সুকান্ত বিকাশ ধর, সাতকানিয়া: সাতকানিয়ায় গাছ থেকে আম পারতে নিষেধ করায় ওসামা বিন ছবুর (২১) নামের এক বাকপ্রতিবন্ধী কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে বস্তাবন্দী করে অপহরণের পর মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (০৬ মে) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশেকর পাড়া রেললাইন সংলগ্ন রাস্তার উপর থেকে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে।
অপহরণের পর থেকে সারারাত খোঁজাখুঁজি করে পরদিন বুধবার (০৭ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে (ফেসবুক) ওই বাক প্রতিবন্ধীকে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের আনু ফকিরের দোকান সংলগ্ন একটি বিল থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
অপহরণের শিকার কলেজ শিক্ষার্থী সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশেকর পাড়ার বাসিন্দা কাজী আবদুছ ছবুরের ছেলে এবং সাতকানিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (০৮ মে) অপহরণের শিকার বাকপ্রতিবন্ধীর বাবা কাজী আবদুছ ছবুর বাদী হয়ে একজনের নাম উল্লেখ ও পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইউএনও সাতকানিয়া থানার ওসিকে ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেছেন।
এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হলেন, মো. শাকিব (২৫)। তিনি সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশেকর পাড়ার বাসিন্দা মো. ইলিয়াছের ছেলে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত মো. শাকিব প্রায় সময় অপহরণের শিকার ওসামা বিন ছবুরদের ভাড়া বাসার পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে আম পেরে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সে পুনরায় গাছ থেকে আম পেরে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ওসামা বাঁধা প্রদান করেন। পরে একই দিন রাতে ভুক্তভোগী ওসামা তাদের ভাড়া বাসায় কবুতরকে খাবার দিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার সময় অভিযুক্ত শাকিব ও তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ যুবক নাকে ও মুখে চেতনা নাশক প্রয়োগ করে তাকে অজ্ঞান করে হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দী করে অচেতন অবস্থায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ঢেমশা ইউনিয়নের আনু ফকিরের দোকান সংলগ্ন একটি বিলে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ভুক্তভোগী ওসামাকে মারধর করেন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে তাকে ওই বিলে ফেলে চলে যায় অভিযুক্তরা। পরদিন বুধবার সকাল ৭ টার দিকে ফেসবুকের মাধ্যমে জানাজানি হলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিবারের সদস্যরা ওসামাকে অচেতন অবস্থায়
উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তার জ্ঞান ফিরলে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সে এ ঘটনায় জড়িতদের নাম ও ঠিকানা কাগজে লিখে দেয়। বর্তমানে ওসামা চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ওসামার বাবা কাজী আবদুছ ছবুর বলেন, আমার ছেলে একজন বাকপ্রতিবন্ধী। সে সাতকানিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে কথা বলতে না পারলেও লিখতে পারে। এ ঘটনায় জড়িতদের নাম ও ঠিকানা সে কাগজে লিখে আমাকে জানিয়েছে। মূলত আমাদের ভাড়া বাসার গাছ থেকে আম পারতে নিষেধ করায় শাকিব ও তার সাঙ্গ- পাঙ্গরা মিলে আমার ছেলেকে বস্তাবন্দী করে অপহরণ করেছে। তাকে একটি বিলে নিয়ে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। পরে অভিযুক্তরা তাকে ওই বিলে ফেলে রেখে চলে আসে। পরদিন আমরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে ছেলেকে উদ্ধার করেছি। বর্তমানে সে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে । এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ইউএনওর নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত মো. শাকিব বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী ওসামাদের আম গাছটি একদম রাস্তার পাশে। আমি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গাছে একটি পাঁকা আম দেখে গাছে কয়েকটি ঢিল ছুঁড়েছিলাম। পরে ওসামা আমাকে ইশারায় নিষেধ করলে আমি সেখান থেকে চলে যায়। ওইদিন রাত দুইটার পরে ওসামার পরিবার তাকে খুঁজে না পেয়ে আমার বাড়িতে এসেছিল। তখনও আমি বাড়িতে ছিলাম। এখন আমার বিরুদ্ধে কেন তারা অভিযোগ করছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। হয়তো অন্য কেউ এ ঘটনাটি ঘটিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, একটি বাকপ্রতিবন্ধী কলেজপাড়ুয়া শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জাহেদুল ইসলাম অভিযোগ হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভিকটিম যেহেতু বাকপ্রতিবন্ধী সেহেতু অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত চলমান রয়েছে।