স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, দেশে ফিরে সাকিব আল হাসানের অবসর নেওয়ার ‘ভালো সম্ভাবনা’ আছে। সোমবার (০৭ অক্টোবর) মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে বোর্ড সভা শেষে সাকিবের দেশে ফেরা এবং অবসর নেওয়া প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন ফারুক আহমেদ।
ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে বিদায় নিতে চান সাকিব। এমন আকুতি জানিয়ে সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন শর্ত। দেশে যাওয়া এবং আসা; দুটোই যেন স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে, দেশে থাকাকালীন নিরাপদ অনুভব করা এবং দেশে ফিরলে প্রয়োজনে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা পেলেই টেস্ট সিরিজ খেলতে সাকিব আসবেন বাংলাদেশে।
সাকিবের এই শর্তের পর নানা মহলে বেশ আলোচনা হয়েছে। বিসিবি সাফ জানিয়েছে, সাকিব দেশে ফিরলে, বাইরে যেতে পারবে কি না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই নিশ্চয়তা আসতে হবে।
এদিকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কদিন আগে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সাকিবের নিরাপত্তা চাওয়া অবান্তর। তার ভাষ্য ছিল, ‘আমাদের একজন খেলোয়াড়কে অবশ্যই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা ভিন্ন। সেটার ব্যাপারে কিছু বলতে পারি না। কারণ, জিনিসটা আইন মন্ত্রণালয়ের।’
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারী ক্রিকেট দলের খেলা দেখতে গিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজের ব্যক্তিগত মত দেন, ‘তিনি (সাকিব) এমন এক ক্রিকেটার, যিনি দেশের জন্য অনেক করেছেন। বাংলাদেশে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট যেহেতু খেলতে চান, আমি চাই সেই সুযোগ যেন তিনি পান।’
দেশের ক্রিকেটের সুপারস্টারের এ জটিলতা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে। আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তনের পর আদাবর থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত হওয়া পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় সাকিবকে আসামি করা হয়েছে। এরপর সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে পুঁজিবাজারে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
নানা জটিলার কারণে সাকিবের দেশে ফেরা হুমকির মুখে। দেশে ফিরলেই যে বাইরে আবার যেতে পারবেন সেই নিশ্চয়তা নেই।
বিসিবির আগ্রহ থাকলেও অনেক কিছু করতে পারছে না। ফারুক আহমেদের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে সাকিবের। তবে লিগ্যাল কোনো ইস্যু নিয়ে এখনও চূড়ান্ত পর্যায় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফারুক আহমেদ আজ বলেছেন, ‘লিগ্যালটা তো আমি বলতে পারবো না। আমার কথা হলো সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে। আমি তো ছোট মানুষ, বোর্ড প্রেসিডেন্ট। আমার হাতে ক্ষমতা খুব কম। সাকিবের ব্যাপারটা পুরোপুরি সরকার থেকে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সরকার আছে, উপদেষ্টা আছে তারা সিদ্ধান্ত নেবে তার সামগ্রিক দায়িত্ব নেওয়ার। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা, স্টেডিয়ামের ভেতর ও ইনডোরে যাবে, মাঠে খেলবে, অনুশীলন করতে যাবে; এই দায়িত্ব নেওয়াটা তো খুব সহজ। এটা আমরা নিতে পারবো ।’
২১ অক্টোবর ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট। এই টেস্ট খেলেই অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব।