দি ক্রাইম ডেস্ক: সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে থালা। তাতে একে একে দেওয়া হয় ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, নিমকি আর সেমাই। প্রতিটি থালার চারপাশে গোল করে বসেছেন পাঁচ থেকে ছয়জন। কিছুদূরে বরফের টুকরা নিয়ে বড় হাঁড়িতে চলছে শরবত তৈরি। গ্লাসে এনে দেওয়া হয় প্রত্যেকের পাশে। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজান ভেসে আসতেই এই শরবত পান করে শুরু হয় ইফতার।

এই দৃশ্য চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের। প্রায় ৩৮ বছর ধরে এভাবেই মসজিদটিতে আয়োজিত হয়ে আসছে গণ-ইফতার। নগরের অন্যতম পুরোনো এই মসজিদে পথচারী, শ্রমজীবীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ এই ইফতারে যোগ দেন। একই থালায় বসে ভেদাভেদ ভুলে ইফতার করেন তাঁরা। এ যেন সৌহার্দ্যের এক অনন্য উদাহরণ। প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক মানুষ এখানে ইফতারে শামিল হন।

জানা যায়, নগরের দামপাড়া এলাকায় ১৯৭৬ সালে প্রায় ১২ একর জায়গায় নির্মিত হয় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদটি। সে সময় ছোট পরিসরে ইফতারের আয়োজন করত মসজিদ কমিটি। ১৯৮৭ সাল থেকে মসজিদের সাবেক খতিব জালালউদ্দিন আল কাদেরী বড় পরিসরে গণ-ইফতার আয়োজন শুরু করেন। শুরু থেকে ইয়াকুব নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বর্তমানে ওই ব্যক্তির পরিবার ‘আলহাজ্ব ইয়াকুব ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট’–এর মাধ্যমে গণ-ইফতারে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। ২০১৩ সালে এ মসজিদের ব্যবস্থাপনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় আনা হয়। এর পর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ইফতার ও সাহ্‌রির আয়োজন চলছে। পাশাপাশি আরেকটি ট্রাস্ট এ বছর যুক্ত হয়েছে।

প্রতিবছর রমজানের শেষ ১০ দিনে এ মসজিদে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ ইতিকাফ আদায় করেন। এ বছর শেষ ১৫ রোজায় রোজাদারদের ইফতার ও সাহ্‌রির জন্য অর্থায়ন করবে সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী ট্রাস্ট। এ ছাড়া প্রতিদিন স্থানীয় লোকজনও মসজিদের রোজাদারদের জন্য ইফতার পাঠিয়ে থাকেন।

জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমুদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, শুরু থেকেই ছোট পরিসরে আয়োজন করা হতো ইফতার। পরে সেটি গণ-ইফতারে রূপ নেয়। ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে এভাবেই আয়োজন হয়ে আসছে। পথচারী, শ্রমিক, চাকরিজীবীসহ সবাই আসেন। সবার জন্য উন্মুক্ত।

গতকাল রোববার বিকেল চারটার দিকে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে গিয়ে দেখা গেল ইফতার আয়োজনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। মসজিদের পেছনের দিকের একটি বড় কক্ষে হয় এই ইফতারের আয়োজন। সেখানে একপাশে চার থেকে পাঁচটি বড় হাঁড়ি। এসব হাঁড়িতে বানানো হয়েছে শরবত। তাতে দেওয়া হয়েছে বড় আকৃতির বরফের টুকরা। একজন সেগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছেন। পাশে কয়েকজন বড় থালাগুলোতে ইফতারি সাজিয়ে দিচ্ছেন।

যে কক্ষে ইফতারের আয়োজন, তাঁর বাইরেই দেখা গেল ইফতার রান্নার সরঞ্জাম। জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে ইফতার প্রস্তুতির কার্যক্রম শুরু হয়। বাজার করা থেকে শুরু করে সব কেনাকাটা শেষে এখানেই রান্না হয়। মাঝে বাইরে থেকে কিনে আনা হয় রান্নার চেয়ে মানুষ বেশি হলে। আসরের নামাজ আদায়ের পরপর ইফতারি সাজিয়ে ফেলা হয়।

কথা বলে জানা গেল, এ দিন ৭০০ জনের ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। তবে অনায়াসে তা এক হাজার জন মিলেমিশে খেতে পারবেন। ইফতারের আয়োজনে ছিল ছোলা, পেঁয়াজু, নিমকিসহ আরও নানা পদ। মিষ্টান্ন হিসেবে রাখা হয়েছে সেমাই। আপাতত সাহ্‌রির আয়োজন নেই।

