নগর প্রতিবেদক: নগরের পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশনের (চসিক) নিয়োগকৃত পরিচ্ছন্নকর্মী আছেন ৫১ জন। গতকাল সকালে ওয়ার্ডটি পরিদর্শনে গিয়ে হাজিরা নেওয়ার সময় ২০ জনকে কর্মস্থলে পাননি চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় স্থানীয় লোকজনও পরিচ্ছন্নকর্মীদের ব্যাপারে নানা অভিযোগ দেন। কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী দায়িত্ব পালন না করে মাছসহ অন্যান্য ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ করা হয় মেয়রের কাছে।
এসব অভিযোগ পেয়ে পরিচ্ছন্নকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, অভিযোগ পাওয়া মানে তারা কাজে ফাঁকিবাজি করেছে। এ ২০ জনের ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় মেয়র সততার সঙ্গে পরিচ্ছন্নকর্মীদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের দায়িত্বের সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডের মানুষের স্বাস্থ্য এবং নাগরিক দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা আছে। এলাকাবাসী যদি আপনাদের বিরুদ্ধে মশার স্প্রে ও ক্লিনিং করছেন না বা অনিয়মিত আছেন অভিযোগ দেয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
এলাকাবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, গত সরকারের আমলে প্রতি ওয়ার্ড থেকে ৪০–৫০ জন করে পরিচ্ছন্নকর্মী নেওয়া হয়েছিল। তারা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটা আপনারা দেখবেন। ঠিকমতো কাজ না করলে আমাদের জানাবেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করব। তাদের চাকরি হয়তোবা নাও থাকতে পারে।
এর আগে শাহাদাত বাকলিয়ার কালামিয়া বাজারে মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। বারইপাড়া খালের অগ্রগতিও দেখেন। এ সময় মশক নিধন এবং পরিচ্ছন্ন কাজের গতি বৃদ্ধিতে চসিকের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। এছাড়া পরিচ্ছন্ন বিভাগের যেসব কাজ রাতের মধ্যে শেষ করা যাবে তা রাতেই শেষ করতে নির্দেশনা দেন পরিচ্ছন্ন বিভাগকে।
হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হবে না ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স আগে যেটা ছিল সেটা দেন। কিন্তু দিতেই হবে। এটা নাগরিক হিসেবে আপনাদের দায়িত্ব। অনেক বকেয়া লিস্ট দেখেছি আমি।
টেস্ট ছাড়া নেব না মশার ওষুধ : মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ওষুধের গুণগত মান ল্যাবে টেস্ট করা হবে। কার্যকর না হলে গ্রহণ করব না। অকার্যকর হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের আপস করব না।
বারইপাড়া খালের কাজে বাধা দিলে ব্যবস্থা : বারইপাড়া খাল খান পরিদর্শনকালে মেয়র বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি, পূর্ব বাকলিয়াতে কিছু মানুষ এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে নানা রকম বাধা দিচ্ছেন। আমি তাদেরকে বলতে চাই, যদি কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কিন্তু কোনো ড্রয়ং রুম থেকে আসি নাই। আমরা রাজপথ থেকেই এখানে এসেছি। কাজেই এখানে কোনো মাস্তানি–সন্ত্রাসী করে জনদুর্ভোগ করা হলে বরদাস্ত করা হবে না।
শাহাদাত বলেন, বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প সমাপ্ত হলে শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে আসবে। এ কারণে এ প্রকল্প সমাপ্তের বিষয়ে আমি বদ্ধপরিকর। কাজেই এ প্রকল্পের কাজের মান ভালো হতে হবে। বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প এলাকা নয়নাভিরাম হওয়ায় এখানে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত একটা পর্যটন স্পট ইনশাআল্লাহ আমি করব। শহরের মধ্যে এ ধরনের পর্যটন স্পট হলে নাগরিকরা সুস্থ বিনোদনের একটি জায়গা পাবেন এবং এলাকায়ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
খাল যখন ডাস্টবিন : মেয়র স্থানীয় কৃষি খাল পরিদর্শনে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। বলেন, কৃষি খাল ডাস্টবিন হয়ে গেছে। ময়লায় ভরাট হয়ে গেছে। কোনো খালকে ডাস্টবিন বানাবেন না। আশেপাশে তো ডাস্টবিন আছে। এতে হলে আরো একটা ডাস্টবিন আমি করে দেব। ওই ডাস্টবিনে আপনারা ময়লা ফেলবেন। তবু খালে ময়লা ফেলবেন না।
তিনি বলেন, আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদের নিজ দায়িত্ব্বে এই শহরকে ‘আমার শহর’ মনে করে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। আমরা কোনো খালকে ডাস্টবিন করতে চাই না। ঐখানে ডাস্টবিন আছে। এ শহর আমার একার না, সবার। তাই আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে নালা–নর্দমা অপরিষ্কার থাকা। এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা ভাঙা দেখেছি। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। যেসব রাস্তাঘাট জনদুর্ভোগের কারণ হচ্ছে সেগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে।
সমন্বয় ছাড়া রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি নয় : কর্পোরেশনকে অবহিত না করে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি না করার জন্য সেবাসংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান মেয়র। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সিডিএ, ওয়াসা, টিঅ্যান্ডটি, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সব সেবাদানকারী সংস্থাকে কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলেন তিনি। বলেন, কর্পোরেশন রাস্তা করার পরপরই দেখা যায় অন্য সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে ফেলে জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে। সমন্বয় ছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা চলবে না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম।