নগর প্রতিবেদক: জামাল খানের চাঞ্চল্যকর শিশু বর্ষা ধর্ষণ, হত্যা ও লাশ গোপনের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসেনি দীর্ঘ আড়াই বছরেও।
কোতোয়ালি থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় তদন্ত ঝুলে আছে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ট আদালতে বাদী ও ভিকটিম পক্ষে একাধিকবার তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট তলব এর আবেদন করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্ট এর অপেক্ষায় তা এখনো ঝুলে আছে ।
এ বিষয়ে এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা সমূহ গুরুত্ব না দেয়ায় আজ একের পর এক নারকীয় শিশু ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একের পর এক শুধু মামলার তারিখ পড়ছে । তাহলে ৩০ দিনে শিশু ধর্ষন মামলার বিচার সমাপ্ত করার সিদ্ধান্তকে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, আসামী পক্ষ প্রভাবশালী বিধায় কৌশলে তদন্তকে প্রলম্বিত করানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী। আগামী ১৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন এর জন্যে দিন ধার্য আছে।
উল্লেখ্য, নরপশু আাসামী লক্ষন দাশ কর্তৃক পাশবিক নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে শিশু মারজান হক বর্ষাকে। জোর পূর্বক ধর্ষণের সময় রক্তাক্ত সাত বছরের নিষ্পাপ শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর বস্তায় ভরে লাশ গোপন করে ফেলে দেওয়া হয় নর্দমায়। বস্তায় টিসিবির সীলের সূত্র ধরেই লাশ উদ্ধারের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ ওই নরপশুকে পাকড়াও করেন। পুলিশের জেরার মুখে ফুটফুটে বর্ষাকে নিষ্ঠুরতম নির্যাতনে খুনের দায় স্বীকার করেছে ওই মুদি দোকানের কর্মচারী লক্ষণ দাশ (৩০)।আর এর মধ্য দিয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং নৃশংস শিশু বর্ষা হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়। আত্মস্বীকৃত খুনি- ধর্ষক এই পাষন্ডের ফাঁসি দাবি করেছেন বর্ষার স্বজন ও স্থানীয়রা । সামান্য একজন দোকান কর্মচারীর এমন ভয়ঙ্কর অপরাধে হতবাক জামালখানের স্থানীয় বাসিন্দারা ।
নগরীর ব্যস্ততম একটি এলাকায় একজন শিশুর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা নজিরবিহীন। ঘর থেকে বের হয়েই যদি এমন পাশবিকতার শিকার হতে হয় তা হলে এই নগরীতে কন্যা শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়- এমন প্রশ্নও সবার মুখে মুখে ।
পুলিশ বলছে,ভয়ঙ্কর অপরাধের পরও লক্ষণ ছিল নির্বিকার-নির্ভয়। তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও দেখা যায়নি। ধর্ষণ, খুন আর লাশ গুমের মতো ভয়ানক অপরাধ করার প্রায় তিনদিন পরও সে পালিয়ে যায়নি। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় জামালখান এলাকার শ্যামল স্টোর নামক মুদি দোকানের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
লক্ষণকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ১০০ টাকার লোভে শিশুটি লক্ষণের কথায় গোডাউনে যায়। কিন্তু সেখানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করতে চাইলে সে চিৎকার শুরু করে। তার হাতেপায়ে ধরে তাকে ছেড়ে দিতে বলে বর্ষা। কিন্তু তাতে লক্ষণের মন গলেনি। সে শিশুটির মুখ চেপে ধরে চৌকিতে শুইয়ে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। রক্তাক্ত হওয়ার পরও এই নরপশু তাকে ছাড়েনি। গ্রেফতার লক্ষণ দাশ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর পদুয়া গ্রামের ফেলেরাম দাশের পুত্র। জামালখানে গোপাল মুহুরীর গলির এ কে এম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় মুদি দোকান শ্যামল স্টোরের গোডাউনে থাকতো সে।
বর্ষাদের বাসাও একই গলিতে। চাঁদপুরের বাসিন্দা বর্ষার বাবা-মা সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ছয় বোনের মধ্যে সবার ছোট বর্ষা। তার এমন মৃত্যুতে পরিবারের চলছে শোকের মাতম। বর্ষার স্বজনেরা খুনি ধর্ষক লক্ষণের ফাঁসি দাবি করছেন, আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বর্ষার মা মামলার বাদী ঝর্ণা বেগম নিস্পাপ শিশুকন্যা বর্ষা হত্যার বিচার বিলম্বিত হওয়ায় প্রায় অর্ধ পাগল হয়ে গেছে।