আজ বিশ্ব উপশমদায়ক দিবস

খন রঞ্জন রায় : মানুষের মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত অন্তর্নিহিত শক্তি। স্বীয় এই শক্তিকে শারীরিক উৎকর্ষতার মাধ্যমে জাগ্রত করতে হয়। মানসিক- দৈহিক-সামাজিক কুলষশক্তির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার শক্তি কৌশল অর্জন করানো সুস্থ জীবনের পরম লক্ষ্য। মানুষের জীবনীশক্তি উৎপাদন, পরিচর্যা, উজ্জ্বীবিত ও সচল রাখার চেষ্টা কিন্তু সেই সৃষ্টিকাল থেকেই। আদিমতার যুগেই তা বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতার সাথে ভিন্ন-অভিন্ন নানা উপায়ে নিষ্ঠার সাথে চর্চা হতো। হাল আমলে মেডিটেশন একটি অন্যতম জনপ্রিয় রূপ। এর আড়ালে রয়েছে শক্তিসাধনা, আধ্যাত্মিকতা অনুশীলনের শান্তি-তৃপ্তি অর্জনের নিখাদ আয়োজন। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে যোগ বা প্রার্থনা দিবস, তাইচি, কিগোং, রিকি, উপশম-প্রার্থনা, স্বদেশি আন্দোলন, আদিম ও পূতানৃত্য, সুফিনৃত্য, শিল্পকলা, শ্বাসযোগ, স্পন্দন, সঙ্গীত প্রভৃতির ধারাবাহিক অগ্রগতির মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে বিশ্বসভ্যতায় রূপায়ন করা যাচ্ছে। এসবের সম্মিলিত রূপই হচ্ছে “আজকের বিশ্ব উপশমদায়ক দিবস”।

নতুন বছর শুরু করার প্রারম্ভে তাৎপর্যপূর্ণ এই দিবস বিশ্ব সভ্যতার দেয়ালে ব্যাপক ছায়াপাত ঘটায়। মানুষ উদ্বিপ্ত হয়। বিভিন্ন ভাষাভাষি ও জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের আত্মসামাজিক অবস্থান, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণার উপযোগী শারীরীক শক্তি ও মানসিক শান্তি প্রতিষ্ঠাই মূল উদ্দেশ্য। যেমন জাপানের বুড্ডিস্ট আধ্যাত্মিক গুরু মিকাউ ওসুই ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘রিকি’ নামের এক প্রকার আধ্যাত্মিক অনুশীলন উদ্ভাবন করেন। সারা পৃথিবীতে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি নির্বিশেষে হাজার লক্ষ্য মানুষ এই রিকি চর্চা করে সুফল ভোগ করছে। মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছে। সুস্বাস্থ্যরে অধিকারী হয়ে নীরোগ জীবন-যাপন করছে। “বিশ্ব তাইচি ও কিগুং দিবস” পালন শুরু হয় চীন থেকে। অতি সম্প্রতি ভারতের চৌকস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহবানে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে পালন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব যোগ দিবস’। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রসংঘের ভাষণে দেয়া মোদি’র এই আবেদন খুব দ্রুততায় জাতিসংঘ গ্রহণ করে। ২৭ সেপ্টেম্বর দেয়া প্রস্তাব ১১ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত শারীরীক ও মানসিক প্রশান্তি অনুশীলনের আধ্যাত্মিক এই প্রথা নিয়ে দিবসটি পালন করা হয় ২১ জুন। রাষ্ট্রসংঘর অঙ্গীভূত সকল দেশ তাদের অবস্থান অনুযায়ী আলোচনা, সঙ্গীত, সুনির্দ্রষ্টি শারীরীক ভঙ্গিমায় মনকে নিয়ন্ত্রণ বা বশ করার সফল চেষ্টা করে দিবস উদযাপন করে।

