নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্দর নগরীর চট্টগ্রাম মহানগর এখন পতিতা পল্লীতে পরিণত। মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন যে কয়টি থানা রয়েছে সব থানা এলাকার আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে চলছে রমরমা পতিতা বাণিজ্য। সাবেক পুলিশ কমিশনার এহেন ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলেন বিধায় তাঁর আমলে সারা শহরে পতিতা বাণিজ্য প্রকাশ্যে বন্ধ ছিল। বতর্মান পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় যোগদান করার এক সপ্তাহ পর থেকে কোতোয়ালী থানা, পতেঙ্গা থানা, খুলশী থানা, আকবর শা্হ থানা, হালিশহর থানা, চকবাজার থানা ও চান্দগাঁও থানা এলাকায় পতিতা ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠেছে।

এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের স্ব-ঘোষিত ক্যাশিয়ার এএসআই সবিরুল। তিনি বর্তমানে সিএমপিতে কর্মরত না থাকলেও তার বেতনভুক্ত কর্মচারী মাসুদ সকল পতিতা ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় করছে নিয়মিত। এ দিকে কোতোয়ালী থানার আফিসার ইনচার্জ ও পাথরঘাটা ফাঁড়ি ইনচার্জ নয়ন বড়ুয়ার পরোক্ষ মদদে ফিরিঙ্গী বাজারের আবাসিক হোটেল আল রশীদ এর পতিতা ব্যবসায়ী ও সবকটি হোটেল হতে স্ব-ঘোষিত ক্যাশিয়ার সাবেক পুলিশ সিপাহী কুদ্দুসের মাধ্যমে মাসিক মাসোহারা আদায় করছে।

May be an image of 5 people, people smiling and text

স্ব-স্ব থানার স্ব-ঘোষিত ক্যাশিয়ারা অফিসার ইনচার্জদের পরোক্ষ সম্মতিতে পতিতা ব্যবসায়ীদের দেহ ব্যবসা চালানোর জন্য মাসিক মোটাংকের চাঁদার ভিত্তিতে অলিখিত লাইসেন্স প্রদান করছে।

পর্যটন স্পট ফয়’স লেক এলাকার আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে চলছে অবাধে দেহ ব্যবসা ও অনৈতিক সম্পর্কের মিলন মেলা।

May be an image of 2 people, slow loris and hospital

অভিযোগ রয়েছে, খুলশী থানাধীন এলাকার বেশ কিছু হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ নিয়ম নীতির বাইরে। সেখানে আগত অতিথিদের নানা রকম অবৈধ এবং অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকে। এই এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোর মাঝে মোটেল সিক্স স্বর্ণালীসহ বেশ কিছু হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক যুগল, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধসহ যে কোন বয়সের যে কেউ খুব সহজে এখানে একান্তে সময় পার করতে পারে। এই সুবিধা নিতে কারোরই নুন্যতম তথ্য যাচাইকরণ ছাড়াই চড়া মূল্যে একান্তে সময় কাটানোর জন্য ঘন্টা অনুযায়ী ও সারা রাতের জন্য দেয়া হয় রুম ভাড়া।

এছাড়াও সুযোগ বুঝে আবাসিক হোটেলে রুম নেয়া বিশেষ অতিথি ও দর্শনার্থীদের চাহিদামত জোগাড় করে দেয়া হয় মনোরঞ্জনের খোরাক মধু কন্যাদের। সূত্রে আরো জানা যায়, মধু চক্রের সাথে রুম ভাড়া নিয়ে নির্ভয়ে মাদক সেবনের আস্থাশীল জায়গায় পরিনত হয়েছে ফয়’স লেকের এই হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলো। এতো সব অনৈতিক আয়োজনের কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে করার সুযোগ করে দেয় এই হোটেলের দায়িত্বরত হোটেল বয় থেকে ম্যানেজার ও মালিক পক্ষের লোক পরিচয়দানকারীরা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে, ফয়’স লেক-এ বেড়াতে আসা বিবাহিত এক যুগল অভিযোগ করে জানান, আমরা প্রায় সময় ফয়’স লেক বেড়াতে আসি পরিবার পরিজন নিয়ে। এখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। পুলিশী ঝামেলা নেই মর্মে ও সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে হোটেলে উঠার জন্য ইশারা ইঙ্গিতে খোলামেলাভাবে বলতে থাকে এখানকার হোটেলের দালাল’রা। এমন অস্বস্তিকর প্রস্তাবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার নগরীর খুলশী থানাধীন ফয়’স লেক এলাকায় অবস্থিত মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’তে কাস্টমার সেজে গেলে সেখানে দেখা যায়, ফ্রন্ট ডেস্কের দায়িত্বে থাকা লোকজন হোটেলে আগত যুগলদের পূর্নাঙ্গ তথ্য বিবরণী না নিয়ে খুব দ্রুত একটি ফরম পূরণ করে তাদের কন্ট্রাক্ট করা রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

