আন্তজার্তিক ডেস্ক: কখনও যুদ্ধবিমানের গর্জন। কখনও আবার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে হামলা। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা লড়াইয়ে ইউক্রেনের একের এক শহরকে ধূলোর মিশিয়ে দিয়েছে মস্কো। রুশ ভূখণ্ডে কিভের পাল্টা প্রত্যাঘাত একমাত্র কুর্স্ক এলাকায়। সেখানে ঢুকে পড়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একরকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ইউক্রেনীয় ফৌজ। যুদ্ধের তিন বছরের মাথায় একে ‘প্রতীকী বিজয়’ বলে উল্লেখও করে কিভ। কিন্তু প্রতিরক্ষ বিশ্লেষকদের দাবি, কুর্স্ক দখল করে রুশ জেনারেলদের মোটেই বিপদে ফেলতে পারেনি ইউক্রেন।

শুধু তা-ই নয়, আর্থিক এবং কৌশলগত দিক থেকে এলাকাটি কব্জা করে কিভ যে দুর্দান্ত লাভবান হয়েছে, এমনটাও নয়। বরং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির ওই পদক্ষেপ মস্কোকে অত্যাধুনিক হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দরজা খুলতে সাহায্য করেছে।

গত বছরের ৬ অগস্ট প্রথম বার কুর্স্কে আক্রমণ শানায় জ়েলেনস্কির সেনা। ইউক্রেনীয় ফৌজের কাছে এটা ছিল অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ। এর জন্য কামান বাহিনীকে একত্রিত করে দ্রুত সুসংহত আক্রমণ শানায় তারা। ফলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই রাশিয়ার সুদজশহর-সহ ১,২৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চলে যায় কিভের দখলে।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কুর্স্ক আক্রমণের মধ্যে দিয়ে ইউক্রেনীয় জেনারেলরা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। প্রথমত, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ফ্রন্ট থেকে রুশ সেনাকে অন্যত্র সরতে বাধ্য করা। দ্বিতীয়ত, ডনবাস এলাকায় পুতিন ফৌজের সাঁড়াশি আক্রমণ থেকে বাঁচতে চাইছিলেন তাঁরা।

‘অপারেশন কুর্স্ক’-এর প্রাথমিক সাফল্যের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জ়েলেনস্কির প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। অতি উৎসাহে তাঁর ফৌজ রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের আরও কিছুটা ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মস্কোর পাতা ফাঁদে ইউক্রেনীয় সেনারা জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একাংশ।

সূত্রের খবর, কুর্স্ক পুনরুদ্ধার করতে অতিরিক্ত ৫০ হাজার সৈন্য ওই রণাঙ্গনে পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার ১২ হাজার সেনা। মস্কোর সঙ্গে বিশেষ ফৌজি চুক্তির জেরে যা ইউক্রেনের রণাঙ্গনে পাঠিয়েছেন পিয়ংইয়ংয়ের সুপ্রিম লিডার কিম জং-উন। জ়েলেনস্কি-সেনাকে এই যৌথবাহিনী ঘিরে ফেলেছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

পাশাপাশি, কুর্স্কে ইউক্রেনীয় সেনাকে নাস্তানাবুদ করতে বিমানবাহিনীকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিন দিক থেকে রণাঙ্গণে ঢুকতে শুরু করেছে মস্কোর ট্যাঙ্ক। পিছন থেকে তাঁদের মদত জুগিয়ে চলেছে ক্রেমলিনের গোলন্দাজেরা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই চাপ সহ্য করা জ়েলেনস্কির ফৌজের পক্ষে কঠিন।

গত বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যে কুর্স্কের অর্ধেক এলাকা পুনরুদ্ধার করে নেয় রুশ বাহিনী। ওই ফ্রন্টে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে ইউক্রেনীয় সেনা। এই অবস্থায় চাপ বজায় রাখতে এ বছরের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় কুর্স্কের বেশ কিছু এলাকায় আক্রমণ শানিয়েছে কিভ। সেখানে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া জ়েলেনস্কির ফৌজ।

সূত্রের খবর, বার্ডিন, লিওনিডোভো এবং বলশোয়ে সোলদাৎসকোয়ের মতো এলাকাগুলিতে পুতিনের স্থলসেনার সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ জড়িয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। রুশ ফৌজের রসদ, গোলাবারুদ সরবরাহের রাস্তা বন্ধ করা এবং হাতিয়ার ডিপো ওড়ানোকেই প্রাথমিক ভাবে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন কিভের জেনারেলরা।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