যোগের অর্থই হচ্ছে মানবাত্মা ও পরমাত্মার সংযোগ। সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল থেকেই মানুষ নিজের অবস্থানকে সৃষ্টিশীল মানবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য যোগাভ্যাস চর্চা করে থাকতো। হরপ্পা ও মহোঞ্জাদাড়োর সর্বশেষ খননেও ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের যোগ ভঙ্গিমার কিছু নির্দশন পাওয়া গেছে। দৈনন্দিন জীবনে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মনসংযোগ বাড়াতে যোগের প্রতি মানুষের আকর্ষণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগণও ভিন্ন ভিন্ন নামে শারীরীক ভঙ্গিমায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের বিধি ও প্রাণায়ন রীতি অনুসারিদের মধ্যে চর্চার অভ্যাস করার নির্দেশনা আছে। বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈনধর্মের শরীরবৃত্তীয় ও মানসিক সাধন-ভজন ধ্যানপ্রণালীতে যোগ সাধনা অন্তর্ভূক্তি আছে। হিন্দু দর্শনে রাজযোগ, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, হঠযোগ ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রেরও প্রধান অনুসঙ্গ। হিন্দু শাস্ত্রগ্রন্থ ভাগবদগীতা, উপনিষদ, বৌদ্ধধর্মের পালি ভাষায় লিখিত কতিপয় ধর্মশাস্ত্রে যোগ সাধনায় বিস্তারিত বর্ণনা আছে।

স্বামী বিবেকানন্দের যোগচর্চায় সফলতার পর উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে ভারতীয় যোগাচার্য্যগণ পশ্চিমী দেশসমূহে যোগবিদ্যার প্রচার জোরদার করেন। ১৯৮০’র দশকে প্রাশ্চাত্য দেশসমূহে ‘যোগ’ শরীরচর্চার অত্যাবশ্যকীয় অংগ হিসাবে জনপ্রিয় হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনস্তাত্বিকগণের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই কার্যক্রমকে সমর্থন জানায়। হাঁপানি, হৃদরোগ, স্কিৎজোফ্রোনিয়া, ক্যান্সারসহ নানা জটিল দুরারোগ্য রোগব্যাধি নিরাময়ে যোগের সফলতা উদ্ভাসিত হতে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন নামে যোগজ্ঞান চর্চার সংগঠনসমূহ একত্রিত হয়। তারা এককভাবে বিশ্বব্যাপি একটি দিনকে এই কাজে আত্মৎসর্গের মনোবাসনা পূষণ করে। উৎপত্তি হয় উপশমদায়ক দিবসের।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের এই যোগাভ্যাস সুনির্দ্রিষ্ট দিনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে। ১৯৮৪ সালে প্রথম ১ জানুয়ারি সারা বিশ্বে পালন করা হয় ‘বিশ্ব উপশমদায়ক দিবস’। এরপর নানামাত্রিক চিন্তার সন্নিবেশ, আলোচনা পর্যালোচনা ও পরিবর্তন সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন করে। সিদ্ধান্ত হয় বছরের শেষ দিন আর সম্ভাবনাময় নতুন দিনের শুরুতে ৩১ ডিসেম্বর পালন হবে এই দিবস। সমস্বরে সমর্থন হয়। ১৯৮৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পৃথিবীর ৭০টির অধিক দেশে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ অত্যন্ত বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে যথানিয়মে পালন শুরু করে আত্মশুদ্ধির মর্মমূলে আঘাত চিন্তার এই উপশমদায়ক দিবস।

উপশম শব্দটি আভিধানিক ভাষা হলেও এর অর্থ ব্যাপক বিস্তৃত। বলা যায় মুক্ত করা, উদ্ধার করা, সাহায্য করা, মোচন করা, অব্যহতি দেওয়া, খালাস করা বা দেওয়া, পরিত্রাণ দেওয়া, দুঃখ মোচন করা, স্বস্তি দেওয়া, উদ্বেগ রহিত করা, অবরোধ তুলে নেওয়া, সান্তনা দেওয়া, প্রবোধ করা, প্রশমিত করা, শান্ত করা, গা জুড়ানো, নিবৃত্ত করা, তীব্রতা লাঘব করা, নিরসন করা, সহনীয় করা, নির্বাপণ করা, উপযোগী করা, দমন করা, হ্রাস করা, কমিয়ে দেওয়া, অপনোদন করা, দুর্বল করা, বিনষ্ট করা, ব্যর্থ করা, ধ্বংস বা হত্যা করা, আরোগ্য করা, লেপন করা, চিকিৎসা করা, তৃষ্ণা নিবারণ করা, দমিত করা, আলোকিত করা, বোঝা কমানো, শান্ত, নম্র, মৃদু,স্নিগ্ধ, কোমল, সৌম্য ক্ষমা করানো, শক্তিহ্রাস, কাহিল-শীর্ণ, ঘনত্ব হ্রাস ইত্যাদি আরো অনেক বিশেষণে বিশেসায়িত করা যায়।

