিলম্বে ছাত্ররাজনীতি চালু করার জন্য বুয়েট প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান সাদ্দাম।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় বক্তব্য কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম (ইমতিয়াজ রাব্বি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি রাজীবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম।
ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, বুয়েটে সুদীর্ঘ রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে তা বন্ধ হতে পারে না। বরং যারা জাতীয় দিবস পালনে বাধা দিয়েছে, বুয়েট প্রশাসনের উচিত তাদের বিচারের আওতায় আনা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তারা পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান ইমতিয়াজ।
এদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির সম্মানে সিট ফিরিয়ে দিতে হবে। সিট ফিরিয়ে না দিলে একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি বুয়েটে কমিটি দেয়ার প্রতিও আহবান জানান নেতা-কর্মীরা। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বুয়েটের শহীদ মিনারে ফুল দেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শতাধিক নেতা-কর্মী।
ছাত্রলীগের প্রতিবাদ সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তাঁর হল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যদলয়, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, কবি নজরুল ইসলাম কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।