এসময় নিরাপত্তা জনিত কারণে যুগলদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং তারা বিবাহিত কিনা বা তারা কোন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে সেখানে একান্তে সময় কাটাতে এসেছেন এমন নূন্যতম প্রশ্নও তাদের করা হয়না হোটেলের পক্ষ থেকে। প্রতিটি যুগল’র তথ্য বিবরনীতে (এন্ট্রি ফরম) মিথ্যা তথ্য ও অসংগতি দৃষ্টিগোচর হয়।

হোটেলটিতে বেশিরভাগ যুগল বোর্ডারের সঠিকভাবে পরিচয় যাচাই না করে, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অফিসিয়াল আইডেন্টিফিকেশনের কপি ছাড়াই স্বল্প সময়ের জন্য একান্তে সময় কাটানোর জন্য রুম ভাড়া দেয়া হয়। এমনকি হোটেল রিসিপশনে প্রতিবেদক দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ও প্রতিবেদকদের সামনেই তিন জোড়া অবিবাহিত তরুণ-তরুণীকে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টার জন্য রুম ভাড়া দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০-৬০ জন যুগল এভাবে একান্তে সময় কাটাতে আসেন মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’তে।

সূত্রে জানা যায়, এই মোটেলে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাচেলর খদ্দেরদের জন্য আলাদা করে স্মার্ট সুন্দরী পতিতাও রাখা হয়।

এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে কর্মচারীরা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। অত:পর সে সময় মোটেলে অবস্থানরত বোর্ডারদের সাথে ফ্রন্ট ডেস্কে থাকা তথ্যের মিল আছে কি না জানতে চাইলে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তি নিজেকে মালিকপক্ষের একজন শেয়ার হোল্ডার দাবি করে প্রতিবেদকদের গরম মেজাজে চোখ রাঙ্গিয়ে বলেন, এখানে এমন কিছু নেই এবং নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য দিবে বলে কৌশলে তাদের হোটেলের নীচতলার একটি আলাদা অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে তথ্য দেয়া শুরুর এক পর্যায়ে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বীকার করেন তাদের সকল অপকর্মের কথা।

এসময় তিনি দাবী করেন ফয়’স লেক এলাকার কম-বেশি সবগুলো আবাসিক হোটেলেই একই প্রক্রিয়ায় একান্তে সময় কাটাতে স্বল্প সময়ের জন্য অবিবাহিত তরুণ-তরুণী এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের রুম ভাড়া দেয়া হয়। এমনকি ফয়’স লেক এলাকার বেশ কিছু হোটেল সরাসরি পতিতা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানান আনোয়ার।

কথা প্রসঙ্গে জোর গলায় দাবী করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন, কথিত সাংবাদিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে শখ্যতা বজায় রেখেই তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রসঙ্গ ক্রমে তিনি চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় অনলাইন পোর্টালের সংবাদকর্মীর রেফারেন্স দিয়ে হুংকার তোলেন তাকে তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে। পরে সেই অনলাইন সাংবাদিককে ফোন করতে বলার পর আনোয়ার তাকে ফোন না দেয়ায়, এই বিষয়ে বন্ধু পরিচয় দেয়া সেই সাংবাদিককে ফোন করা হলে তিনি আনোয়ার নামে কাউকে চিনেন না বলে অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।

প্রথমে বন্ধু পরিচয় দিলেও, পরে তাকে বড় ভাই পরিচয় দেয় আনোয়ার। তথ্য যাচাইয়ের পালাক্রমে পুলিশ ও সেই অনলাইন সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে হুংকার দেয়া উত্তেজিত পতিতা দালাল আনোয়ার শেষে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে টাকা দেয়ার জন্য জোরাজোরি শুরু করলে সরাসরি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসা হয় সেখান থেকে।