সাধারণভাবে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে উপশম শব্দটি বেশ সমাদৃত। একে নিয়ে নতুন নতুন চিন্তা ধারা গবেষণা আবিস্কার হচ্ছে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমবিদ্যা এমনই একটি পরিষেবা ধারা। এনিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, সেবাকর্মী প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের উপযুক্ত সমৃদ্ধ করছেন। কিছু কিছু রোগ আছে যেখানে চিকিৎসা’র মাধ্যমে আরোগ্য লাভের আর সম্ভাবনা থাকে না। সেখানে রোগীর ও রোগের যন্ত্রণা কমানোর লক্ষ্যে মানসিক শক্তি অর্জনের মাধ্যম হিসাবে আর্বিভূত হয় এই সেবা প্রদান কর্মীগণ। সেখানে কেবল ব্যক্তি রোগী নয়। আশ-পাশের আত্মীয়-স্বজন আর প্রিয়জনরা যখন জানেন ওষুধ-পথ্যের মাধ্যমে নিরাময়ের সম্ভাবনা নেই, রোগীর আয়ু সীমিত, প্রিয়জনরা যন্ত্রণার সাক্ষী হন।

কেবল শারীরীক নয়, মানসিকভাবেও বিপর্যয় মোকাবিলার শক্তি সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন। ভেঙ্গে পড়েন। সেই সময়ে রোগী ও তাঁর পরিবারকে স্বস্তি-শান্তি, অভয়-তৃপ্তি দেওয়ার লক্ষ্যই হচ্ছে উপশম চিকিৎসা। যেখানে প্রতিরোধযোগ্যও নয়, চিকিৎসাযোগ্যও নয়। জীবনের সেই অন্তিম চূড়ান্ত বিজয় মৃত্যুকে হাসি খুশিতে আলিঙ্গন করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা। যদিও মৃত্যু চিকিৎসা বিজ্ঞানের শক্র। একে অজয় অক্ষয় অমর করার জন্যই কিউরেটিভ মেডিসিন, প্রিভেনটিভ মেডিসিনসহ চিকিৎসা পরিভাষায় শরীরবিদ্যাসম্মত কতনা জ্ঞানের আলো জ্বালানো হচ্ছে। মৃত্যুপথযাত্রীর বহুবিধ, বহুরকম, কল্পনা, অকল্পনার চাহিদা পূরণে বহুকাল যাবৎ চিকিৎসা বিজ্ঞান ব্যর্থ ছিল। মৃত্যুরও একটা সম্মান আছে। অন্তিম মুহুর্তে যথাযথ সেবার মাধ্যমে ব্যক্তির সেই সম্মানজনক মৃত্যুর অধিকার নিশ্চিতে সহায়তা করাই উপশমবিদ্যার সৃষ্টি।

উপশমবিদ্যার প্রধান ও বিশ্বস্ত উপপাদান চিকিৎসাশাস্ত্র হলেও এর আড়ালে কিন্তু শক্তিশালী ভূমিকা রাখে যোগবিদ্যা। নিরোগ দেহ নিয়ে সুস্থ্য জীবনযাত্রা উপভোগ করে শতায়ু লাভ করার কলা-কৌশল শিখাচ্ছেন অনেক ব্যক্তি, সংগঠন। এসবও কিন্তু বিজ্ঞান সমর্থক পরিপন্থি। বলা হচ্ছে ঠিকমতো পর্যাপ্ত ঘুম ব্যাটারি চার্জের মতো। পরিপূর্ণ জীবনভোগ করতে হলে শ্রমে ক্লান্ত দেহখানির পূর্ণ বিশ্রামের মাধ্যমে পুরোপুরি চার্জ করে পুর্ন্যােদমে সতেজ হতে হবে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করে লিভারকে বিশ্রামে পাঠানোর আবেদন জানানো হয়।

