এস এম আকাশ ও এমরান হোসেন, ফটিকছড়ি থেকে: এশিয়া উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলীয়ে কামেল আধ্যাত্নিক শরাফতের সাধক,ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হযরত শাহছুফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) মাইজভান্ডারীর ১১৯তম বার্ষিক ওরশের প্রধান দিবস (১০ মাঘ) কাল শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে ঐতিহাসিক ১০ মাঘ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে,মাইজভান্ডার এলাকা সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ধর্ম বর্ণ গােত্র নির্বিশেষে দেশ ও বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেক ভক্ত এই মহান দিবস উপলক্ষে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে সমবেত হয়েছেন। তাদের প্রেম ও ভক্তিপূর্ণ অর্ঘ্যদান করছেন। বহু আশেক ভক্ত গরু,মহিষ,গয়াল, ছাগল,মুরগীসহ যার যার সামর্থ অনুযায়ী হাদিয়া নজরানা নিয়ে জিকির ও জুলুশ সহকারে দরবারে হাজির হয়েছেন। মাইজভান্ডার দরবার শরীফসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় লক্ষ্য লক্ষ্য লােকে লােকারণ্য হয়ে গেছে। পথের পাশ বসেছে বাঙালি কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ ঐতিহ্যবাহী মাঘের মেলা। এ মেলাকে ঘিরে যেন শান্তিময় সাম্যবাদী বাঙালি জাতির সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার এক অভূতপূর্ব মহাসম্মিলন ঘটেছে। আলােকসজ্জা করা হয়েছে হযরত আহমদ উল্লাহ (ক,) রওজাসহ অন্যান্য রওজা এবং মঞ্জিল গুলোতে। ওরশে আগত আশেক,ভক্ত,মুরিদান,জায়েরীনদের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্কলা রক্ষার জন্য ১জন ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন,ব্যাব,পুলিশ,আনসার,স্ব স্ব মঞ্জিলের স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ওরশ শরীফে ক্লোজ-সার্কিটি ক্যামেরা ও ভিডিও চিত্র ধারণের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারী করা হচ্ছে।
শুক্রবার যথাক্রমে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজাদ্দানশীন সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারি (ম.)। এসময় উপস্থিত থাকবেন নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারী (ম.)। অন্য দিকে মুনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের মোন্তাজেম ও সাজাদ্দানশীন সৈয়দ ডা.দিদারুল হক মাইজভান্ডারি (ম.)। এসময় উপস্থিত থাকবেন নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ হোসেইন রাইফ নুরুল ইসলাম রুবাব মাইজভান্ডারি (ম.)। অপর দিকে সৈয়দ মনিরুল হক মাইজভান্ডারির পক্ষে পুত্রগণ সৈয়দ আহমদ হোসাইন শাহরিয়ার মাইজভান্ডারি (ম.),সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন সোহেল মাইজভান্ডারি (ম.) মুনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারীর সচিব নাজমুল হাসান মাহমুদ শিমুল।
পূর্ব দিকে মুনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছিয়া হক মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ মো.হাসান মাইজভান্ডারী (ম.),গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন ছৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারি (ম.),গাউছিয়া মঈনিয়া মঞ্জিলের সাজাদ্দাশীন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারি (ম.),গাউছিয়া আমিন মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ সামশুল আরেফীন মাইজভান্ডারি (বাবুল মিয়া), গাউছিয়া গায়েবিধন মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ আবুল মুনসুর মাইজভান্ডারি (ম.), নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুর রহমান (মিজান) মাইজভান্ডারি (ম.), গাউছিয়া সামস মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ গোলাম মরতুজা মাইজভান্ডারি (ম.), নায়েবে সাজাদানশীন সৈয়দ আবু ছালেহ জঙ্গি মাইজভান্ডারি (ম.)।
হযরত কেবলা গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী মওলানা শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) ১২৩৩ বাংলা পহেলা মাঘ,রোজ বুধবার জোহরের সময় জন্মগ্রহন করেন।
৭৯ বছর বয়সে ১৯০৬ সালে (১৩১৩ বঙ্গাব্দে ১০ মাঘ) সোমবার দিবাগত রাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। চার বছর বয়সে গ্রাম্য মক্তবে হযরতের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১২৬৮ হিজরীতে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। হিজরী ১২৬৯ সালে তিনি যশোর জেলায় বিচারক পদে যোগদান করেন। ১২৭০ হিজরীতে বিচারক পদ থেকে পদত্যাগ করে কলকাতার মুন্সি বু-আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদার্রেছের পদে যোগদান করেন। তার পীরে তরিকত ছিলেন শেখ সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী লাহোরী (রহ:)।
অপরদিকে পীরে তরিক্বতের বড় ভাই হযরত শাহ সৈয়দ দেলাওয়ার আলী পাকবাজ (রহ:) এর কাছ থেকে কুতুবিয়তের ফয়েজ অর্জন করেন। বিল আছালত বা স্বভাব সিদ্ধ অলি হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) তার পীরে ত্বরিকতের নিদের্শে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার বুযুর্গীর কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তার দরবারে ভীড় জমায়। লোকসমাজে পরিচিতি পায় ‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফ’ হিসেবে। ওফাতের পরও তার পবিত্র মাজারে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয় ঐতিহাসিক এই ১০ই মাঘ।