অনুসন্ধানী প্রতিবেদন—-

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে তড়িগড়ি করে পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এ ঘটনায় সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর অনুগত সচিব বেলাল ও পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলীর সিন্ডিকেটটি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে দুর্ণীতির আতুর ঘরে পরিণত করেছে। এই সিন্ডিকেটের নিকট পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী রীতিমতো এখনো জিম্মি।

পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতে, ‘যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত যেখানে তাদের শাস্তি হওয়ার কথা সেখানে ওই সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়ে উল্টো পুরস্কৃত করা হচ্ছে। আর এ সমস্ত ঘটনা দুর্নীতিকে আরো উসকে দেয়ারই নামান্তর।’

তারা বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে অসৎ কর্মীকে পুরস্কৃত করার অর্থই যে সৎকর্মীকে তিরস্কার করা, তা বলাই বাহুল্য। কেননা চুরি করে পদোন্নতিসহ পুরস্কার যদি চোরের কপালে জোটে, স্বভাবতই সৎকর্মীদের তা আহত করে; প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আন্তরিকতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততায় চিড় ধরা এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া সহকর্মীদের মধ্যে অসাধু উপায় অবলম্বনের উৎসাহ তৈরি হতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিটা হয় জনগণেরই। এ চিত্র দেশের বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় একেবারেই অচেনা নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সে সব অপকর্মের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না হওয়ায় বিরল ঘটনা তো নয়ই; বরং অসংখ্য ঘটনায় অপকর্মের হোতাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করার ঘটনাও কম নেই, যা এক কথায় হতাশার।

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পদোন্নতির একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর অনুচর বর্তমান চেয়ারম্যান। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের অধিকাংশ শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নানা রকমের অনিয়ম ও অসাধুতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অতীতে এসব কর্মকাণ্ডে ধরা পড়ে কিংবা জড়িত প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা করছেন। এমন ব্যক্তিদেরকেও আরও এক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ ছাড়া এই পদোন্নতির ক্ষেত্রে কারও কারও ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সার্ভিস রেগুলেশনের নীতিমালা; যেমন একই পদে তিন বছর দায়িত্ব পালন না করলে পদোন্নতিযোগ্য নয়, মানা হচ্ছে না সেটাও। যে সব অপকর্মে জড়ানোয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে, তাদেরই পদোন্নতি দেওয়ার এ পাঁয়তারা কেন? তৃতীয়ত, এই পদোন্নতির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় মাত্র ৩২ জন প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মচারী নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ১৯৯৬ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে, যা সারা দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর কর্মচারীদের চাকরী স্থায়ীকরণ না করে দলীয়ভাবে লোকজন নিযোগ করে। তখন থেকে কর্মচারীদের পদোন্নতি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৫ বছর পর ২০০০ সালে তাদের চাকরী স্থায়ীকরণ করা হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কর্মচারীদের প্রাপ্য পদোন্নতি না দিযে রাতের আঁধারে একসাথে ২১ জন দলীয় ক্যাডারদের পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি দ্বাড়া দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ প্রদান করার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয় এবং তাদের প্রাপ্য পদোন্নতির অধিকার থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের কথা বলে উক্ত ক্যাডারদের চাকুরী ২০১৫ সালে স্থায়ীকরণ করা হয়। যদিও হাইকোর্টের রায়ে তাদেরকে চাকুরী স্থায়ী করণের সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা ছিল না বলে জানা যায়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের ছোঁয়া সারাদেশে লাগলেও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে সরকারের কোন আদেশ-নির্দেশ পালন করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল ইসলাম চৌধুরীর নওফেল এর ক্যাশিয়ার হিসাবে খ্যাত বোর্ডের উপ-সচিব মো: বেলাল হোসেনের হাত ধরে বোর্ডের সাবেক দুর্নীতিবাজ সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদানের পর নওফেল সিন্ডিকেট টেন্ডারসহ বিভিন্ন দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বসুন্ধরা থেকে সাবেক সচিব রেজাউল করিম নগদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে পরবর্তীতে পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হলে এই টাকা বোর্ডের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার মাধ্যমে বাঁচার চেষ্টা করে। তাছাড়া উপ-সচিব সহ নওফেল সিন্ডিকেট বসুন্ধরা গ্রুপকে একসাথে ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার প্রদানের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সুত্রে প্রকাশ। এমনকি বোর্ডে মেধা কেলেংকারির মত ঘটনাও ঘটেছে যা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ২১ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এখনও অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজ্জু করা হয়নি।

