নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে চিকিৎসাকার্যক্রম পরিচালনার জন্যে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। গঠিত তদন্ত কমিটি আগামীকাল রোববার (১৬ মার্চ) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে গমন করে তদন্তকাজ সম্পাদন করবে। তদন্তকালে প্রয়োজনীয় দলিলাদিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মঈনুল আহসান গত ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালককে (স্বাস্থ্য) চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদেশ জারি করেছেন। মন্ত্রণালয়ে নির্দেশ মোতাবেক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা.অং সুই প্রু মারমাকে সভাপতি, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা.জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ারকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের পক্ষে সর্বশেষ লাইসেন্স ইস্যু করেন মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য),যার মেয়াদ ছিল ৩০ জুন ২০১৪ সাল পর্যন্ত। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে লুটেরা জাহাঙ্গীর তার নিকট আত্মীয় স্বজন দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছে। ২০১৬ সালে এনালগ পদ্ধতিতে লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে ২০১৭ সাল থেকে ডিজিটালাইজড লাইসেন্স পদ্ধতি চালু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এ প্রক্রিয়ায় নতুন করে লাইসেন্স নেয়নি চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল। সরকারি অনুমোদন না থাকলেও ডায়াবেটিস চিকিৎসার পাশাপাশি দেড়শ শয্যার এ হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীর জন্যে সিসিইউ, আইসিইউ, এসডিইউ,এইচডিইউ রয়েছে।
উলেখ্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় প্রতিবছর চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকা অনুদান দিতো। দুর্নীতির কারণে গতবছর স্বাস্থ্যমন্ত্রক সেই অনুদান বন্ধ করে দেয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মু. জসীম উদ্দিন ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তদন্ত করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে সেই টাকা ১৫দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। টাকা জমা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দিয়ে পুনঃতদন্তের আবেদন করেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী।
এ অবস্থায় আবার নতুন করে হাসপাতাল সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্ব পান স্বাস্থ্যমন্ত্রকের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন।গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পুনঃতদন্তেও সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের অনুকূলে সরকারি অনুদান প্রদান বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত সরকারি তহবিল তছরূপসহ স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি এবং সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ হাসপাতালের অনুকূলে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দ থেকে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১০ লাখ টাকা জরুরি ভিত্তিতে চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্নেহাশীষ দাশ । ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত জাহাঙ্গীর চৌধুরী সরকারি কোষাগারে সেই সাড়ে ২৭ লাখ টাকা জমা দেননি।
চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনও জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার অনিয়ম পেয়েছে দুদুক। অনুসন্ধান প্রায় শেষ পর্যায়ে।