মেজর মোহাম্মদ সাইফুল ওয়াদুদ: আমরা বাঙালি জাতি কেমন যেন খুব বেশি তাড়াহুড়ো করি। সবকিছুতেই আমাদের কেমন যেন তাড়া। বুকে টেনে নেই যত তাড়াতাড়ি বুঝে আর না বুঝে, ঠুয়া খাই তার চেয়ে দ্বিগুণ বেগে। এই ঠুয়া খেয়েও আমাদের হুশ হয় না। আবার শুরু করি তাড়াহুড়ো। আসলে এটা আমাদের মজ্জাগত এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

যেমনটা এখন আমাদের অনেক বেশি তাড়াহুড়ো সংস্কার নিয়ে। বিষয়টা অনেকটা এরকম – আলাদিনের চেরাগ এ ঘষা দিব। দৈত্য বেরোবে আর বলবে – “হুকুম করুন জনাব। আমি আপনার সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করব।” আমি সেই আবার তাড়াহুড়ো করে কাল বিলম্ব না করে একগাদা রাষ্ট্র সংস্কারের চাহিদা দৈত্যের কাছে পেশ করব। সে মুহূর্তের মধ্যেই করে দেবে সকল সংস্কার। আমরা আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকবো।

আসলে কি ব্যাপারটা এরকম? নাকি এরকম সম্ভব? কোনটাই সম্ভব না। আমাদের না আছে আলাদিনের চেরাগ, না বেরোবে আলাদিনের দৈত্য। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের সুখে শান্তিতে বসবাস করার উপায় কি? উপায় একটাই, আমাদের সংস্কার আমাদের কেই করতে হবে। কোন আলাদিনের দৈত্য এসে করে দেবে না। আর এজন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা এবং ধৈর্য ধরে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা।

রাষ্ট্র সংস্কার বিশাল ব্যাপার। এটা যেমন একদিন দুইদিন, এক মাস দু মাস, কিংবা এক বছর দুই বছরে সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি আবার এই সংস্কার নিয়ে আজীবন বসে থাকারও সুযোগ নেই। এই সংস্কারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের। আর এরকম জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত একটি সরকার তখনই সম্ভব যখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। তাহলে আমরা পেয়ে গেলাম আমাদের প্রাথমিক এবং মূল কাজ কি? আমাদের মূল কাজ হচ্ছে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। আর এটা করার জন্য আমাদের একটি নির্বাচনী সংস্কার অতীব প্রয়োজন। আমরা যদি এরকমই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই তার মাধ্যমে এদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে তাদের পছন্দের সরকার। আর তখনই নির্বাচিত সরকার এবং দেশের জনগণের মেলবন্ধনের মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে সর্বস্তরের দেশ গঠন মূলক সংস্কার এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন।

একবার ভাবুন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকার রাষ্ট্র উন্নয়ন এবং সংস্কারের নামে যেভাবে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিচ পর্যন্ত বিভিন্ন লেয়ারে তাদের চেতনায় (!!!) বিশ্বাসী এবং আস্থাভাজন লোকজনদের নির্বাচন করে দায়িত্বে বসিয়েছেন তাতে করে আপনি যেটা আশা করছেন (সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন) সেটা কি সম্ভব?

আপনার কি ধারনা- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যারা দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গুন গান গাইতে গাইতে বড্ড ক্লান্ত, সেই তারাই ৬ আগস্ট সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, আপনার পেছনে একই সারিতে এসে দাঁড়াবে দেশ উন্নয়নে? কখনোই না। যদি আপনি এমনটাই ভেবে থাকেন, তবে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