পরিবারের বংশাণুক্রমিক অসুখ-বিসুখের ইতিহাস ভালভাবে রপ্ত করতে বলা হয়। এতে বংশাণুক্রমিক জেনেটিক রোগ-শোকের আগাম সর্তকতা অবলম্বন করা সম্ভব হয়। মাংসপেশি, অস্থি, গ্রন্থি, স্নায়ু, পাকস্থলী, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, রক্ত উৎপাদন, মলমূত্র, ঘর্ম, জননতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, অস্থি বা হাড়, মাংসপেশী, স্বাদ, গন্ধ, দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ সম্পকীয় প্রতিটি আলাদা আলাদা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গর গঠনপ্রকৃতি খাবারদাবারের সাথে অঙ্গ পরিচালনা শিখানো হয়। শারীরীক, মানসিক পরিশ্রমে, চিন্তায়-দুশ্চিন্তায় প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনীশক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। খাদ্যের মাধ্যমে পরিমিত পুষ্টি গ্রহণের পাশাপাশি যোগাভ্যাস চর্চা প্রতিটি অন্ত্র-তন্ত্রের সুস্থতা, দৃঢ়তা অক্ষুণ্ন থাকে। শরীরে অবস্থিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রতিশেধক শক্তি ক্ষমতা বাড়তে থাকে।

নিরোগ সুঠাম সবল দেহে রূপ, যৌবন, লাবণ্য, আয়ু দীর্ঘস্থায়ী হয়। আলস্যমুক্ত কর্মক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আত্মপ্রত্যায়ী মনোভাবের সাথে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিতে আনন্দ সঞ্চারিত হয়। মনের চঞ্চলতা দূরে ছুঁড়ে ধৈর্য্যশক্তি বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে নিখুঁতভাবে কাজের গতি সঞ্চার করে। মানসিক চাপ, উত্তেজনা, বিষণ্নতা কমিয়ে আত্মসংযমবোধের মনোযোগ সৃষ্টি হয়ে মন মেজাজ ফুরফুরে হয়। শরীরের সঙ্গে মনের সংযোগের ঐকান্তিক মিলন ঘটে, আত্মিক উন্নতি হয়, শরীরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শারীরীক, মানসিক, আধ্যাত্মিক অবস্থার পূর্ণ প্রশান্তির সম্মিলিত যোগফলে সর্বোত্তম সর্বশেষ পরিণতিই হলো ‘উপশম’।

সুস্বাস্থ্যের উদ্দেশ্যে বিধিসম্মতভাবে অঙ্গ সঞ্চালনই মূল নিয়ামক শক্তি। সুষম খাদ্যাভাসের সাথে খেলাধুলা, সাতাঁরকাটা, হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, জিম, অ্যাক্রোবেটিক যেমন রয়েছে তেমনি শরীরচর্চাবিদ, যোগাচার্যদের মতামতে ও নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রতিজনের শারীরীক, মানসিক, রোগশোকের সমস্যা সম্ভাবনা নিরীখে সুর্নিদ্রিষ্ট যোগাসন বা ব্যায়ম চর্চাও অপরিহার্য। বিশ্ব উপশমদায়ক দিবসের মূল প্রতিপাদ্যাই হলো ‘একটি মাত্র নিঃশ্বাস, বাড়–ক নিয়ত-প্রতিনিয়ত আত্মবিশ্বাস’। বিশ্ব এখনো এক ও অদ্বিতীয়। হয়ে উঠুক এই বিশ্ব আমাদের অতিপ্রিয়। এই ধারনাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও হৃদয়ে লালন করে পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মের লোক একই নামে অভিন্ন উপায়ে পালন করে থাকে শক্তি-শান্তি-মানসিক প্রশান্তির গুরুত্বপূর্ণ এই দিবস।

আমাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দিয়ে উপশমদায়ক দিবসের আলোচিত উপাদানসমূহ চর্চার মাধ্যমে মন্দ অবস্থানের প্রকোপ লাঘবে সচেষ্ট হবো। নিবৃত্ত করবো কু-অভ্যাস, পৈশাচিক জীবনমান পরিত্যাগ করে শান্ত-সংযত জীবনের অধীকারী হবো আজকের দিনে প্রত্যাশাও এই।

লেখকঃ খন রঞ্জন রায়,সমাজচিন্তক, গবেষক ও সংগঠক

আজ বিশ্ব উপশমদায়ক দিবস

খন রঞ্জন রায় : মানুষের মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত অন্তর্নিহিত শক্তি। স্বীয় এই শক্তিকে শারীরিক উৎকর্ষতার মাধ্যমে জাগ্রত করতে হয়। মানসিক- দৈহিক-সামাজিক কুলষশক্তির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার শক্তি কৌশল অর্জন করানো সুস্থ জীবনের পরম লক্ষ্য। মানুষের জীবনীশক্তি উৎপাদন, পরিচর্যা, উজ্জ্বীবিত ও সচল রাখার চেষ্টা কিন্তু সেই সৃষ্টিকাল থেকেই। আদিমতার যুগেই তা বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতার সাথে ভিন্ন-অভিন্ন নানা উপায়ে নিষ্ঠার সাথে চর্চা হতো। হাল আমলে মেডিটেশন একটি অন্যতম জনপ্রিয় রূপ। এর আড়ালে রয়েছে শক্তিসাধনা, আধ্যাত্মিকতা অনুশীলনের শান্তি-তৃপ্তি অর্জনের নিখাদ আয়োজন। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে যোগ বা প্রার্থনা দিবস, তাইচি, কিগোং, রিকি, উপশম-প্রার্থনা, স্বদেশি আন্দোলন, আদিম ও পূতানৃত্য, সুফিনৃত্য, শিল্পকলা, শ্বাসযোগ, স্পন্দন, সঙ্গীত প্রভৃতির ধারাবাহিক অগ্রগতির মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে বিশ্বসভ্যতায় রূপায়ন করা যাচ্ছে। এসবের সম্মিলিত রূপই হচ্ছে “আজকের বিশ্ব উপশমদায়ক দিবস”।

নতুন বছর শুরু করার প্রারম্ভে তাৎপর্যপূর্ণ এই দিবস বিশ্ব সভ্যতার দেয়ালে ব্যাপক ছায়াপাত ঘটায়। মানুষ উদ্বিপ্ত হয়। বিভিন্ন ভাষাভাষি ও জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের আত্মসামাজিক অবস্থান, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণার উপযোগী শারীরীক শক্তি ও মানসিক শান্তি প্রতিষ্ঠাই মূল উদ্দেশ্য। যেমন জাপানের বুড্ডিস্ট আধ্যাত্মিক গুরু মিকাউ ওসুই ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘রিকি’ নামের এক প্রকার আধ্যাত্মিক অনুশীলন উদ্ভাবন করেন। সারা পৃথিবীতে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি নির্বিশেষে হাজার লক্ষ্য মানুষ এই রিকি চর্চা করে সুফল ভোগ করছে। মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছে। সুস্বাস্থ্যরে অধিকারী হয়ে নীরোগ জীবন-যাপন করছে। “বিশ্ব তাইচি ও কিগুং দিবস” পালন শুরু হয় চীন থেকে। অতি সম্প্রতি ভারতের চৌকস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহবানে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে পালন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব যোগ দিবস’। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রসংঘের ভাষণে দেয়া মোদি’র এই আবেদন খুব দ্রুততায় জাতিসংঘ গ্রহণ করে। ২৭ সেপ্টেম্বর দেয়া প্রস্তাব ১১ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত শারীরীক ও মানসিক প্রশান্তি অনুশীলনের আধ্যাত্মিক এই প্রথা নিয়ে দিবসটি পালন করা হয় ২১ জুন। রাষ্ট্রসংঘর অঙ্গীভূত সকল দেশ তাদের অবস্থান অনুযায়ী আলোচনা, সঙ্গীত, সুনির্দ্রষ্টি শারীরীক ভঙ্গিমায় মনকে নিয়ন্ত্রণ বা বশ করার সফল চেষ্টা করে দিবস উদযাপন করে।