অন্য দিকে যত সময় গড়াচ্ছে ততই ফৌজকে আরও বেশি সংঘবদ্ধ করে আক্রমণ শানাচ্ছে রাশিয়া। এতে ইউক্রেনীয় বাহিনীতে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। বিশ্লেষকদের দাবি, কিছুটা ইচ্ছা করেই জেলেনস্কির সেনাকে কুর্স্কে ঢুকতে দিয়েছিল মস্কো। প্রেসিডেন্ট পুতিনের পাতা ফাঁদে পা দেন ইউক্রেনীয় জেনারেলরা।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, কুর্স্কে কিভের বাহিনীকে কিছু দিনের জন্য আটকে রাখতে চেয়েছিলেন রুশ সেনাকর্তারা। তাই প্রথম বার আক্রমণের সময়ে সে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেননি তাঁরা। উল্টে সেনাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে ডনবাস এলাকায় মোতায়েন করে মস্কো। এর পর সেখান থেকে ইউক্রেনের একের পর এক শিল্প শহরকে দূরপাল্লার কামান, রকেট এবং হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করতে থাকে পুতিন ফৌজ।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধ যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউক্রেনের আরও কয়েকটি শিল্প শহর রাশিয়ার কব্জায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে কুর্স্ক টিঁকিয়ে রাখার মতো গোলাবারুদ এবং সৈন্য ইউক্রেনের হাতে নেই। যুদ্ধে পরাজয় হলে তার নেপথ্যে এটা অন্যতম বড় কারণ হতে পারে।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

আর্থিক এবং কৌশলগত দিক থেকেও ইউক্রেনের কুর্স্ক দখলকে বেশি নম্বর দিতে নারাজ দুনিয়ার তাবদ সেনাকর্তারাও। কারণ, রুশ ভূখণ্ডের এই এলাকাটি মূলত কৃষিকাজের জন্য পরিচিত। উল্টো দিকে কিভের যে ডনবাস এলাকা মস্কোর কব্জায় গিয়েছে, সেটি ছিল পুরোপুরি ভাবে শিল্প সমৃদ্ধ। শুধুমাত্র জাপোরিজি দখল করে রুশ প্রেসিডেন্ট যা পেয়েছেন, তাতে আরও তিন-চার বছর যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তিনি।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্রের খবর, কুর্সিতে বসেই যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন তিনি। এ ব্যাপারে সমাধানসূত্র পেতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন তিনি।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে গোটা কুর্স্ক পুনর্দখলের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন রুশ প্রেডিসেন্ট। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তাঁর সেনা অফিসারেরা। নতুন করে ইউক্রেনে আক্রমণের তীব্রতা বাড়াচ্ছেন তাঁরা।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

ইউক্রেনের শক্তিমন্ত্রী হেরম্যান হুলশচেঙ্কো জানিয়েছেন, দেশের মূল ভূখণ্ডে ব্যাপক আকারে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালাচ্ছে রুশ সেনা। নতুন নতুন শহরকে নিশানা করা হচ্ছে। কারখানা থেকে শুরু করে উঁচু ইমারতগুলিকে চোখের নিমেশে ধসিয়ে দিচ্ছে মস্কোর রকেট ফোর্স।

গত বছরের ২১ নভেম্বরে ইউক্রেনীয় শহর ডেনিপ্রোতে আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল বা আইসিবিএম) ‘ওরেশনিক’ দিয়ে হামলা চালায় পুতিন ফৌজ। প্রথম বার কোনও যুদ্ধে এই ধরনের অত্যাধুনিক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল মস্কো। প্রেসিডেন্ট পুতিনের অপারেশন ডেনিপ্রোর পর থেকে রাজধানী কিভ-সহ গোটা ইউক্রেনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে কুর্স্ক নিয়ে দর কষাকষির রাস্তায় যেতে পারেন প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি। কিন্তু তাতে কিভের কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, আলোচনার টেবিলে বসার আগে রুশ ভূখণ্ডের ওই এলাকা কত ক্ষণ তাঁর ফৌজ ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্বের তাবড় সেনাকর্তারা।সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