“একজন ব্যক্তি ২০০৮-৯ সালের দিকে সরকারি চাকরিতে জয়েন করলো। ২০২৪ এ এসে সে তার সরকারি চাকরি জীবনের প্রায় অর্ধেকটা শেষ করে ফেলল। সে এখন অনেক বেশি অভিজ্ঞ, অনেক পরিণত এবং পরিপক্ক। তার অভিজ্ঞতা এবং পরিপক্কতায় আছে কেবলই একপেশে ইতিহাস, আওয়ামী ইতিহাস। এবং সে ধারণ করছে আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা। এই “আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” দিয়ে তারা জাতিকে করেছে বিভক্ত এবং সো কল্ড “চেতনা” পুজি করে করেছে ব্যবসা। যেখানে স্থান হয়নি বাংলাদেশের ইতিহাস কিংবা জন্মের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অনেক মহান নেতাদের। স্থান হয়নি শেরে এ বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, কিংবা রাষ্ট্রপতি জেনারেল শহীদ জিয়াউর রহমান সহ আরো অনেকের। বরং তাদের অবদানকে বিকৃত করে তাদেরকে বানানো হয়েছিল রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের হোতা হিসেবে। আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং মেরুদণ্ডহীন এ সকল কর্মকর্তা হারিয়েছে তাদের কর্ম ক্ষমতা বরং অর্জন করেছে চাটুকারিতার মত নিকৃষ্ট দক্ষতা।

“এক গ্লাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এক চিমটি ঘৃণা এবং এক মুঠ চেতনা মিশিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্যালাইন” খাইয়ে প্রশাসনের যে সকল কর্মকর্তাদেরকে টন টনা করা হয়েছে, তাদের দিয়ে আর যাই হোক একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করানো কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই আমাদের হতে হবে অতি সাবধানী। তাড়াহুড়ো একদম চলবে না। লংড্রাইভ এ যাওয়ার পূর্বে আমরা যেমন গাড়ির সবকিছু পরীক্ষা করে তবেই যাত্রা শুরু করি, ঠিক তেমনি আমাদের দেশের আগামীর দীর্ঘ পথ চলা শুরু করার পূর্বে আমাদের সবকিছু চেক করে, পরিস্কার করে তারপরেই আমাদের পা বাড়াতে হবে। তাড়াহুড়া করে আবারো বিপদ ডেকে আনা একদম চলবে না।

মনে রাখবেন “আমাদের আলাদিনের চেরাগ যেমন নেই, নেই আলাদিনের চেরাগের দৈত্য”। তবে, আমরাই হতে পারি এই চেরাগ, আমরাই হতে পারি এই দৈত্য।

মেজর মোহাম্মদ সাইফুল ওয়াদুদ: আমরা বাঙালি জাতি কেমন যেন খুব বেশি তাড়াহুড়ো করি। সবকিছুতেই আমাদের কেমন যেন তাড়া। বুকে টেনে নেই যত তাড়াতাড়ি বুঝে আর না বুঝে, ঠুয়া খাই তার চেয়ে দ্বিগুণ বেগে। এই ঠুয়া খেয়েও আমাদের হুশ হয় না। আবার শুরু করি তাড়াহুড়ো। আসলে এটা আমাদের মজ্জাগত এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

যেমনটা এখন আমাদের অনেক বেশি তাড়াহুড়ো সংস্কার নিয়ে। বিষয়টা অনেকটা এরকম – আলাদিনের চেরাগ এ ঘষা দিব। দৈত্য বেরোবে আর বলবে – “হুকুম করুন জনাব। আমি আপনার সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করব।” আমি সেই আবার তাড়াহুড়ো করে কাল বিলম্ব না করে একগাদা রাষ্ট্র সংস্কারের চাহিদা দৈত্যের কাছে পেশ করব। সে মুহূর্তের মধ্যেই করে দেবে সকল সংস্কার। আমরা আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকবো।

আসলে কি ব্যাপারটা এরকম? নাকি এরকম সম্ভব? কোনটাই সম্ভব না। আমাদের না আছে আলাদিনের চেরাগ, না বেরোবে আলাদিনের দৈত্য। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের সুখে শান্তিতে বসবাস করার উপায় কি? উপায় একটাই, আমাদের সংস্কার আমাদের কেই করতে হবে। কোন আলাদিনের দৈত্য এসে করে দেবে না। আর এজন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা এবং ধৈর্য ধরে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা।