যোগের অর্থই হচ্ছে মানবাত্মা ও পরমাত্মার সংযোগ। সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল থেকেই মানুষ নিজের অবস্থানকে সৃষ্টিশীল মানবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য যোগাভ্যাস চর্চা করে থাকতো। হরপ্পা ও মহোঞ্জাদাড়োর সর্বশেষ খননেও ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের যোগ ভঙ্গিমার কিছু নির্দশন পাওয়া গেছে। দৈনন্দিন জীবনে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মনসংযোগ বাড়াতে যোগের প্রতি মানুষের আকর্ষণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগণও ভিন্ন ভিন্ন নামে শারীরীক ভঙ্গিমায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের বিধি ও প্রাণায়ন রীতি অনুসারিদের মধ্যে চর্চার অভ্যাস করার নির্দেশনা আছে। বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈনধর্মের শরীরবৃত্তীয় ও মানসিক সাধন-ভজন ধ্যানপ্রণালীতে যোগ সাধনা অন্তর্ভূক্তি আছে। হিন্দু দর্শনে রাজযোগ, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, হঠযোগ ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রেরও প্রধান অনুসঙ্গ। হিন্দু শাস্ত্রগ্রন্থ ভাগবদগীতা, উপনিষদ, বৌদ্ধধর্মের পালি ভাষায় লিখিত কতিপয় ধর্মশাস্ত্রে যোগ সাধনায় বিস্তারিত বর্ণনা আছে।

স্বামী বিবেকানন্দের যোগচর্চায় সফলতার পর উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে ভারতীয় যোগাচার্য্যগণ পশ্চিমী দেশসমূহে যোগবিদ্যার প্রচার জোরদার করেন। ১৯৮০’র দশকে প্রাশ্চাত্য দেশসমূহে ‘যোগ’ শরীরচর্চার অত্যাবশ্যকীয় অংগ হিসাবে জনপ্রিয় হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনস্তাত্বিকগণের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই কার্যক্রমকে সমর্থন জানায়। হাঁপানি, হৃদরোগ, স্কিৎজোফ্রোনিয়া, ক্যান্সারসহ নানা জটিল দুরারোগ্য রোগব্যাধি নিরাময়ে যোগের সফলতা উদ্ভাসিত হতে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন নামে যোগজ্ঞান চর্চার সংগঠনসমূহ একত্রিত হয়। তারা এককভাবে বিশ্বব্যাপি একটি দিনকে এই কাজে আত্মৎসর্গের মনোবাসনা পূষণ করে। উৎপত্তি হয় উপশমদায়ক দিবসের।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের এই যোগাভ্যাস সুনির্দ্রিষ্ট দিনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে। ১৯৮৪ সালে প্রথম ১ জানুয়ারি সারা বিশ্বে পালন করা হয় ‘বিশ্ব উপশমদায়ক দিবস’। এরপর নানামাত্রিক চিন্তার সন্নিবেশ, আলোচনা পর্যালোচনা ও পরিবর্তন সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন করে। সিদ্ধান্ত হয় বছরের শেষ দিন আর সম্ভাবনাময় নতুন দিনের শুরুতে ৩১ ডিসেম্বর পালন হবে এই দিবস। সমস্বরে সমর্থন হয়। ১৯৮৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পৃথিবীর ৭০টির অধিক দেশে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ অত্যন্ত বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে যথানিয়মে পালন শুরু করে আত্মশুদ্ধির মর্মমূলে আঘাত চিন্তার এই উপশমদায়ক দিবস।

উপশম শব্দটি আভিধানিক ভাষা হলেও এর অর্থ ব্যাপক বিস্তৃত। বলা যায় মুক্ত করা, উদ্ধার করা, সাহায্য করা, মোচন করা, অব্যহতি দেওয়া, খালাস করা বা দেওয়া, পরিত্রাণ দেওয়া, দুঃখ মোচন করা, স্বস্তি দেওয়া, উদ্বেগ রহিত করা, অবরোধ তুলে নেওয়া, সান্তনা দেওয়া, প্রবোধ করা, প্রশমিত করা, শান্ত করা, গা জুড়ানো, নিবৃত্ত করা, তীব্রতা লাঘব করা, নিরসন করা, সহনীয় করা, নির্বাপণ করা, উপযোগী করা, দমন করা, হ্রাস করা, কমিয়ে দেওয়া, অপনোদন করা, দুর্বল করা, বিনষ্ট করা, ব্যর্থ করা, ধ্বংস বা হত্যা করা, আরোগ্য করা, লেপন করা, চিকিৎসা করা, তৃষ্ণা নিবারণ করা, দমিত করা, আলোকিত করা, বোঝা কমানো, শান্ত, নম্র, মৃদু,স্নিগ্ধ, কোমল, সৌম্য ক্ষমা করানো, শক্তিহ্রাস, কাহিল-শীর্ণ, ঘনত্ব হ্রাস ইত্যাদি আরো অনেক বিশেষণে বিশেসায়িত করা যায়।

সাধারণভাবে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে উপশম শব্দটি বেশ সমাদৃত। একে নিয়ে নতুন নতুন চিন্তা ধারা গবেষণা আবিস্কার হচ্ছে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমবিদ্যা এমনই একটি পরিষেবা ধারা। এনিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, সেবাকর্মী প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের উপযুক্ত সমৃদ্ধ করছেন। কিছু কিছু রোগ আছে যেখানে চিকিৎসা’র মাধ্যমে আরোগ্য লাভের আর সম্ভাবনা থাকে না। সেখানে রোগীর ও রোগের যন্ত্রণা কমানোর লক্ষ্যে মানসিক শক্তি অর্জনের মাধ্যম হিসাবে আর্বিভূত হয় এই সেবা প্রদান কর্মীগণ। সেখানে কেবল ব্যক্তি রোগী নয়। আশ-পাশের আত্মীয়-স্বজন আর প্রিয়জনরা যখন জানেন ওষুধ-পথ্যের মাধ্যমে নিরাময়ের সম্ভাবনা নেই, রোগীর আয়ু সীমিত, প্রিয়জনরা যন্ত্রণার সাক্ষী হন।

কেবল শারীরীক নয়, মানসিকভাবেও বিপর্যয় মোকাবিলার শক্তি সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন। ভেঙ্গে পড়েন। সেই সময়ে রোগী ও তাঁর পরিবারকে স্বস্তি-শান্তি, অভয়-তৃপ্তি দেওয়ার লক্ষ্যই হচ্ছে উপশম চিকিৎসা। যেখানে প্রতিরোধযোগ্যও নয়, চিকিৎসাযোগ্যও নয়। জীবনের সেই অন্তিম চূড়ান্ত বিজয় মৃত্যুকে হাসি খুশিতে আলিঙ্গন করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা। যদিও মৃত্যু চিকিৎসা বিজ্ঞানের শক্র। একে অজয় অক্ষয় অমর করার জন্যই কিউরেটিভ মেডিসিন, প্রিভেনটিভ মেডিসিনসহ চিকিৎসা পরিভাষায় শরীরবিদ্যাসম্মত কতনা জ্ঞানের আলো জ্বালানো হচ্ছে। মৃত্যুপথযাত্রীর বহুবিধ, বহুরকম, কল্পনা, অকল্পনার চাহিদা পূরণে বহুকাল যাবৎ চিকিৎসা বিজ্ঞান ব্যর্থ ছিল। মৃত্যুরও একটা সম্মান আছে। অন্তিম মুহুর্তে যথাযথ সেবার মাধ্যমে ব্যক্তির সেই সম্মানজনক মৃত্যুর অধিকার নিশ্চিতে সহায়তা করাই উপশমবিদ্যার সৃষ্টি।

উপশমবিদ্যার প্রধান ও বিশ্বস্ত উপপাদান চিকিৎসাশাস্ত্র হলেও এর আড়ালে কিন্তু শক্তিশালী ভূমিকা রাখে যোগবিদ্যা। নিরোগ দেহ নিয়ে সুস্থ্য জীবনযাত্রা উপভোগ করে শতায়ু লাভ করার কলা-কৌশল শিখাচ্ছেন অনেক ব্যক্তি, সংগঠন। এসবও কিন্তু বিজ্ঞান সমর্থক পরিপন্থি। বলা হচ্ছে ঠিকমতো পর্যাপ্ত ঘুম ব্যাটারি চার্জের মতো। পরিপূর্ণ জীবনভোগ করতে হলে শ্রমে ক্লান্ত দেহখানির পূর্ণ বিশ্রামের মাধ্যমে পুরোপুরি চার্জ করে পুর্ন্যােদমে সতেজ হতে হবে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করে লিভারকে বিশ্রামে পাঠানোর আবেদন জানানো হয়।

পরিবারের বংশাণুক্রমিক অসুখ-বিসুখের ইতিহাস ভালভাবে রপ্ত করতে বলা হয়। এতে বংশাণুক্রমিক জেনেটিক রোগ-শোকের আগাম সর্তকতা অবলম্বন করা সম্ভব হয়। মাংসপেশি, অস্থি, গ্রন্থি, স্নায়ু, পাকস্থলী, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, রক্ত উৎপাদন, মলমূত্র, ঘর্ম, জননতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, অস্থি বা হাড়, মাংসপেশী, স্বাদ, গন্ধ, দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ সম্পকীয় প্রতিটি আলাদা আলাদা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গর গঠনপ্রকৃতি খাবারদাবারের সাথে অঙ্গ পরিচালনা শিখানো হয়। শারীরীক, মানসিক পরিশ্রমে, চিন্তায়-দুশ্চিন্তায় প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনীশক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। খাদ্যের মাধ্যমে পরিমিত পুষ্টি গ্রহণের পাশাপাশি যোগাভ্যাস চর্চা প্রতিটি অন্ত্র-তন্ত্রের সুস্থতা, দৃঢ়তা অক্ষুণ্ন থাকে। শরীরে অবস্থিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রতিশেধক শক্তি ক্ষমতা বাড়তে থাকে।

নিরোগ সুঠাম সবল দেহে রূপ, যৌবন, লাবণ্য, আয়ু দীর্ঘস্থায়ী হয়। আলস্যমুক্ত কর্মক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আত্মপ্রত্যায়ী মনোভাবের সাথে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিতে আনন্দ সঞ্চারিত হয়। মনের চঞ্চলতা দূরে ছুঁড়ে ধৈর্য্যশক্তি বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে নিখুঁতভাবে কাজের গতি সঞ্চার করে। মানসিক চাপ, উত্তেজনা, বিষণ্নতা কমিয়ে আত্মসংযমবোধের মনোযোগ সৃষ্টি হয়ে মন মেজাজ ফুরফুরে হয়। শরীরের সঙ্গে মনের সংযোগের ঐকান্তিক মিলন ঘটে, আত্মিক উন্নতি হয়, শরীরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শারীরীক, মানসিক, আধ্যাত্মিক অবস্থার পূর্ণ প্রশান্তির সম্মিলিত যোগফলে সর্বোত্তম সর্বশেষ পরিণতিই হলো ‘উপশম’।

সুস্বাস্থ্যের উদ্দেশ্যে বিধিসম্মতভাবে অঙ্গ সঞ্চালনই মূল নিয়ামক শক্তি। সুষম খাদ্যাভাসের সাথে খেলাধুলা, সাতাঁরকাটা, হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, জিম, অ্যাক্রোবেটিক যেমন রয়েছে তেমনি শরীরচর্চাবিদ, যোগাচার্যদের মতামতে ও নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রতিজনের শারীরীক, মানসিক, রোগশোকের সমস্যা সম্ভাবনা নিরীখে সুর্নিদ্রিষ্ট যোগাসন বা ব্যায়ম চর্চাও অপরিহার্য। বিশ্ব উপশমদায়ক দিবসের মূল প্রতিপাদ্যাই হলো ‘একটি মাত্র নিঃশ্বাস, বাড়–ক নিয়ত-প্রতিনিয়ত আত্মবিশ্বাস’। বিশ্ব এখনো এক ও অদ্বিতীয়। হয়ে উঠুক এই বিশ্ব আমাদের অতিপ্রিয়। এই ধারনাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও হৃদয়ে লালন করে পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মের লোক একই নামে অভিন্ন উপায়ে পালন করে থাকে শক্তি-শান্তি-মানসিক প্রশান্তির গুরুত্বপূর্ণ এই দিবস।

আমাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দিয়ে উপশমদায়ক দিবসের আলোচিত উপাদানসমূহ চর্চার মাধ্যমে মন্দ অবস্থানের প্রকোপ লাঘবে সচেষ্ট হবো। নিবৃত্ত করবো কু-অভ্যাস, পৈশাচিক জীবনমান পরিত্যাগ করে শান্ত-সংযত জীবনের অধীকারী হবো আজকের দিনে প্রত্যাশাও এই।

লেখকঃ খন রঞ্জন রায়,সমাজচিন্তক, গবেষক ও সংগঠক