পরবর্তীতে হোটেল সিক্স স্বর্ণালী থেকে বের হয়ে আনোয়ারের কথার সূত্র ধরে পরিচয় গোপন রেখে একই রোডে অবস্থিত হোটেল রূপসী বাংলার পরিস্থিতি দেখতে সেখানে প্রবেশ করলে দেখা যায়, হোটেলের ২য় তলায় ৩ জন যৌনকর্মী খদ্দেরের অপেক্ষায় রয়েছেন।

পরবর্তীতে নিজেদের পরিচয় দিয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে হোটেলকর্মীদের সাথে নিয়ে এন্ট্রি ফরম যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় দু’টি প্রাপ্ত বয়স্ক যুগল সেখানে অবস্থান করছেন যারা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হতেই হোটেলের সেইসব কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন। এন্ট্রি ফরম এবং হোটেল ম্যানেজারের ভাষ্যমতে দুই যুগলের এক যুগল জনৈক পুলিশ কর্মকর্তার রেফারেন্সে সেই হোটেলে রুম ভাড়া করেছেন এবং অন্য যুগলের একজন নিজে ডিবি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।

পরবর্তীতে এন্ট্রি ফরমে দেয়া তথাকথিত শরিফ উদ্দিন নামক ডিবি কর্মকর্তার নাম্বারে কল দিলে তিনি জানান তিনি ডিবি কর্মকর্তা নন, তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার হালিশহর থানায় কনস্টেবল পদে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে অনৈতিকভাবে কেন এসব আবাসিক হোটেলে সময় কাটিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ভবিষ্যতে আর এমন হবে না এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সচেতন থাকবেন বলে মন্তব্য করে মুঠোফোনের কল কেটে দেন।

পরে হালিশহর থানায় ফোন দিলে মুন্সী জানান, এই নামে কেউই থানায় কর্মরত নেই।

এরপর নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে প্রাপ্ত আরো কিছু তথ্য যাচাই করতে এখানকার “ফয়’স কফি শপে” পরিচয় গোপন রেখে দৈনিক লাখোকন্ঠের অনুসন্ধানী টিমের একজন ঢুকলে, দোকানের কর্মচারীরা দোকানের ভিতরে স্থাপন করা ছোট ছোট কেবিনে থাকা যৌনকর্মীদের সাথেও মিলনের ব্যবস্থা আছে বলে প্রস্তাব করেন।

খোলামেলাভাবেই যৌনকর্মীদের সাথে মেলামেশার রেট, সুযোগ, সুবিধার বিস্তারিত জানান তারা। এ সময় দেখা যায় দোকানের ভিতরে ছোট ছোট অন্ধকার ৪টি কেবিনের ২টিতে ২ জন যৌনকর্মী অবস্থান করছিলেন খদ্দেরের অপেক্ষায়। পরবর্তিতে পুরো অনুসন্ধানী টিম নিয়ে “ফয়’স কফি শপে” ঢুকে কফি শপের আড়ালে অবৈধ কর্যক্রম কেন পরিচালনা করছেন তা জানতে চাওয়া হলে দোকানের কর্মচারীরা কোনো সদুত্তর না দিয়ে প্রতিবেদকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান।

অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে খুলশী থানা পুলিশের একজন এসআই এর নাম। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ঐ পুলিশ কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এত বেপোরোয়া এইসব অবৈধ ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, অত্র এলাকার সব ক’টি আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজে অবাধে চলে দেহ ব্যবসা। কয়েকটিতে সব সময় যৌন কর্মী মজুদ থাকলেও কিছু কিছু হোটেলে আগত খদ্দেরের চাহিদানুযায়ী সুযোগ বুঝে বাহির থেকে যৌনকর্মী সরবরাহ করা হয়।

গতকাল আবাসিক হোটেলের ছবি তোলার সময় দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকার ফটো সাংবাদিক নুরুল আজমকে ঘিরে ধরে হোটেলগুলোর মালিক, কর্মচারী, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও দালাল’রা মিলে। “ছবি কেন তুললি” এই বলে গালাগালি করতে করতে দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকার স্টাফ ফটো সাংবাদিক নুরুল আজমের উপর লাঠিসোটা নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।

সন্ত্রাসী হামলার পর সরাসরি থানায় ফোন দিলে ঘটনা স্থলে খুলশী থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে আহত সংবাদকর্মীদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। চিকিৎসা শেষে থানায় ফিরে গত মঙ্গলবার রাতে এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয় খুলশী থানায়।

এ বিষয়ে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ফয়’স লেক এলাকায় সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসীদের হামলা করার বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। আমি খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে উক্ত সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে ফোর্স পাঠাই।

নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্দর নগরীর চট্টগ্রাম মহানগর এখন পতিতা পল্লীতে পরিণত। মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন যে কয়টি থানা রয়েছে সব থানা এলাকার আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে চলছে রমরমা পতিতা বাণিজ্য। সাবেক পুলিশ কমিশনার এহেন ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলেন বিধায় তাঁর আমলে সারা শহরে পতিতা বাণিজ্য প্রকাশ্যে বন্ধ ছিল। বতর্মান পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় যোগদান করার এক সপ্তাহ পর থেকে কোতোয়ালী থানা, পতেঙ্গা থানা, খুলশী থানা, আকবর শা্হ থানা, হালিশহর থানা, চকবাজার থানা ও চান্দগাঁও থানা এলাকায় পতিতা ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠেছে।

এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের স্ব-ঘোষিত ক্যাশিয়ার এএসআই সবিরুল। তিনি বর্তমানে সিএমপিতে কর্মরত না থাকলেও তার বেতনভুক্ত কর্মচারী মাসুদ সকল পতিতা ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় করছে নিয়মিত। এ দিকে কোতোয়ালী থানার আফিসার ইনচার্জ ও পাথরঘাটা ফাঁড়ি ইনচার্জ নয়ন বড়ুয়ার পরোক্ষ মদদে ফিরিঙ্গী বাজারের আবাসিক হোটেল আল রশীদ এর পতিতা ব্যবসায়ী ও সবকটি হোটেল হতে স্ব-ঘোষিত ক্যাশিয়ার সাবেক পুলিশ সিপাহী কুদ্দুসের মাধ্যমে মাসিক মাসোহারা আদায় করছে।

May be an image of 5 people, people smiling and text

স্ব-স্ব থানার স্ব-ঘোষিত ক্যাশিয়ারা অফিসার ইনচার্জদের পরোক্ষ সম্মতিতে পতিতা ব্যবসায়ীদের দেহ ব্যবসা চালানোর জন্য মাসিক মোটাংকের চাঁদার ভিত্তিতে অলিখিত লাইসেন্স প্রদান করছে।

পর্যটন স্পট ফয়’স লেক এলাকার আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে চলছে অবাধে দেহ ব্যবসা ও অনৈতিক সম্পর্কের মিলন মেলা।

May be an image of 2 people, slow loris and hospital

অভিযোগ রয়েছে, খুলশী থানাধীন এলাকার বেশ কিছু হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ নিয়ম নীতির বাইরে। সেখানে আগত অতিথিদের নানা রকম অবৈধ এবং অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকে। এই এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোর মাঝে মোটেল সিক্স স্বর্ণালীসহ বেশ কিছু হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক যুগল, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধসহ যে কোন বয়সের যে কেউ খুব সহজে এখানে একান্তে সময় পার করতে পারে। এই সুবিধা নিতে কারোরই নুন্যতম তথ্য যাচাইকরণ ছাড়াই চড়া মূল্যে একান্তে সময় কাটানোর জন্য ঘন্টা অনুযায়ী ও সারা রাতের জন্য দেয়া হয় রুম ভাড়া।

এছাড়াও সুযোগ বুঝে আবাসিক হোটেলে রুম নেয়া বিশেষ অতিথি ও দর্শনার্থীদের চাহিদামত জোগাড় করে দেয়া হয় মনোরঞ্জনের খোরাক মধু কন্যাদের। সূত্রে আরো জানা যায়, মধু চক্রের সাথে রুম ভাড়া নিয়ে নির্ভয়ে মাদক সেবনের আস্থাশীল জায়গায় পরিনত হয়েছে ফয়’স লেকের এই হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলো। এতো সব অনৈতিক আয়োজনের কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে করার সুযোগ করে দেয় এই হোটেলের দায়িত্বরত হোটেল বয় থেকে ম্যানেজার ও মালিক পক্ষের লোক পরিচয়দানকারীরা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে, ফয়’স লেক-এ বেড়াতে আসা বিবাহিত এক যুগল অভিযোগ করে জানান, আমরা প্রায় সময় ফয়’স লেক বেড়াতে আসি পরিবার পরিজন নিয়ে। এখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। পুলিশী ঝামেলা নেই মর্মে ও সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে হোটেলে উঠার জন্য ইশারা ইঙ্গিতে খোলামেলাভাবে বলতে থাকে এখানকার হোটেলের দালাল’রা। এমন অস্বস্তিকর প্রস্তাবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার নগরীর খুলশী থানাধীন ফয়’স লেক এলাকায় অবস্থিত মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’তে কাস্টমার সেজে গেলে সেখানে দেখা যায়, ফ্রন্ট ডেস্কের দায়িত্বে থাকা লোকজন হোটেলে আগত যুগলদের পূর্নাঙ্গ তথ্য বিবরণী না নিয়ে খুব দ্রুত একটি ফরম পূরণ করে তাদের কন্ট্রাক্ট করা রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