রাষ্ট্র সংস্কার বিশাল ব্যাপার। এটা যেমন একদিন দুইদিন, এক মাস দু মাস, কিংবা এক বছর দুই বছরে সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি আবার এই সংস্কার নিয়ে আজীবন বসে থাকারও সুযোগ নেই। এই সংস্কারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের। আর এরকম জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত একটি সরকার তখনই সম্ভব যখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। তাহলে আমরা পেয়ে গেলাম আমাদের প্রাথমিক এবং মূল কাজ কি? আমাদের মূল কাজ হচ্ছে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। আর এটা করার জন্য আমাদের একটি নির্বাচনী সংস্কার অতীব প্রয়োজন। আমরা যদি এরকমই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই তার মাধ্যমে এদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে তাদের পছন্দের সরকার। আর তখনই নির্বাচিত সরকার এবং দেশের জনগণের মেলবন্ধনের মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে সর্বস্তরের দেশ গঠন মূলক সংস্কার এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন।

একবার ভাবুন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকার রাষ্ট্র উন্নয়ন এবং সংস্কারের নামে যেভাবে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিচ পর্যন্ত বিভিন্ন লেয়ারে তাদের চেতনায় (!!!) বিশ্বাসী এবং আস্থাভাজন লোকজনদের নির্বাচন করে দায়িত্বে বসিয়েছেন তাতে করে আপনি যেটা আশা করছেন (সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন) সেটা কি সম্ভব?

আপনার কি ধারনা- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যারা দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গুন গান গাইতে গাইতে বড্ড ক্লান্ত, সেই তারাই ৬ আগস্ট সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, আপনার পেছনে একই সারিতে এসে দাঁড়াবে দেশ উন্নয়নে? কখনোই না। যদি আপনি এমনটাই ভেবে থাকেন, তবে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

“একজন ব্যক্তি ২০০৮-৯ সালের দিকে সরকারি চাকরিতে জয়েন করলো। ২০২৪ এ এসে সে তার সরকারি চাকরি জীবনের প্রায় অর্ধেকটা শেষ করে ফেলল। সে এখন অনেক বেশি অভিজ্ঞ, অনেক পরিণত এবং পরিপক্ক। তার অভিজ্ঞতা এবং পরিপক্কতায় আছে কেবলই একপেশে ইতিহাস, আওয়ামী ইতিহাস। এবং সে ধারণ করছে আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা। এই “আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” দিয়ে তারা জাতিকে করেছে বিভক্ত এবং সো কল্ড “চেতনা” পুজি করে করেছে ব্যবসা। যেখানে স্থান হয়নি বাংলাদেশের ইতিহাস কিংবা জন্মের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অনেক মহান নেতাদের। স্থান হয়নি শেরে এ বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, কিংবা রাষ্ট্রপতি জেনারেল শহীদ জিয়াউর রহমান সহ আরো অনেকের। বরং তাদের অবদানকে বিকৃত করে তাদেরকে বানানো হয়েছিল রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের হোতা হিসেবে। আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং মেরুদণ্ডহীন এ সকল কর্মকর্তা হারিয়েছে তাদের কর্ম ক্ষমতা বরং অর্জন করেছে চাটুকারিতার মত নিকৃষ্ট দক্ষতা।

“এক গ্লাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এক চিমটি ঘৃণা এবং এক মুঠ চেতনা মিশিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্যালাইন” খাইয়ে প্রশাসনের যে সকল কর্মকর্তাদেরকে টন টনা করা হয়েছে, তাদের দিয়ে আর যাই হোক একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করানো কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই আমাদের হতে হবে অতি সাবধানী। তাড়াহুড়ো একদম চলবে না। লংড্রাইভ এ যাওয়ার পূর্বে আমরা যেমন গাড়ির সবকিছু পরীক্ষা করে তবেই যাত্রা শুরু করি, ঠিক তেমনি আমাদের দেশের আগামীর দীর্ঘ পথ চলা শুরু করার পূর্বে আমাদের সবকিছু চেক করে, পরিস্কার করে তারপরেই আমাদের পা বাড়াতে হবে। তাড়াহুড়া করে আবারো বিপদ ডেকে আনা একদম চলবে না।

মনে রাখবেন “আমাদের আলাদিনের চেরাগ যেমন নেই, নেই আলাদিনের চেরাগের দৈত্য”। তবে, আমরাই হতে পারি এই চেরাগ, আমরাই হতে পারি এই দৈত্য।