স্পোর্টস ডেস্ক: ‘আমি সেই সুতো হবো, যে তোমায় আলোকিত করে, নিজে জ্বলে যাবো। আমি সেই নৌকো হবো, যে তোমায় পার করে নিজেই ডুবে যাবো।’ তাহসানের এই গানটা এখন গাইতেই পারেন সাকিব আল হাসান। সদ্য ঘোষিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা পাননি এই টাইগার অলরাউন্ডার। অথচ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলছেই সাকিবের জন্য! যে সাকিব চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তুললেন টাইগারদের, সেই তিনিই পারবেন না খেলতে!
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার জন্য ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। সেই ম্যাচে জেতার জন্য কী করেননি সাকিব। নিজের ব্যাটিং, বোলিংয়ের পাশাপাশি তার চমকেই প্রথমবারের মতো বিশ্ব দেখেছিল ‘টাইমড আউটের’ মতো ঘটনা। যা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তবে কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করেননি সাকিব। তার একমাত্র লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তোলা। এক কথায় দলকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তুলতে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক এই কাপ্তান।
সেই ম্যাচে বল হাতে ১০ ওভারে ৫৭ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেন সাকিব। শুধু তাই নয় এই ম্যাচে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ‘টাইমড আউট’ করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন সাকিব। সেই ম্যাচে ব্যাট করতে নামার পর হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে গিয়েছিল ম্যাথুসের। হেলমেট বদল করতে গিয়ে দেরি হয়ে যায় তার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্ট্রাইক না নেওয়ায় আম্পায়ারের কাছে আবেদন করেছিলেন অধিনায়ক সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়কের আবেদনে সাড়া দিয়ে ম্যাথুসকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার।
বাংলাদেশকে ২৮০ রানের টার্গেট দেয় শ্রীলঙ্কা। শুধু জিতলেই হবে না, মেলাতে হবে নেট রানরেট। ব্যাট করতে নেমে ৬৫ বলে ৮২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন সাকিব। এতে ৪১ ওভার ১ বলে ৩ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। সেই জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
ম্যাচ শেষ হলেও ‘টাইমড আউটের’ ঘটনায় বেশ সমালোচনার শিকার হন সাকিব। তবে পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তোলার জন্য যা করার প্রয়োজন, তাই করেছেন তিনি। সাকিবের এমন সাহসী সিদ্ধান্তেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
তবে বর্তমানে সময়টা ভালো যাচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। সম্প্রতি অবৈধ অ্যাকশনের জন্য বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। যার কারণে শুধুমাত্র ব্যাটার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে সাকিবকে বিবেচনা করেননি প্রধান নির্বাচক নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
সাকিবের বাদ পড়া প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘সাকিবের বোলিং অ্যাকশন বৈধতা নিয়ে যে সমস্যা, সেটি থেকে তিনি উত্তরণের প্রক্রিয়ায় আছেন। বোলিং পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়ার কারণে তিনি এখন শুধু একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারবেন। ফলে সিলেকশন পজিশনেও সাকিবের অবস্থান ছিল কেবল একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে। আমাদের টিম কম্বিনেশনটা সাজাতে গিয়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে ১৫ জনের দলে রাখতে পারিনি।’
সাকিবকে তাই বেশ কপাল পোড়াই বলতে হচ্ছে। দলকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তুলে এখন নিজেই পারছেন না খেলতে। এই টুর্নামেন্ট খেলেই ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক।