দি ক্রাইম ডেস্ক: ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অন্যতম বড় রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। ১৬ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের প্রতি মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও তা প্রকাশ করার সুযোগ ছিলনা। তাই আওয়ামী সরকারকে উৎখাতের পর ভারতীয় আধিপত্যের বিরোধীতা এখন তুঙ্গে। বিভিন্ন কারণে যত দূরে সরে যাচ্ছে ভারত, ঠিক ততটাই বাংলাদেশের কাছে আসছে পাকিস্তান।

ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের সবচেয়ে শীতলতম সম্পর্কে অবস্থান করছে। তবে এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে গত দেড় দশক ধরে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অনন্তপুর-দিনহাটার খিতাবেরকুঠি এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ফেলানি খাতুন নামে এক বাংলাদেশি কিশোরী। তাকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। সেদিন থেকেই ভারতের আধিপত্যবিরোধী বিজ বপন হয় বাংলাদেশের মানুষের মনে।

সেই বীজ অঙ্কুরিত হয় ফেলানি হত্যার বিচারহীনতা, নিরবিচ্ছন্ন সীমান্ত হত্যা, নদীর পানিবণ্টন ইস্যু, ট্রানজিট ইস্যু, সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা তৈরিতে ভারতের উস্কানি, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা ও দেশবিরোধী নানা চুক্তির মাধ্যমে। সবশেষ শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে ভারতে মর্যাদার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়া এবং তার পক্ষে বিভিন্ন উস্কানিমূলক প্রচারণা, কথিত সংখ্যালঘু ইস্যু তৈরি, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা ও ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

ভারতের দাদাগিরি মনোভাবের কারণে ভারত বাংলাদেশীদের কাছ থেকে যতটাই দূরে সরছে, ঠিক ততটাই কাছে আসছে পাকিস্তান। গত এক দশকে পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম ও রাজনীতিকদের মধ্যে বাংলাদেশ ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ করতে আগ্রহী পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাকিস্তানের রাজনীতির আঙ্গিনা, সবখানেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী দেশটি। শুধু মুখে নয়, কাজেও তা করে দেখাচ্ছে পাকিস্তান। বহু পাকিস্তনী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নানা ধরণের ভিডিও তৈরি করে, পাকিস্তানের মানুষের মনে বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে কাজ করছে।

আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের তারকাদের মধ্যেও। কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশে একটি কনসার্টে গান গেয়ে গেছেন পাকিস্তান তথা উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী আতিফ আসলাম। ওই কনসার্টে আতিফের দেড় ঘণ্টা গান গাওয়ার কথা থাকলেও, বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য তিনি প্রায় তিন ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

একইসঙ্গে রাজনৈতিকভাবে সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু, ভিসা প্রক্রিয়া সহজিকরণ, স্বাধীনতার পর প্রথম সরাসরি জাহাজে করে বাণিজ্যও শুরু করেছে পাকিস্তান। তবে আরও আগে থেকেই পাকিস্তান সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু ভারতের প্রভাববলয়ে থাকা শেখ হাসিনার সরকারের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্য লাল তালিকাভুক্ত করে রেখেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন আন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের অনুরোধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর লাল তালিকা থেকে মুক্ত করেছে দেশটির সবধরণের পণ্য। পাকিস্তান শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, টেক্সটাইল, মেশিনারিজ ও পর্যটন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। এসব খাতে বাংলাদেশের রয়েছে বেশ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভারত নির্ভরতা। তাই দুই দেশের নতুন প্রজন্মের মতামত পুরোনো শত্রুতার মিমাংসা করে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সহজ করে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

দি ক্রাইম ডেস্ক: ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অন্যতম বড় রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। ১৬ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের প্রতি মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও তা প্রকাশ করার সুযোগ ছিলনা। তাই আওয়ামী সরকারকে উৎখাতের পর ভারতীয় আধিপত্যের বিরোধীতা এখন তুঙ্গে। বিভিন্ন কারণে যত দূরে সরে যাচ্ছে ভারত, ঠিক ততটাই বাংলাদেশের কাছে আসছে পাকিস্তান।

ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের সবচেয়ে শীতলতম সম্পর্কে অবস্থান করছে। তবে এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে গত দেড় দশক ধরে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অনন্তপুর-দিনহাটার খিতাবেরকুঠি এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ফেলানি খাতুন নামে এক বাংলাদেশি কিশোরী। তাকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। সেদিন থেকেই ভারতের আধিপত্যবিরোধী বিজ বপন হয় বাংলাদেশের মানুষের মনে।

সেই বীজ অঙ্কুরিত হয় ফেলানি হত্যার বিচারহীনতা, নিরবিচ্ছন্ন সীমান্ত হত্যা, নদীর পানিবণ্টন ইস্যু, ট্রানজিট ইস্যু, সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা তৈরিতে ভারতের উস্কানি, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা ও দেশবিরোধী নানা চুক্তির মাধ্যমে। সবশেষ শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে ভারতে মর্যাদার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়া এবং তার পক্ষে বিভিন্ন উস্কানিমূলক প্রচারণা, কথিত সংখ্যালঘু ইস্যু তৈরি, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা ও ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

ভারতের দাদাগিরি মনোভাবের কারণে ভারত বাংলাদেশীদের কাছ থেকে যতটাই দূরে সরছে, ঠিক ততটাই কাছে আসছে পাকিস্তান। গত এক দশকে পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম ও রাজনীতিকদের মধ্যে বাংলাদেশ ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ করতে আগ্রহী পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাকিস্তানের রাজনীতির আঙ্গিনা, সবখানেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী দেশটি। শুধু মুখে নয়, কাজেও তা করে দেখাচ্ছে পাকিস্তান। বহু পাকিস্তনী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নানা ধরণের ভিডিও তৈরি করে, পাকিস্তানের মানুষের মনে বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে কাজ করছে।

আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের তারকাদের মধ্যেও। কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশে একটি কনসার্টে গান গেয়ে গেছেন পাকিস্তান তথা উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী আতিফ আসলাম। ওই কনসার্টে আতিফের দেড় ঘণ্টা গান গাওয়ার কথা থাকলেও, বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য তিনি প্রায় তিন ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

একইসঙ্গে রাজনৈতিকভাবে সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু, ভিসা প্রক্রিয়া সহজিকরণ, স্বাধীনতার পর প্রথম সরাসরি জাহাজে করে বাণিজ্যও শুরু করেছে পাকিস্তান। তবে আরও আগে থেকেই পাকিস্তান সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু ভারতের প্রভাববলয়ে থাকা শেখ হাসিনার সরকারের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্য লাল তালিকাভুক্ত করে রেখেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন আন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের অনুরোধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর লাল তালিকা থেকে মুক্ত করেছে দেশটির সবধরণের পণ্য। পাকিস্তান শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, টেক্সটাইল, মেশিনারিজ ও পর্যটন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। এসব খাতে বাংলাদেশের রয়েছে বেশ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভারত নির্ভরতা। তাই দুই দেশের নতুন প্রজন্মের মতামত পুরোনো শত্রুতার মিমাংসা করে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সহজ করে এগিয়ে যাওয়া উচিত।