এসময় নিরাপত্তা জনিত কারণে যুগলদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং তারা বিবাহিত কিনা বা তারা কোন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে সেখানে একান্তে সময় কাটাতে এসেছেন এমন নূন্যতম প্রশ্নও তাদের করা হয়না হোটেলের পক্ষ থেকে। প্রতিটি যুগল’র তথ্য বিবরনীতে (এন্ট্রি ফরম) মিথ্যা তথ্য ও অসংগতি দৃষ্টিগোচর হয়।

হোটেলটিতে বেশিরভাগ যুগল বোর্ডারের সঠিকভাবে পরিচয় যাচাই না করে, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অফিসিয়াল আইডেন্টিফিকেশনের কপি ছাড়াই স্বল্প সময়ের জন্য একান্তে সময় কাটানোর জন্য রুম ভাড়া দেয়া হয়। এমনকি হোটেল রিসিপশনে প্রতিবেদক দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ও প্রতিবেদকদের সামনেই তিন জোড়া অবিবাহিত তরুণ-তরুণীকে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টার জন্য রুম ভাড়া দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০-৬০ জন যুগল এভাবে একান্তে সময় কাটাতে আসেন মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’তে।

সূত্রে জানা যায়, এই মোটেলে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাচেলর খদ্দেরদের জন্য আলাদা করে স্মার্ট সুন্দরী পতিতাও রাখা হয়।

এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে কর্মচারীরা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। অত:পর সে সময় মোটেলে অবস্থানরত বোর্ডারদের সাথে ফ্রন্ট ডেস্কে থাকা তথ্যের মিল আছে কি না জানতে চাইলে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তি নিজেকে মালিকপক্ষের একজন শেয়ার হোল্ডার দাবি করে প্রতিবেদকদের গরম মেজাজে চোখ রাঙ্গিয়ে বলেন, এখানে এমন কিছু নেই এবং নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য দিবে বলে কৌশলে তাদের হোটেলের নীচতলার একটি আলাদা অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে তথ্য দেয়া শুরুর এক পর্যায়ে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বীকার করেন তাদের সকল অপকর্মের কথা।

এসময় তিনি দাবী করেন ফয়’স লেক এলাকার কম-বেশি সবগুলো আবাসিক হোটেলেই একই প্রক্রিয়ায় একান্তে সময় কাটাতে স্বল্প সময়ের জন্য অবিবাহিত তরুণ-তরুণী এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের রুম ভাড়া দেয়া হয়। এমনকি ফয়’স লেক এলাকার বেশ কিছু হোটেল সরাসরি পতিতা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানান আনোয়ার।

কথা প্রসঙ্গে জোর গলায় দাবী করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন, কথিত সাংবাদিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে শখ্যতা বজায় রেখেই তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রসঙ্গ ক্রমে তিনি চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় অনলাইন পোর্টালের সংবাদকর্মীর রেফারেন্স দিয়ে হুংকার তোলেন তাকে তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে। পরে সেই অনলাইন সাংবাদিককে ফোন করতে বলার পর আনোয়ার তাকে ফোন না দেয়ায়, এই বিষয়ে বন্ধু পরিচয় দেয়া সেই সাংবাদিককে ফোন করা হলে তিনি আনোয়ার নামে কাউকে চিনেন না বলে অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।

প্রথমে বন্ধু পরিচয় দিলেও, পরে তাকে বড় ভাই পরিচয় দেয় আনোয়ার। তথ্য যাচাইয়ের পালাক্রমে পুলিশ ও সেই অনলাইন সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে হুংকার দেয়া উত্তেজিত পতিতা দালাল আনোয়ার শেষে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে টাকা দেয়ার জন্য জোরাজোরি শুরু করলে সরাসরি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসা হয় সেখান থেকে।