ইফতার আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেকে নিজে থেকে যোগ দেন। তাঁদের একজন ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে আমি এই ইফতারের সঙ্গে জড়িত। গত বছর আমার ছেলেকেই নিয়ে এসেছিলাম। এলাকার অনেক মানুষই আসেন। কেউ ছোলা রান্নায়, কেউ শরবত রান্নায় আবার কেউ তদারকিতে সহযোগিতা করেন।’

বিকেল পাঁচটার দিকে মসজিদ প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ আগে আসরের নামাজ আদায় করতে আসা লোকজনও সহযোগিতা শুরু করেন। দূর থেকে দেখে মনে হয় বিশাল কোনো পারিবারিক আয়োজন। কারণটা স্পষ্ট হয় সবার প্রতি সবার আচরণে। কে কোন পেশার কিংবা কোন শ্রেণির, তা নিয়ে আলাপ–আলোচনা নেই। ইফতারির থালা ঘিরে তৈরি হয়েছে এক অনন্য সৌহার্দ্য।

এর মধ্যে ইফতার আয়োজনের স্থানে যোগ দিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মেজবাহ উদ্দিনও। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেবল ব্যবস্থাপনা করে, তবে আয়োজনের মূল কৃতিত্ব তাঁদের, যাঁরা এর সঙ্গে শুরু থেকে জড়িত। প্রতিবছর রোজার মাসেই এমন সৌহার্দ্য দেখা যায়।

এক পাশে একটি থালায় বসেছেন শ্রমজীবী তারেক, শিক্ষার্থী ইশতিয়াক, মারুফ; সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক কফিলসহ আরও কয়েকজন। মারুফ সেখানে সবার ছোট, সবে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বড় ভাই ইশতিয়াক ইফতারের থালা আনা-নেওয়া করছেন। মারুফ তখন কফিল মিয়ার সঙ্গে পুরো দিনের গল্প নিয়ে ব্যস্ত। জানতে চাইলে কফিল মিয়ার সহজ জবাব, ‘এটাও একটা পরিবার’।

দি ক্রাইম ডেস্ক: সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে থালা। তাতে একে একে দেওয়া হয় ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, নিমকি আর সেমাই। প্রতিটি থালার চারপাশে গোল করে বসেছেন পাঁচ থেকে ছয়জন। কিছুদূরে বরফের টুকরা নিয়ে বড় হাঁড়িতে চলছে শরবত তৈরি। গ্লাসে এনে দেওয়া হয় প্রত্যেকের পাশে। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজান ভেসে আসতেই এই শরবত পান করে শুরু হয় ইফতার।

এই দৃশ্য চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের। প্রায় ৩৮ বছর ধরে এভাবেই মসজিদটিতে আয়োজিত হয়ে আসছে গণ-ইফতার। নগরের অন্যতম পুরোনো এই মসজিদে পথচারী, শ্রমজীবীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ এই ইফতারে যোগ দেন। একই থালায় বসে ভেদাভেদ ভুলে ইফতার করেন তাঁরা। এ যেন সৌহার্দ্যের এক অনন্য উদাহরণ। প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক মানুষ এখানে ইফতারে শামিল হন।

জানা যায়, নগরের দামপাড়া এলাকায় ১৯৭৬ সালে প্রায় ১২ একর জায়গায় নির্মিত হয় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদটি। সে সময় ছোট পরিসরে ইফতারের আয়োজন করত মসজিদ কমিটি। ১৯৮৭ সাল থেকে মসজিদের সাবেক খতিব জালালউদ্দিন আল কাদেরী বড় পরিসরে গণ-ইফতার আয়োজন শুরু করেন। শুরু থেকে ইয়াকুব নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বর্তমানে ওই ব্যক্তির পরিবার ‘আলহাজ্ব ইয়াকুব ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট’–এর মাধ্যমে গণ-ইফতারে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। ২০১৩ সালে এ মসজিদের ব্যবস্থাপনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় আনা হয়। এর পর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ইফতার ও সাহ্‌রির আয়োজন চলছে। পাশাপাশি আরেকটি ট্রাস্ট এ বছর যুক্ত হয়েছে।