আন্তজার্তিক ডেস্ক: কখনও যুদ্ধবিমানের গর্জন। কখনও আবার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে হামলা। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা লড়াইয়ে ইউক্রেনের একের এক শহরকে ধূলোর মিশিয়ে দিয়েছে মস্কো। রুশ ভূখণ্ডে কিভের পাল্টা প্রত্যাঘাত একমাত্র কুর্স্ক এলাকায়। সেখানে ঢুকে পড়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একরকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ইউক্রেনীয় ফৌজ। যুদ্ধের তিন বছরের মাথায় একে ‘প্রতীকী বিজয়’ বলে উল্লেখও করে কিভ। কিন্তু প্রতিরক্ষ বিশ্লেষকদের দাবি, কুর্স্ক দখল করে রুশ জেনারেলদের মোটেই বিপদে ফেলতে পারেনি ইউক্রেন।

শুধু তা-ই নয়, আর্থিক এবং কৌশলগত দিক থেকে এলাকাটি কব্জা করে কিভ যে দুর্দান্ত লাভবান হয়েছে, এমনটাও নয়। বরং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির ওই পদক্ষেপ মস্কোকে অত্যাধুনিক হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দরজা খুলতে সাহায্য করেছে।

গত বছরের ৬ অগস্ট প্রথম বার কুর্স্কে আক্রমণ শানায় জ়েলেনস্কির সেনা। ইউক্রেনীয় ফৌজের কাছে এটা ছিল অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ। এর জন্য কামান বাহিনীকে একত্রিত করে দ্রুত সুসংহত আক্রমণ শানায় তারা। ফলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই রাশিয়ার সুদজশহর-সহ ১,২৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চলে যায় কিভের দখলে।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কুর্স্ক আক্রমণের মধ্যে দিয়ে ইউক্রেনীয় জেনারেলরা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। প্রথমত, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ফ্রন্ট থেকে রুশ সেনাকে অন্যত্র সরতে বাধ্য করা। দ্বিতীয়ত, ডনবাস এলাকায় পুতিন ফৌজের সাঁড়াশি আক্রমণ থেকে বাঁচতে চাইছিলেন তাঁরা।

‘অপারেশন কুর্স্ক’-এর প্রাথমিক সাফল্যের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জ়েলেনস্কির প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। অতি উৎসাহে তাঁর ফৌজ রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের আরও কিছুটা ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মস্কোর পাতা ফাঁদে ইউক্রেনীয় সেনারা জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একাংশ।

সূত্রের খবর, কুর্স্ক পুনরুদ্ধার করতে অতিরিক্ত ৫০ হাজার সৈন্য ওই রণাঙ্গনে পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার ১২ হাজার সেনা। মস্কোর সঙ্গে বিশেষ ফৌজি চুক্তির জেরে যা ইউক্রেনের রণাঙ্গনে পাঠিয়েছেন পিয়ংইয়ংয়ের সুপ্রিম লিডার কিম জং-উন। জ়েলেনস্কি-সেনাকে এই যৌথবাহিনী ঘিরে ফেলেছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

পাশাপাশি, কুর্স্কে ইউক্রেনীয় সেনাকে নাস্তানাবুদ করতে বিমানবাহিনীকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিন দিক থেকে রণাঙ্গণে ঢুকতে শুরু করেছে মস্কোর ট্যাঙ্ক। পিছন থেকে তাঁদের মদত জুগিয়ে চলেছে ক্রেমলিনের গোলন্দাজেরা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই চাপ সহ্য করা জ়েলেনস্কির ফৌজের পক্ষে কঠিন।

গত বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যে কুর্স্কের অর্ধেক এলাকা পুনরুদ্ধার করে নেয় রুশ বাহিনী। ওই ফ্রন্টে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে ইউক্রেনীয় সেনা। এই অবস্থায় চাপ বজায় রাখতে এ বছরের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় কুর্স্কের বেশ কিছু এলাকায় আক্রমণ শানিয়েছে কিভ। সেখানে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া জ়েলেনস্কির ফৌজ।

সূত্রের খবর, বার্ডিন, লিওনিডোভো এবং বলশোয়ে সোলদাৎসকোয়ের মতো এলাকাগুলিতে পুতিনের স্থলসেনার সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ জড়িয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। রুশ ফৌজের রসদ, গোলাবারুদ সরবরাহের রাস্তা বন্ধ করা এবং হাতিয়ার ডিপো ওড়ানোকেই প্রাথমিক ভাবে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন কিভের জেনারেলরা।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