সম্প্রতি আওয়ামীলীগের মদদপুষ্ট লোকদের বদলীর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রফেসর রেজাউল করিম ও উপ-সচিব মো: বেলাল হোসেন জোট সরকারের আমলে নিয়োগকৃক্ত ১৮-২১ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখার পরও সম্প্রতি তাদেরকে পদোন্নতি না দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার উৎকোচের বিনিময়ে রাতের আধারে ২০১৫ সালে নিযোগকৃতদের তড়িগড়ি করে পদোন্নতি দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে। খবরটি ফাঁস হয়ে গেলে বোর্ডে বর্তমানে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনকি মিছিল মিটিং ও আন্দোলন এবং সভা সমাবেশ চলছে প্রতিনিয়ত। এ ব্যাপারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ও ২২ অক্টোবর পদোন্নতি কমিটির মিটিং আহবান করছে বলে সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, অর্গানোগ্রাম বা জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ না থাকায় পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে শিক্ষা বোর্ডে। এর আগে ২০১৯ সালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই সময় সেকশন অফিসার পদ শূণ্য না থাকলেও অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে ছয় কর্মচারীকে সেকশন অফিসার, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটরকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া এসব পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. মোকছেদ আলীর সই করা এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া এসব পদোন্নতির যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে লিখিতভাবে জানাতে বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম চৌধুরীকে ফোন করেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য যে, পতিত সরকারের আমলে নিযোগকৃত কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের ন্যায় ইনসিটু সহ তাদের পদোন্নতি প্রদানের দাবী জানিয়ে আসলেও তা অমলে না নিয়ে আওয়ামী ঘরনার চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার আগে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি প্রদানের পাঁয়তারা করছে বলে জানা যায়।

আরও জানা যায়, নওফেলের ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত উপ-সচিব মো: বেলার হোসেন ও বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালী থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ

বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নং-৬২৭/২৪ এবং বিপ্লব গাঙ্গুলীর মামলা নং-৬৪০/২৪ (কোতোয়ালী থানা)। তারা বিভিন্ন মহলে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে এই মামলা ঠেকিয়ে রেখেছে এবং নাম বাদ দেওয়ার তদবির করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। বর্তমানে বোর্ডে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন—-

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে তড়িগড়ি করে পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এ ঘটনায় সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর অনুগত সচিব বেলাল ও পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলীর সিন্ডিকেটটি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে দুর্ণীতির আতুর ঘরে পরিণত করেছে। এই সিন্ডিকেটের নিকট পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী রীতিমতো এখনো জিম্মি।

পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতে, ‘যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত যেখানে তাদের শাস্তি হওয়ার কথা সেখানে ওই সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়ে উল্টো পুরস্কৃত করা হচ্ছে। আর এ সমস্ত ঘটনা দুর্নীতিকে আরো উসকে দেয়ারই নামান্তর।’

তারা বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে অসৎ কর্মীকে পুরস্কৃত করার অর্থই যে সৎকর্মীকে তিরস্কার করা, তা বলাই বাহুল্য। কেননা চুরি করে পদোন্নতিসহ পুরস্কার যদি চোরের কপালে জোটে, স্বভাবতই সৎকর্মীদের তা আহত করে; প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আন্তরিকতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততায় চিড় ধরা এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া সহকর্মীদের মধ্যে অসাধু উপায় অবলম্বনের উৎসাহ তৈরি হতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিটা হয় জনগণেরই। এ চিত্র দেশের বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় একেবারেই অচেনা নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সে সব অপকর্মের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না হওয়ায় বিরল ঘটনা তো নয়ই; বরং অসংখ্য ঘটনায় অপকর্মের হোতাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করার ঘটনাও কম নেই, যা এক কথায় হতাশার।