পরবর্তীতে হোটেল সিক্স স্বর্ণালী থেকে বের হয়ে আনোয়ারের কথার সূত্র ধরে পরিচয় গোপন রেখে একই রোডে অবস্থিত হোটেল রূপসী বাংলার পরিস্থিতি দেখতে সেখানে প্রবেশ করলে দেখা যায়, হোটেলের ২য় তলায় ৩ জন যৌনকর্মী খদ্দেরের অপেক্ষায় রয়েছেন।

পরবর্তীতে নিজেদের পরিচয় দিয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে হোটেলকর্মীদের সাথে নিয়ে এন্ট্রি ফরম যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় দু’টি প্রাপ্ত বয়স্ক যুগল সেখানে অবস্থান করছেন যারা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হতেই হোটেলের সেইসব কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন। এন্ট্রি ফরম এবং হোটেল ম্যানেজারের ভাষ্যমতে দুই যুগলের এক যুগল জনৈক পুলিশ কর্মকর্তার রেফারেন্সে সেই হোটেলে রুম ভাড়া করেছেন এবং অন্য যুগলের একজন নিজে ডিবি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।

পরবর্তীতে এন্ট্রি ফরমে দেয়া তথাকথিত শরিফ উদ্দিন নামক ডিবি কর্মকর্তার নাম্বারে কল দিলে তিনি জানান তিনি ডিবি কর্মকর্তা নন, তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার হালিশহর থানায় কনস্টেবল পদে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে অনৈতিকভাবে কেন এসব আবাসিক হোটেলে সময় কাটিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ভবিষ্যতে আর এমন হবে না এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সচেতন থাকবেন বলে মন্তব্য করে মুঠোফোনের কল কেটে দেন।

পরে হালিশহর থানায় ফোন দিলে মুন্সী জানান, এই নামে কেউই থানায় কর্মরত নেই।

এরপর নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে প্রাপ্ত আরো কিছু তথ্য যাচাই করতে এখানকার “ফয়’স কফি শপে” পরিচয় গোপন রেখে দৈনিক লাখোকন্ঠের অনুসন্ধানী টিমের একজন ঢুকলে, দোকানের কর্মচারীরা দোকানের ভিতরে স্থাপন করা ছোট ছোট কেবিনে থাকা যৌনকর্মীদের সাথেও মিলনের ব্যবস্থা আছে বলে প্রস্তাব করেন।

খোলামেলাভাবেই যৌনকর্মীদের সাথে মেলামেশার রেট, সুযোগ, সুবিধার বিস্তারিত জানান তারা। এ সময় দেখা যায় দোকানের ভিতরে ছোট ছোট অন্ধকার ৪টি কেবিনের ২টিতে ২ জন যৌনকর্মী অবস্থান করছিলেন খদ্দেরের অপেক্ষায়। পরবর্তিতে পুরো অনুসন্ধানী টিম নিয়ে “ফয়’স কফি শপে” ঢুকে কফি শপের আড়ালে অবৈধ কর্যক্রম কেন পরিচালনা করছেন তা জানতে চাওয়া হলে দোকানের কর্মচারীরা কোনো সদুত্তর না দিয়ে প্রতিবেদকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান।

অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে খুলশী থানা পুলিশের একজন এসআই এর নাম। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ঐ পুলিশ কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এত বেপোরোয়া এইসব অবৈধ ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, অত্র এলাকার সব ক’টি আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজে অবাধে চলে দেহ ব্যবসা। কয়েকটিতে সব সময় যৌন কর্মী মজুদ থাকলেও কিছু কিছু হোটেলে আগত খদ্দেরের চাহিদানুযায়ী সুযোগ বুঝে বাহির থেকে যৌনকর্মী সরবরাহ করা হয়।

গতকাল আবাসিক হোটেলের ছবি তোলার সময় দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকার ফটো সাংবাদিক নুরুল আজমকে ঘিরে ধরে হোটেলগুলোর মালিক, কর্মচারী, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও দালাল’রা মিলে। “ছবি কেন তুললি” এই বলে গালাগালি করতে করতে দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকার স্টাফ ফটো সাংবাদিক নুরুল আজমের উপর লাঠিসোটা নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।

সন্ত্রাসী হামলার পর সরাসরি থানায় ফোন দিলে ঘটনা স্থলে খুলশী থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে আহত সংবাদকর্মীদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। চিকিৎসা শেষে থানায় ফিরে গত মঙ্গলবার রাতে এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয় খুলশী থানায়।

এ বিষয়ে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ফয়’স লেক এলাকায় সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসীদের হামলা করার বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। আমি খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে উক্ত সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে ফোর্স পাঠাই।