অন্য দিকে যত সময় গড়াচ্ছে ততই ফৌজকে আরও বেশি সংঘবদ্ধ করে আক্রমণ শানাচ্ছে রাশিয়া। এতে ইউক্রেনীয় বাহিনীতে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। বিশ্লেষকদের দাবি, কিছুটা ইচ্ছা করেই জেলেনস্কির সেনাকে কুর্স্কে ঢুকতে দিয়েছিল মস্কো। প্রেসিডেন্ট পুতিনের পাতা ফাঁদে পা দেন ইউক্রেনীয় জেনারেলরা।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, কুর্স্কে কিভের বাহিনীকে কিছু দিনের জন্য আটকে রাখতে চেয়েছিলেন রুশ সেনাকর্তারা। তাই প্রথম বার আক্রমণের সময়ে সে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেননি তাঁরা। উল্টে সেনাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে ডনবাস এলাকায় মোতায়েন করে মস্কো। এর পর সেখান থেকে ইউক্রেনের একের পর এক শিল্প শহরকে দূরপাল্লার কামান, রকেট এবং হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করতে থাকে পুতিন ফৌজ।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধ যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউক্রেনের আরও কয়েকটি শিল্প শহর রাশিয়ার কব্জায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে কুর্স্ক টিঁকিয়ে রাখার মতো গোলাবারুদ এবং সৈন্য ইউক্রেনের হাতে নেই। যুদ্ধে পরাজয় হলে তার নেপথ্যে এটা অন্যতম বড় কারণ হতে পারে।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

আর্থিক এবং কৌশলগত দিক থেকেও ইউক্রেনের কুর্স্ক দখলকে বেশি নম্বর দিতে নারাজ দুনিয়ার তাবদ সেনাকর্তারাও। কারণ, রুশ ভূখণ্ডের এই এলাকাটি মূলত কৃষিকাজের জন্য পরিচিত। উল্টো দিকে কিভের যে ডনবাস এলাকা মস্কোর কব্জায় গিয়েছে, সেটি ছিল পুরোপুরি ভাবে শিল্প সমৃদ্ধ। শুধুমাত্র জাপোরিজি দখল করে রুশ প্রেসিডেন্ট যা পেয়েছেন, তাতে আরও তিন-চার বছর যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তিনি।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্রের খবর, কুর্সিতে বসেই যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন তিনি। এ ব্যাপারে সমাধানসূত্র পেতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন তিনি।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে গোটা কুর্স্ক পুনর্দখলের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন রুশ প্রেডিসেন্ট। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তাঁর সেনা অফিসারেরা। নতুন করে ইউক্রেনে আক্রমণের তীব্রতা বাড়াচ্ছেন তাঁরা।

Ukraine Army offensive operation in Kursk is not a strategic win but a Russian trap say experts

ইউক্রেনের শক্তিমন্ত্রী হেরম্যান হুলশচেঙ্কো জানিয়েছেন, দেশের মূল ভূখণ্ডে ব্যাপক আকারে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালাচ্ছে রুশ সেনা। নতুন নতুন শহরকে নিশানা করা হচ্ছে। কারখানা থেকে শুরু করে উঁচু ইমারতগুলিকে চোখের নিমেশে ধসিয়ে দিচ্ছে মস্কোর রকেট ফোর্স।

গত বছরের ২১ নভেম্বরে ইউক্রেনীয় শহর ডেনিপ্রোতে আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল বা আইসিবিএম) ‘ওরেশনিক’ দিয়ে হামলা চালায় পুতিন ফৌজ। প্রথম বার কোনও যুদ্ধে এই ধরনের অত্যাধুনিক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল মস্কো। প্রেসিডেন্ট পুতিনের অপারেশন ডেনিপ্রোর পর থেকে রাজধানী কিভ-সহ গোটা ইউক্রেনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে কুর্স্ক নিয়ে দর কষাকষির রাস্তায় যেতে পারেন প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি। কিন্তু তাতে কিভের কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, আলোচনার টেবিলে বসার আগে রুশ ভূখণ্ডের ওই এলাকা কত ক্ষণ তাঁর ফৌজ ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্বের তাবড় সেনাকর্তারা।সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা