ঢাকা অফিসঃ স্বামীর অনৈতিক সম্পর্ক জেনে যাওয়ায় পান্না দাশ সুমিকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন স্বামী অনুজ কর্মকার। নিহতের ছোট ভাই সঞ্জয় দাশ এমন অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানাধীন মাছুয়া ঝর্ণা লেইন এলাকার বাসিন্দা স্বপন কান্তি দাশের মেয়ে পান্না দাশ সুমি লেখাপড়া অবস্থায় স্কুল ও কলেজের একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ২০১৭ সালে মাষ্টার্স পাশ করেন। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন অক্সিজেন এডুকেশন এ্যামপ্লয়ী হাউজিং সোসাইটির ভবনের ঠিকানায় অনুজ কর্মকারের সাথে তার বিয়ে হয়। সে সময়ে ঢাকায় হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লি. এর মার্কেটিং এ চাকুরী করতেন অনুজ কর্মকার।
বিয়ের কিছুদিন পর পান্না দাশ সুমিকে স্বামী ঢাকায় নিয়ে যান।পান্না দাশ সুমি ঢাকায় যাওয়ার কিছুদিন পর আস্তে আস্তে লম্পট স্বামীর লাম্পট্যতা তথা পরকীয়ার ব্যাপারে সব জানতে পারে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো।স্বামীর এসব অনৈতিক কাজে বেশ কিছুদিন ধরে স্বামীকে বাধা দেওয়ায় পান্না দাশ সুমি স্বামীর কাছে চক্ষুশুল হয়ে উঠে।পান্না দাশ সুমি ৫ মাসের অন্তসত্ত্বা অবস্থায়ও তার উপর বর্বর স্বামীর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরো বেড়ে যায়।
স্বামী অনুজ প্রতিদিন অফিস শেষে ও সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য ছুটির দিন অন্য মেয়ের সাথে সারাদিন ঘুরাঘুরি করার পর অর্ন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবিগুলো মোবাইলে ধারণ করে স্ত্রী পান্নাকে দেখাতো যাতে পান্না দাশ সুমি আরো মানসিক যন্ত্রণায় ভেঙ্গে পড়ে। একদিন এ নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে স্বামী অনুজ সুমির পেটে লাথি মেরে পেটের বাচ্চা নষ্ট করতে চাইলে পান্না দাশ সুমি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রামে বড় বোন জয়ার বাসায় চলে আসে।বড় বোন জয়ার বাসায় কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর পান্না দাশ সুমি একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান প্রসব করে।যার নাম রাখা হয় রিয়া এবং যার বর্তমান বয়স ১৪ মাস।তাদের কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার পরও দীর্ঘদিন স্ত্রী ও মেয়ের কোন খোঁজ খবর নেয়নি স্বামী অনুজ কর্মকার।কিছুদিন পর সুমির উপর আর কোন প্রকার নির্যাতন করবে না মর্মে মৌখিক আপোষের মাধ্যমে আবারো স্বামী অনুজ কর্মকার স্ত্রী পান্না দাশ সুমিকে ফের ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু ঢাকায় নেওয়ার কয়েকদিন পরই অনুজ কর্মকার পুনরায় পূর্বের ন্যায় স্ত্রীর উপর নির্যাতন আরম্ভ করে দেয়।
মামলার বাদী ছোট ভাই সঞ্জয় দাশ দি ক্রাইমকে জানান, গত ১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ২ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় ঢাকার বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডার ১৬ নং রোডের ১৮ নং বাড়ির ৬ তলার একটি ভবনে তারা আমার বোন সুমিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় আমার বড় ভাই প্রকাশ দাশ বাড্ডা থানায় মামলা করতে গেলে প্রভাবশালীদের চাপে রহস্যজনক কারণে বাড্ডা থানার পুলিশ রহস্যজনক কারণে হত্যা মামলা নেয়নি,বরং থানায় মামলা করতে গেলে অভিযুক্তরা থানায় বসে আমার বড় ভাইসহ সবাইকে হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকি মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে আমরা অবশেষে গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাশ চন্দ্র অধিকারীর আদালতে পান্না দাশ সুমির স্বামী অনুজ কর্মকার(৩২), শ্বাশুড়ি আল্পনা রায়(৬০) ও শ্বশুড় অর্জুন কর্মকারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করি।
সঞ্জয় দাশ দি ক্রাইমকে আরো জানান,বিয়ের পরও আমার বোনের স্বামী একটুও পরিবর্তন হয়নি। তার পরকীয়া ও লাম্পট্যতা অটুট থাকার কারণে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা,তর্কাতর্কি ঝগড়া-ঝাটি এসব প্রায়ই লেগে থাকতো। এতে আমার বোনের শ্বশুড়-শ্বাশুড়িও ছেলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছেলেকে মদদ দিত। বিয়ের পর থেকে আমার বোনটা ঐ পরিবারে একদিনের জন্যেও লাঞ্চনা-বঞ্চনা ছাড়া সুখ-শান্তি কিছুই পায়নি।
আরেকটি ঘটনায় ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল আমার বোনের সাথে তার স্বামীর তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আমার বোনকে তাদের বাসায় থাকা গাছের একটি বড় টুকরো দিয়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্ঠা চালায়। এতে তৎ সময়েও ঐ ঘটনার ব্যাপারে বাড্ডা থানায় অভিযোগ করতে গেলে তাও তখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে ও পুলিশের অসহযোগিতায় থানায় মামলা নেয়নি।বরং আপোষ মিমাংসার কথা বলে তাদের উভয়কে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর থেকে আমার বোনের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন আরও দ্বিগুন হারে বাড়তে থাকে। প্রতিদিন,প্রতিমুহুর্ত এভাবে নির্যাতনের খবর পেয়ে গত ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে আমি, আমার মা রুপশ্রী দাশ,বড় বোন জয়া দাশসহ আমরা সুমির ঢাকার বাসায় গেলে অভিযুক্তরা আমাদের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ ও আমাদের সামনেই আমার বোন পান্না দাশ সুমি’র উপর বর্বর শারীরিক নির্যাতন চালায়।
মামলার বাদী সঞ্জয় দাশ দি ক্রাইমকে আরো জানান,আমার বোনের ১৪ মাস বয়সের রিয়া দুগ্ধপোষ্য ছোট্ট শিশুটি অকালে মা হারা হয়ে গেল।সে এখন আমার বড় বোন জয়ার বাসায় আছে। ছোট্ট শিশুটি তার মা’কে কাছে না পাওয়ার কান্না ও চেচামেচি প্রতিটি মানুষকে আবেগতাড়িত করে তুলছে।আমার বোনকে দাহ করার সময় আমরা বোনের মাথায় ও গলায় কালো দাগ দেখতে পেয়েছি।যা থেকে অনুমান করা যায় মাথায় গুরুতর আঘাত ও শ্বাসরোধ করে অভিযুক্তরা আমার বোনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।এটি সম্পুর্ন পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।তাই আমি আমার বোনের এ হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী দিপঙ্কর ঘোষ দি ক্রাইমকে জানান, ঘটনার আলামত ও অবস্থানে মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।