স ম জিয়াউর রহমান: অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যার যে হুমকি দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা এবং ঘৃণা জানিয়েছে।
সারজিস আলম প্রকাশ্যে ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ঘোষণা দিয়ে বলেন, “শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির কাস্টে ঝুলানোর আগ পর্যন্ত কেউ যেন বাংলাদেশে নির্বাচনের কথা না বলে।”
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ‘৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রতিশোধ নিতে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এবং অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। সে লক্ষ্যে তারা বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে কাল্পনিক ও মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে গণহত্যার মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তড়িঘড়ি করে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের বিচারক নিয়োগ করে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের প্রধান আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়। আইনের শাসনের সকল নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা শেখ হাসিনা সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জাতীয় নেতৃবৃন্দের অসাংবিধানিক ও প্রহসন মূলক বিচার শুরু করে। সারজিস আলমের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘোষণা নগ্ন ভাবে এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশে আজ ন্যায়বিচার ও বিচার বিভাগের কোন স্বাধীনতা নেই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ছিটে ফোটাও নেই। দেশটিকে তারা বর্বর মধ্যযুগে নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী এই অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তী সরকারের এ সকল কর্মকাণ্ড অবলোকন করলে এটি পরিষ্কার, তারা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে হত্যা করতে চায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে কাল্পনিক ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে মানবতা বিরোধী অপরাধের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। এই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রহসনমূলকভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার যে নীলনকশা চূড়ান্ত করেছে, সারজিস আলম আজ প্রকাশ্যে সেটিই ঘোষণা করলো।
বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই নীলনকশাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে এবং এর বিচারের ভার দেশবাসী ও বিশ্ব বিবেকের কাছে রাখছে। এই অসাংবিধানিক ও অবৈধ জঙ্গি সরকার বাংলাদেশকে আজ একটি মধ্যযুগীয় বর্বর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। অথচ ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের নীতির উপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত দেড় দশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কঠোর পরিশ্রম ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে একটি সাজানো ফুলের বাগানের মতো গড়েছিলেন। বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তির অপতৎপরতা এই সাজানো বাগানকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। ৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে সারাদেশে পুলিশ হত্যাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষদের উপর হত্যাসহ ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে যা গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে।
দেশে আজ ব্যাপক অরাজকতা চলছে। কারো জানমালের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। যত্রতত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ৫ আগস্টের পর সারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বাড়ি-জমি-দোকানপাট- ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, চুরি- ডাকাতি প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডি ৩২ এর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত বঙ্গবন্ধু ভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একইভাবে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত সকল জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মন্ত্রী- এমপি, সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাসহ অসংখ্য মানুষকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট এর নামে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনমূহের লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক ও ভোটারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মামলায় অন্তর্ভুক্ত এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবীরা পর্যন্ত আদালতে যেতে পারছেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর ব্যাপক নিপীড়ন মূলক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় আইন ও পলিসি বিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের সিভিল প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে। জাতির বিবেক শিক্ষকদের উপর দেশব্যাপী ব্যাপক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে যা পরিষ্কার দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস।
অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠী রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাতিল করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তী সরকারের এই ঘৃণ্যতম মধ্যযুগীয়, জঘন্য এবং অসাংবিধানিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছে। চোখের সামনে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে তারা ধ্বংস করছে- এটি বিবেকবান কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমরা তা হতে দেব না।