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পদোন্নতির একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর অনুচর বর্তমান চেয়ারম্যান। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের অধিকাংশ শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নানা রকমের অনিয়ম ও অসাধুতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অতীতে এসব কর্মকাণ্ডে ধরা পড়ে কিংবা জড়িত প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা করছেন। এমন ব্যক্তিদেরকেও আরও এক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ ছাড়া এই পদোন্নতির ক্ষেত্রে কারও কারও ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সার্ভিস রেগুলেশনের নীতিমালা; যেমন একই পদে তিন বছর দায়িত্ব পালন না করলে পদোন্নতিযোগ্য নয়, মানা হচ্ছে না সেটাও। যে সব অপকর্মে জড়ানোয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে, তাদেরই পদোন্নতি দেওয়ার এ পাঁয়তারা কেন? তৃতীয়ত, এই পদোন্নতির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় মাত্র ৩২ জন প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মচারী নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ১৯৯৬ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে, যা সারা দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর কর্মচারীদের চাকরী স্থায়ীকরণ না করে দলীয়ভাবে লোকজন নিযোগ করে। তখন থেকে কর্মচারীদের পদোন্নতি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৫ বছর পর ২০০০ সালে তাদের চাকরী স্থায়ীকরণ করা হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কর্মচারীদের প্রাপ্য পদোন্নতি না দিযে রাতের আঁধারে একসাথে ২১ জন দলীয় ক্যাডারদের পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি দ্বাড়া দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ প্রদান করার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয় এবং তাদের প্রাপ্য পদোন্নতির অধিকার থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের কথা বলে উক্ত ক্যাডারদের চাকুরী ২০১৫ সালে স্থায়ীকরণ করা হয়। যদিও হাইকোর্টের রায়ে তাদেরকে চাকুরী স্থায়ী করণের সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা ছিল না বলে জানা যায়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের ছোঁয়া সারাদেশে লাগলেও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে সরকারের কোন আদেশ-নির্দেশ পালন করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল ইসলাম চৌধুরীর নওফেল এর ক্যাশিয়ার হিসাবে খ্যাত বোর্ডের উপ-সচিব মো: বেলাল হোসেনের হাত ধরে বোর্ডের সাবেক দুর্নীতিবাজ সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদানের পর নওফেল সিন্ডিকেট টেন্ডারসহ বিভিন্ন দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বসুন্ধরা থেকে সাবেক সচিব রেজাউল করিম নগদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে পরবর্তীতে পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হলে এই টাকা বোর্ডের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার মাধ্যমে বাঁচার চেষ্টা করে। তাছাড়া উপ-সচিব সহ নওফেল সিন্ডিকেট বসুন্ধরা গ্রুপকে একসাথে ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার প্রদানের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সুত্রে প্রকাশ। এমনকি বোর্ডে মেধা কেলেংকারির মত ঘটনাও ঘটেছে যা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ২১ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এখনও অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজ্জু করা হয়নি।

সম্প্রতি আওয়ামীলীগের মদদপুষ্ট লোকদের বদলীর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রফেসর রেজাউল করিম ও উপ-সচিব মো: বেলাল হোসেন জোট সরকারের আমলে নিয়োগকৃক্ত ১৮-২১ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখার পরও সম্প্রতি তাদেরকে পদোন্নতি না দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার উৎকোচের বিনিময়ে রাতের আধারে ২০১৫ সালে নিযোগকৃতদের তড়িগড়ি করে পদোন্নতি দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে। খবরটি ফাঁস হয়ে গেলে বোর্ডে বর্তমানে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনকি মিছিল মিটিং ও আন্দোলন এবং সভা সমাবেশ চলছে প্রতিনিয়ত। এ ব্যাপারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ও ২২ অক্টোবর পদোন্নতি কমিটির মিটিং আহবান করছে বলে সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, অর্গানোগ্রাম বা জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ না থাকায় পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে শিক্ষা বোর্ডে। এর আগে ২০১৯ সালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই সময় সেকশন অফিসার পদ শূণ্য না থাকলেও অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে ছয় কর্মচারীকে সেকশন অফিসার, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটরকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া এসব পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. মোকছেদ আলীর সই করা এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া এসব পদোন্নতির যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে লিখিতভাবে জানাতে বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম চৌধুরীকে ফোন করেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য যে, পতিত সরকারের আমলে নিযোগকৃত কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের ন্যায় ইনসিটু সহ তাদের পদোন্নতি প্রদানের দাবী জানিয়ে আসলেও তা অমলে না নিয়ে আওয়ামী ঘরনার চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার আগে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি প্রদানের পাঁয়তারা করছে বলে জানা যায়।

আরও জানা যায়, নওফেলের ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত উপ-সচিব মো: বেলার হোসেন ও বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালী থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ

বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নং-৬২৭/২৪ এবং বিপ্লব গাঙ্গুলীর মামলা নং-৬৪০/২৪ (কোতোয়ালী থানা)। তারা বিভিন্ন মহলে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে এই মামলা ঠেকিয়ে রেখেছে এবং নাম বাদ দেওয়ার তদবির করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। বর্তমানে বোর্ডে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।