প্রতিবছর রমজানের শেষ ১০ দিনে এ মসজিদে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ ইতিকাফ আদায় করেন। এ বছর শেষ ১৫ রোজায় রোজাদারদের ইফতার ও সাহ্‌রির জন্য অর্থায়ন করবে সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী ট্রাস্ট। এ ছাড়া প্রতিদিন স্থানীয় লোকজনও মসজিদের রোজাদারদের জন্য ইফতার পাঠিয়ে থাকেন।

জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমুদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, শুরু থেকেই ছোট পরিসরে আয়োজন করা হতো ইফতার। পরে সেটি গণ-ইফতারে রূপ নেয়। ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে এভাবেই আয়োজন হয়ে আসছে। পথচারী, শ্রমিক, চাকরিজীবীসহ সবাই আসেন। সবার জন্য উন্মুক্ত।

গতকাল রোববার বিকেল চারটার দিকে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে গিয়ে দেখা গেল ইফতার আয়োজনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। মসজিদের পেছনের দিকের একটি বড় কক্ষে হয় এই ইফতারের আয়োজন। সেখানে একপাশে চার থেকে পাঁচটি বড় হাঁড়ি। এসব হাঁড়িতে বানানো হয়েছে শরবত। তাতে দেওয়া হয়েছে বড় আকৃতির বরফের টুকরা। একজন সেগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছেন। পাশে কয়েকজন বড় থালাগুলোতে ইফতারি সাজিয়ে দিচ্ছেন।

যে কক্ষে ইফতারের আয়োজন, তাঁর বাইরেই দেখা গেল ইফতার রান্নার সরঞ্জাম। জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে ইফতার প্রস্তুতির কার্যক্রম শুরু হয়। বাজার করা থেকে শুরু করে সব কেনাকাটা শেষে এখানেই রান্না হয়। মাঝে বাইরে থেকে কিনে আনা হয় রান্নার চেয়ে মানুষ বেশি হলে। আসরের নামাজ আদায়ের পরপর ইফতারি সাজিয়ে ফেলা হয়।

কথা বলে জানা গেল, এ দিন ৭০০ জনের ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। তবে অনায়াসে তা এক হাজার জন মিলেমিশে খেতে পারবেন। ইফতারের আয়োজনে ছিল ছোলা, পেঁয়াজু, নিমকিসহ আরও নানা পদ। মিষ্টান্ন হিসেবে রাখা হয়েছে সেমাই। আপাতত সাহ্‌রির আয়োজন নেই।

ইফতার আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেকে নিজে থেকে যোগ দেন। তাঁদের একজন ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে আমি এই ইফতারের সঙ্গে জড়িত। গত বছর আমার ছেলেকেই নিয়ে এসেছিলাম। এলাকার অনেক মানুষই আসেন। কেউ ছোলা রান্নায়, কেউ শরবত রান্নায় আবার কেউ তদারকিতে সহযোগিতা করেন।’

বিকেল পাঁচটার দিকে মসজিদ প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ আগে আসরের নামাজ আদায় করতে আসা লোকজনও সহযোগিতা শুরু করেন। দূর থেকে দেখে মনে হয় বিশাল কোনো পারিবারিক আয়োজন। কারণটা স্পষ্ট হয় সবার প্রতি সবার আচরণে। কে কোন পেশার কিংবা কোন শ্রেণির, তা নিয়ে আলাপ–আলোচনা নেই। ইফতারির থালা ঘিরে তৈরি হয়েছে এক অনন্য সৌহার্দ্য।

এর মধ্যে ইফতার আয়োজনের স্থানে যোগ দিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মেজবাহ উদ্দিনও। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেবল ব্যবস্থাপনা করে, তবে আয়োজনের মূল কৃতিত্ব তাঁদের, যাঁরা এর সঙ্গে শুরু থেকে জড়িত। প্রতিবছর রোজার মাসেই এমন সৌহার্দ্য দেখা যায়।

এক পাশে একটি থালায় বসেছেন শ্রমজীবী তারেক, শিক্ষার্থী ইশতিয়াক, মারুফ; সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক কফিলসহ আরও কয়েকজন। মারুফ সেখানে সবার ছোট, সবে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বড় ভাই ইশতিয়াক ইফতারের থালা আনা-নেওয়া করছেন। মারুফ তখন কফিল মিয়ার সঙ্গে পুরো দিনের গল্প নিয়ে ব্যস্ত। জানতে চাইলে কফিল মিয়ার সহজ জবাব, ‘এটাও একটা পরিবার’।