দি ক্রাইম ডেস্ক: বিষ্ময়কর এক শহর রয়েছে তুরস্কের কাপাডোশিয়াতে। যার খোঁজ মিলেছে ১৯৬৩ সালের দিকে। ভূগর্ভস্থ এই শহর কবে, কীভাবে মাটির নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল তার কারণ জানা যায় না। পাথরের নরম শিলা খোদাই করে তৈরি করা এই শহরে রয়েছে বড় বড় সুড়ঙ্গ পথ। আর এই সুড়ঙ্গ পথগুলো যুক্ত করেছে শহরের খোদাইকৃত অন্যান্য গুহাকে। ১৯৬৩ সালে এই শহর কিছুটা অদ্ভুতভাবেই আবিষ্কার করে ফেলেন এক ব্যক্তি। জানা যায়, এক ব্যক্তি নিজের বাসা মেরামত করছিলেন। হঠাৎ তার বাসার একটি দেয়াল ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের মেঝে ধ্বসে পড়ে মাটির নিচের অন্ধকার এক কক্ষে। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর পরেই রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।
পরে দেখা যায়, জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ছিল ওই শহরে। যেমন স্কুল, গীর্জা, বাজার, গোয়ালঘর, কুয়া, গণ জমায়েতের জায়গা, এমনকি অস্ত্র জমার রাখার ঘরও ছিল। শহরের নাম ডেরিংকুয়ো। এই শহরকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ শহর। পরিকল্পিত এই শহরটিতে আনুমানিক ২০ হাজার লোক বসবাস করতেন।
ডয়চে ভেলের তথ্য, তিনশো শতরকের দিকে নির্যাতনের শিকার খ্রিষ্টানরা কাপাডোশিয়ার পাথুরে ভূমিতে গড়ে তুলেছিলেন এই শহর।
মাটির নিচে বিরল স্থাপনার নিদর্শনও এটি। ভূগর্ভস্থ শহরে পৌঁছানোর জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থা আছে। এই শহরের প্রতিটি ঘরের প্রবেশ মুখ অনেকটা কুয়ার মতো। ঘরের ভেতরে রয়েছে প্রশস্ত জায়গা। এই শহরের মানুষেরা ছাগল, ভেড়া, গরু পুষতেন। ভূগর্ভস্থ শহরটিতে ছিল খাবারের দোকান, মদের ভান্ডার, কবরস্থান এবং গীর্জা। নিরাপত্তার দিক দিয়ে বেশ সতর্ক ছিলো ভূগর্ভস্থ এই শহরবাসী। শহরে প্রবেশের পথগুলো পাঁচ ফুট চওড়া এবং ৫০০ কেজি ওজনের বিশাল পাথরের দরজা দিয়ে বন্ধ থাকতো। দরজাগুলো দেখতে গোলাকার। দরজাগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছিল, যাতে প্রতিটি স্তর বন্ধ করা যায় আলাদা আলাদা ভাবে।
এছাড়া আস্ত একটি নদী প্রবাহিত ছিলো ডেরিংকুয়ো শহরের তলদেশ দিয়ে। ভূগর্ভস্থ মানুষের পানি সরবরাহের জন্য ছিলো অনেক কুয়া। এসব কুয়া যুক্ত ছিল সেই নদীর সাথে সংযুক্ত। এর মাধ্যমে নিত্যদিনের খাবার পানি সংগ্রহ করতো শহরবাসী। ১৯৬৯ সাল থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে ডেরিংকুয়ো। যদিও শহরের ১৮ টি স্তরের মধ্যে মাত্র আটটিতে প্রবেশ করতে পারেন পর্যটকরা।বাকিগুলোতে প্রবেশের অনুমতি নেই।