নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সনাতনীদের মহাষ্টমী পুণ্যস্নানের স্থানকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নতুনভাবে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। এই জন্য সরকারকে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হবে খুব শিগগির। শুক্রবার(০৪ এপ্রিল) রাতে সনাতনীদের মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দে মহাঅষ্টমী পূণ্যস্নান উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এই উদ্যোগের কথা জানান জেলা প্রশাসক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
জেলা প্রশাসক জানান, আগামী বছর থেকে লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নানের সকল আয়োজনকে আরও বেশি প্রসারিত করার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনের সাথে যুক্ত হবে।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পূণ্যস্নানের এই আয়োজন সফল করতে একাধিকবার এখানে এসেছি এবং আমার কাছে মনে হয়েছে, ঐতিহাসিক এই স্থানের অবকাঠামো আরও অনেক বেশি উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা দ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি সরকারের কাছে নতুন একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করবো। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে লাঙ্গলবন্দের পূণ্যস্নানের এই পবিত্র স্থানটির আমূল পরিবর্তন হবে। আমি আশাবাদী, তখন আরও বেশি মানুষ এখানে আসবে পর্যটক হিসেবে।’
পূণ্যস্নানে অংশগ্রহণকারী দেশ-বিদেশের সকল অতিথিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মুসলমান, হিন্দু সকলেই একত্রিত হয়ে কাজ করেছি এবং আমরা কখনোই ভাবিনি যে এটি শুধুমাত্র সনাতন ধর্মীদের অনুষ্ঠান। বিশ্ববাসী দেখে যাক, আমাদের দেশে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করেন এবং এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে যুগ যুগ ধরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এই সহমর্মিতার স্পিরিটকে আমাদের ধরে রাখতে হবে, দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং মানবতার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।’
জেলা প্রশাসক পূণ্যস্নানের মাধ্যমে মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির যে ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে, তা আন্তরিকভাবে প্রশংসা করেন এবং এ ধরনের আয়োজনকে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। এই সভাটি শুধু পূণ্যস্নানের প্রস্তুতি নয়, বরং একে ঘিরে গড়ে ওঠা সম্প্রীতি, ঐক্য ও মানবিক চেতনার একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে।
এরপর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পূণ্যস্নান উপলক্ষে স্থাপিত বিভিন্ন সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তারা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং উপস্থিত জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করে সেবার মান সম্পর্কে তাদের মতামত গ্রহণ করেন। পরিদর্শনের শেষ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক লাঙ্গলবন্দের বিভিন্ন ঘাট ঘুরে দেখেন এবং পূণ্যস্নানের সকল প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে পর্যালোচনা করেন।
লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী পুণ্যস্নান। শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) রাত ২টা থেকে শুরু হয়ে ৫ এপ্রিল রাত ১২টা ৪৫ পর্যন্ত দু’দিনব্যাপী এই উৎসব চলবে। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উৎসবে মেতে উঠেছেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো লাখো পূণ্যার্থী সনাতনী ভক্তবৃন্দ।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসবকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থার অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো এই স্নানোৎসবে ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। পূণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য ম্যাপ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।